দক্ষিণ বাঁকুড়ার গর্ব ডক্টর অমলেন্দু মন্ডলকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন
। সাধন মন্ডল বাঁকুড়া:———বাঁকুড়া জেলা শাসকের কার্য্যালয়ের সামনে মাইনরিটি কমিউনিটি হলে অনুষ্ঠিত হলো একই মঞ্চে দুটি অনুষ্ঠান। এক- সাহিত্য আড্ডা বিষয়-জন্ম শতবর্ষে সমরেশ বসু এবং দুই- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথা সাহিত্যের গবেষণায় ডক্টরেট উপাধি পাওয়ার জন্য কবি অধ্যাপক অমলেন্দু মণ্ডল কে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন। প্রদীপ প্রজ্বলন নয়,অভিনব ভাবে সবুজ চারাগাছে জলধারা সিঞ্চনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন কথাসাহিত্যিক সমরেশ বসুর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী ইংল্যান্ড প্রবাসী ডাঃ নবকুমার বসু। তিনি একাধারে প্রখ্যাত চিকিৎসক ও স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক। মঞ্চে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড.অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়, অতিরিক্ত জেলা শাসক নকুল মাহাত, মধুসূদন দরিপা (আর্ষ পত্রিকা) গৌর কারক(লগ্ন উষা পত্রিকা) সম্বর্ধনা প্রাপক ড.অমলেন্দু মণ্ডল, ভাস্কর সেন(কবিকর্নিকা পত্রিকা) ড.রামপ্রসাদ বিশ্বাস(নি.ভা.ব.সা.সম্মেলন) প্রমুখ।উদ্বোধন সঙ্গীত পরিবেশন করেন মুকুল মুখার্জি। অনুষ্ঠানে ড.অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় “ঔপন্যাসিক সমরেশ বসু ও বাঁকুড়া ” এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন বাঁকুড়ার সঙ্গে সমরেশ বসুর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। নৈহাটি থেকে এসে দীর্ঘদিন বাঁকুড়ার ঘরে ঘরে পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে তাঁর “দেখিনাই ফিরে” উপন্যাসের রসদ সংগ্রহ করেছেন।তাই লেখকের সঙ্গে বাঁকুড়ার আত্মিক যোগ ছিন্ন করা যায় না।ডাঃ নবকুমার বসু তাঁর পিতার সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনেক অজানা তথ্য উল্লেখ করেন।তিনি বলেন স্বনামধন্য পিতার সন্তান হওয়া সবসময় সুখকর নয়।কেননা আমি যতবড়ো ডাক্তার হয়ে লন্ডনে থাকি না কেন,আমি যত প্রথিতযশা সাহিত্যিক হই না কেন সেই পরিচয় পিতার পরিচয়ে ঢাকা পড়ে যায়। যেখানেই যাই আমাকে দেখে সকলেই বলে সমরেশ বসুর ছেলে।তাই বলে বাবার নাম তো পরিবর্তন করতে পারবো না।এই রকম খোলামেলা আলাপচারিতায় সমরেশ বসুর প্রেমে জড়িয়ে পড়ার কথা প্রকাশ করতেও সংকোচ করেননি।”বিবর”, “প্রজাপতি” সেই সময়ের লেখা উপন্যাস।সহকারী জেলা শাসক নকুলবাবুও তাঁর বক্তব্যে সমরেশ বসুর সাহিত্যকৃতির নানাদিক তুলে ধরেন।দ্বিতীয় পর্যায়ে ড.অমলেন্দু মণ্ডল কে সম্বর্ধনা জানানো হয়।ড.মণ্ডলের হাতে স্মারক তুলে দেন ডাঃনবকুমার বসু।মানপত্র তুলে দেন ড.অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় ও ড.রামপ্রসাদ বিশ্বাস।মানপত্র পাঠ করেন লেখক সম্পাদক মধুসূদন দরিপা। তিনি বলেন-ড.অমলেন্দু মণ্ডল দীর্ঘ সময় ধরে জেলার সাহিত্য সংস্কৃতি জগতে আমাদের সহযোদ্ধা। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের বহুবিধ প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে একালের স্বনামধন্য কথাসাহিত্যের অভিভাবক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথাসাহিত্য বিষয়ে গবেষণায় যে মৌলিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তা দৃষ্টান্ত স্বরূপ। বাঁকুড়া জেলা তথা বাংলা তা চিরদিন মনে রাখবে।ড.অমলেন্দু মণ্ডলের কাছে সম্বর্ধনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন-বর্তমানে ডক্টরেট উপাধি সম্বর্ধনা পাওয়ার মতো বিষয় নয়।এখন তো জলভাতের মতো।আমার মনে হয় ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে মধুসূদনবাবু সহ আয়োজক সংস্থা ও পত্র পত্রিকার পরিচালকবৃন্দ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন।আমার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে ওনারা সকলেই অবহিত।ব্যক্তিগত জীবনে অনেক বঞ্চনার শিকার আমি।অনেক যন্ত্রনা বুকে নিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ধৈর্যের সঙ্গে এই চর্চায় মনোনিবেশ করা হয়ত সকলের পক্ষে সম্ভব নয়।তার উপর বয়সের ভার, শারিরীক সমস্যা আর্থিক সংকট , পারবারিক দায়বদ্ধতা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা অগ্রাহ্য করে গবেষণায় সফল হওয়া হয়ত ওনাদের সহানুভুতি আকৃষ্ট করে থাকতে পারে।তা থেকেই এই সম্বর্ধনার আয়োজন।যেভাবেই হোক মধুসূদন দরিপা সহ সহযোগী সকলের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইল।” অনুষ্ঠানের শেষ অংশ প্রশ্নোত্তর পর্ব সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।