উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি হস্তান্তর নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা,শুনানি ১৬ জানুয়ারি
মোল্লা জসিমউদ্দিন , ২৩ ডিসেম্বর
কলকাতা হাইকোর্টে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অবৈধ ভাবে হস্তান্তর কে চ্যালেঞ্জ করে একটি জনস্বার্থ মামলা দাখিল করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী বৈদুর্য ঘোষাল।উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গত ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ ট্যুরিজম বিভাগের সাথে যৌথভাবে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সের ডিপার্টমেন্ট চালু করার প্রস্তাব গ্রহন করে। প্রস্তাব অনুযায়ী উক্ত কোর্সটি সম্পুর্ন সরকারি ভাবে খোলার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী একটি আট সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়। কমিটি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স চালু করার পক্ষে মত দেন। তবে চলতি বছরে সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য মন্ত্রীসভার ক্যাবিনেট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, উক্ত হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সটি একটি বেসরকারী সোসাইটি কে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী রাজ্য উচ্চ শিক্ষাদপ্তর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে জানায় -‘ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন ৫.২ একর জমি সম্পুর্ণ বিনামুল্যে উক্ত সোসাইটিকে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়।পরে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। রাজ্য মন্ত্রীসভার অনুরোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৫ নভেম্বর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যসমিতির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫.২ একর জমি (যার বাজারমুল্য আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা) বেসরকারি সোসাইটিকে সম্পুর্ন বিনামুল্যে ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।থাকে । বিশ্ববিদ্যালয় কেবলমাত্র বিনামুল্যে আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা মুল্যের জমির ব্যাবহার সত্ব প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, বর্তমান ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীদের বড় অংশ এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধীতা করে । এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আআন্দোলন গড়ে উঠেছে। বর্তমানে রাজ্য ক্যাবিনেটের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্য সমিতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়।
এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি বেসরকারী সংস্থাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে কলকাতা হাইকোর্টে অভিরাজ সুব্বা আইনজীবী বৈদুর্য ঘোষালের মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন যেটা আগামী ১৬ ই জানুয়ারী প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি রয়েছে।
গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাংবাদিক বৈঠকে গিয়ে জানান যে -‘পাঁচ একর জমি নেওয়া হচ্ছে না’। গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পৌঁছনোর আগেই আন্দোলনকারীরা ভিড় করেছিলেন । জমি হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চলেছিল স্লোগান। পাল্টা জমায়েত করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদও। মাইক ভাঙচুরের পাশাপাশি এক পড়ুয়াকে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে। তবুও আন্দোলনে অনড় থাকেন বিক্ষোভকারীরা সেসময় । তাঁরা জানিয়ে দেন কোনও পরিস্থিতেই জমি নেওয়া যাবে না। তাঁরা বিষয়টি ব্রাত্য বসুকে লিখিতভাবে জানাবেন। এরপরই সাংবাদিক বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। সেখানে তিনি জানান -‘ জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে না’।এই বিষয়ে বিক্ষোভকারী এক অধ্যাপক বলেন, “সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে ঠিকই। তবে এখনই আমরা জয়-পরাজয় দেখছি না। এগজিকিউটিভ কাউন্সিলে যতক্ষণ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হচ্ছে ততক্ষণ আমরা আন্দোলন করব।”আরও এক আন্দোলনকারী বলেন, “অবশ্যই খুশি।তবে এটা মুখের কথা। ব্রাত্য বসু মন্ত্রী, তাঁর প্রভাব অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু স্বশাসিত সেই সিদ্ধান্ত উপাচার্যকেই নিতে হবে। তাই যা সই-স্বাক্ষর হয়েছে সেইটাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।” এরেই মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাটি আগামী ১৬ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি রয়েছে।