একই পদে দশ বছর পার,মঙ্গলকোট প্রশাসনের আধিকারিক ঘিরে প্রশ্নচিহ্ন

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,

 
মঙ্গলকোট ব্লক প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক একই পদে দশ বছরের বেশি সময়কাল ধরে রয়েছেন। যা নিয়ে উঠছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। কলকাতা হাইকোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল মঙ্গলকোট ব্লক অফিসের এপিও পদে থাকা এই আধিকারিকের বিষয়ে তথ্য জানার আইনে (২০০৫ এবকং ২০০৬ সালের তথ্য আইনে) বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠালেও তার প্রত্যুত্তরে এখনও অবধি  কোন সাড়া মিলেনি।বিডিও থেকে এসডিও কেউ এই আইনজীবীর প্রেরিত তথ্য জানার আইনে চিঠির কোন প্রশাসনিক উত্তর দেননি।আর এখান থেকেই কেন প্রশাসনের এহেন ‘নীরবতা’ তা নিয়েও দেখা যাচ্ছে প্রশ্নচিহ্ন। যদিও ওই আইনজীবী বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করে প্রকৃত তথ্য সন্ধান সহ ওই আধিকারিক কে আড়াল করার পেছনে কারা তা জানবার চেস্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি ওই ব্লক আধিকারিকের টানা দশবছরের বেশি একই পদে থাকা বিষয়টি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন দ্বারা সংশ্লিষ্ট বিধানসভা  অবজারভারের ইমেলে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। যদিও এই আধিকারিকের বদলীর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল গত ২৭ জানুয়ারি কলকাতার জেশপ ভবনে ‘কমিশনার অফ পঞ্চায়েত এন্ড রুরাল ডেভলপমেন্ট’ দপ্তর থেকে।এলাকাবাসীদের অভিযোগ, মঙ্গলকোট বিধানসভার শাসক দলের দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, তিনি আবার পঞ্চায়েত দপ্তরের সরকারি বড় পদে (চেয়ারম্যান) রয়েছেন। তাই তাঁর ‘আশীর্বাদ’ কাছ করছে এখানে! যদিও প্রশাসন থেকে সমস্ত মহলই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।কে এই ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক? যাকে নিয়ে এত অভিযোগ। বিরোধী শুন্য  মঙ্গলকোট গড়ার পেছনে এই আধিকারিকের ভূমিকা কম নয় বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ। এই আধিকারিকের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে ইডি তদন্ত চালালে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প গুলির দুর্নীতি গুলি প্রকাশ্যে আসবে বলে প্রশাসনের একাংশ আধিকারিক নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন। ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বোর্ড গঠন অবধি সদর মঙ্গলকোট এবং ঝিলু ২ নং পঞ্চায়েতে ‘প্রশাসক’ পদে থেকে টেন্ডার সহ একশো দিনের কাজ প্রভৃতি প্রকল্পে নয়ছয় করে গেছেন বলে জানা যায়। ব্লক অফিসে এপিও (এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামিং অফিসার)  পদে থাকার জন্য বিভিন্ন সময়ে একশো দিনের প্রকল্প নিয়ে উত্তাল হয়েছে মঙ্গলকোটের বিভিন্ন এলাকা।এমনকি গোতিস্টা অঞ্চলে তৎকালীন বিডিও সুশান্ত মন্ডল আক্রান্ত হয়েছিলেন বিক্ষুদ্ধদের হাতে।বিডিও কে পঞ্চায়েত অফিসে তালা মেরে আটক রাখার অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ গিয়ে তা সামাল দেয়। এই নিয়ে ফৌজদারী মামলাও হয়েছিল। কাশেমনগর ডাকঘরে একশো দিনের প্রকল্পে গ্রাহকদের মজুরির অর্থ নিয়েও বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল। একটু কান পাতলেই ব্লক অফিসে শোনা যায়, এই আধিকারিকের বিবাহের সময় সূদুর মেদিনীপুরে গিয়েছিল শতাধিক মারুতি ভ্যান,তাও ‘ইলেকশন ডিউটি’ ব্যানারে।স্থানীয় চুনোপুঁটি থেকে রুইকাতলা মাপের শাসক দলের নেতা কর্মীরা এই আধিকারিকের বিবাহ মজলিসে যোগ দিতে দুশো কিমির পথ গিয়েছিলেন। বিভিন্ন পঞ্চায়েতে টেন্ডার সহ বিভিন্ন সরকারি পেমেন্ট যে ইনার হাতে! আবার জনশ্রুতি, ব্লক অফিসে লোচন অতিথিনিবাসে ঠেকেদারদের মদতে রাজকীয় বিবাহ বার্ষিকী সেরেছিলেন এই আধিকারিক।প্রশাসনের অন্দরে তাঁর সিনিয়র অফিসাররা পর্যন্ত তটস্থ থাকেন শাসক দলের খুব কাছের লোক হওয়ার সুবাদে।যদিও অভিযুক্ত আধিকারিক সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। গত ২০১০ সালে আগস্ট মাসে সুশান্ত প্রামাণিক নামে এই এপিও মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে যোগ দেন।ঠিক এইরকম সময় মঙ্গলকোট এবং ঝিলু ২ নং পঞ্চায়েতে প্রধান সহ উপপ্রধান ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত এবং ধৃত হওয়াতেই ব্লক প্রশাসনের তরফে প্রশাসক পদে আসেন তিনি।হাতে গোনা কয়েকজন ঠিকেদারদের নিয়ে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খাতা-কলমে উন্নয়ন করলেও বাস্তবিক দিকে তা ‘পুকুর’ চুরি  করার অনুঘটক হিসাবে কাজ করেন বলে অভিযোগ। বিভিন্ন পঞ্চায়েতে একশো দিনের প্রকল্পে পেমেন্ট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠে তখন।এমনকি একশো দিনের প্রকল্পে গ্রাহকদের হাতে নিগৃহীত হতে হয়েছিল তৎকালীন বিডিও সুশান্ত মন্ডল কে। টানা দশ বছর অতিক্রান্ত হলেও তাঁর বদলী অজ্ঞাত কারনে আটকে যায়। কলকাতা হাইকোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল গত ১২ ই জানুয়ারি মঙ্গলকোট বিডিও কে স্পিড পোস্টে ২০০৫ সালের তথ্য আইনে আবেদন এবং ২০০৬ সালের তথ্য আইনে তথ্য সরবরাহ করার নির্দেশিকায় এই এপিওর বিষয়ে আরটিআই  করেন।দু মাস পেরিয়ে গেলেও কোন প্রশাসনিক উত্তর না মেলায় পুনরায় গত ২২ ই মার্চ কাটোয়া মহকুমাশাসক কে এই আরটিআই এর আপিল করে থাকেন।তাতেও কোন উত্তর আসেনি, আর এতেই সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে এই অফিসার কে ঘিরে।যদিও গত ২৭ জানুয়ারি কমিশনার অফ পঞ্চায়েত এন্ড রুরাল ডেভলপমেন্ট দপ্তর থেকে নোটিফিকেশনে  ( নাম্বার ১২৩/১১/ডিপি/২ টি-৪/২০১৯) ১১ জনের বদলীর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল।সেখানে ১০ নাম্বারে এই আধিকারিক কে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ব্লক অফিসে যোগ দিতে বলা হয়। গত দশ বছরের  এইরকম বদলী পুনরায় স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তথ্য আইনে চিঠি প্রেরক কলকাতা হাইকোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল বিষয়টি জনস্বার্থ মামলায় রিট পিটিশন দাখিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিযুক্ত মঙ্গলকোট বিধানসভা কেন্দ্রের অবজারভারের ইমেলে এই বিষয় টি পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *