দাতাবাবার ১৩২ তম উরস মোবারক ও মেলার শুভসূচনা, পাথরচাপুড়িতে
সেখ রিয়াজুদ্দিন, বীরভূম:- বীরভূমের সিউড়ি থানার অন্তর্গত পাথরচাপুড়ীতে বিরাজমান হযরত দাতা মেহবুব শাহ ওলির ১৩২ তম পবিত্র উরস মোবারক ও সপ্তাহব্যাপী মেলার শুভসূচনা করা হয় শনিবার এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।শুরু হল। দাতা বাবার মাজার সংলগ্ন
মসজিদের মোয়াজ্জেন কামাল উদ্দিনের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে পবিত্র উরস মোবারক ও মেলার শুভ উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী সংগীতে ফকিরি গান পরিবেশন করেন প্রিয়াঙ্কা সরকার খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা শওকত আলী।
কথিত আছে যে,সুদূর ইরান থেকে হযরত দাতা মাহবুব শাহ ওলি বীরভূমের পাথরচাপুড়িতে আসেন এবং এখানেই তিনি সুফি সাধক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। সে সময় অগণিত ভক্ত উনার অলৌকিক শক্তি দর্শন করতেন। ভক্তরা বিভিন্ন রোগব্যাধি নিয়ে তাঁর কাছে এলে দাতাবাবা আধ্যাত্মিক শক্তিবলে ছাই এর মাধ্যমে তিনি ভক্তদের রোগ মুক্ত করতেন বলে এলাকার ভক্তদের বিশ্বাস। সেসময় দাতাবাবার প্রধান ভক্ত হিসেবে ছিলেন পাতাডাঙ্গা গ্রামের বিমলানন্দ ব্যানার্জি। মাজার কমিটির সূত্রে জানা যায় যে,
দাতাবাবা বাংলা ১২৯৮ সালের ৯ই চৈত্র ইহলোক ত্যাগ করেন। পাথরচাপুড়ীতেই তাঁকে সমাধীস্থ করা হয় এবং সেখানেই তার মাজার তৈরি হয়। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দূর দূরান্তের ভক্তরা নিজেদের মানত পূরণের উদ্দেশ্যে দাতা বাবার মাজারে আসেন।
আরও জানা যায়, তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজ বিজয় চাঁদ মাহাতাব পাথরচাপুড়ীর উক্ত জমিটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে সেকেড্ডার জমিদার খান বাহাদুর পাথরচাপুড়ী মেলার সূচনা করেন। সেসময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তথা ব্রতচারী খ্যাত গুরুসদয় দত্ত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাজার রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির প্রথম সভাপতি ছিলেন তিনি। এদিন প্রধান অতিথি হিসেবে
উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফয়জুল হক ওরফে কাজল শেখ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দাতাবাবার মাজার সর্বধর্ম সমন্বয়ের একটি প্রতীক। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই এখানে নিজেদের ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে আসেন। তিনি আরও বলেন যে, এই মেলা তথা মাজারের উন্নয়নে বর্তমান রাজ্য সরকারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। গত ৯ মাসে ৯ কোটি টাকার উপর বর্তমান রাজ্য সরকার সংস্কার কার্যে খরচ করেছেন। আগামীতেও এই সরকার আরো অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি তিনি পুলিশদেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। পুলিশ কর্মীরা করোনাকালে নিজেদের পরিবার পরিজন ছেড়ে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রচেষ্টায় দিন রাত এক করেছেন। তাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করেন।
জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বিধান চন্দ্র মাঝি, নগরী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পদ্মা বাগদি সহ বহু বিশিষ্ট জনেরা।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন জেলার প্রখ্যাত সঞ্চালক বরুন দাস।