‘নয়নতারা’- এক হৃদয়স্পর্শী স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
'একটাই শব্দ /শুনলেই জব্দ/ মেয়েদের চোখে আসে জল' - সত্যিই তাই 'মমতার সাক্ষর' সেই 'মা' শব্দটির কাছে পৃথিবীর সমস্ত নারীকুল বড্ড অসহায়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সন্তানের প্রতি মায়ের বাৎসল্য প্রেমের কাছে সাইক্লোন পর্যন্ত হার মেনে যায়। ভাষা সেখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনা। তারই একটুকরো চিত্র ধরা পড়ল রাজা মুন্সী পরিচালিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র 'নয়নতারা'-য়।
কখনো কখনো ইশারা বা নীরবতার মাধ্যমে প্রকাশিত মনের ভাব সরবতাকে অতিক্রম করে একটা আলাদা মাধুর্য এনে দেয়, অনেক বেশি বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। বছর চারেক আগে মেলায় হারিয়ে যাওয়া মূক-বধির শিশুকন্যাকে কুড়িয়ে পান এক নিঃস্ব মহিলা। যতই কুড়িয়ে পাওয়া মূক-বধির হোক তবুও তিনি মা। ধীরে ধীরে শিশুকন্যার উপর তার মাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে তার সংসার। তাকে ছেড়ে থাকার কথা সে কল্পনাও করতে পারেনা। এদের দু'জনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তেরো মিনিট ঊনষাট সেকেন্ডের 'নয়নতারা'।
এখানে সংলাপ কম হলেও ইঙ্গিত আবেগ প্রবণ চলচ্চিত্র প্রেমীদের চোখে জল এনে দেবে। অসাধারণ দক্ষতায় মায়ের চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন শিউলি দাস। কুড়িয়ে পাওয়া কন্যার প্রতি তার আবেগের প্রকাশ যেকোনো প্রকৃত মা'কে লজ্জায় ফেলে দিতে পারে। 'যেতে নাহি দিব' মনোভাব নিয়ে সন্তানকে আঁকড়ে ধরা অথবা সন্তানের কাছে থাকার ইঙ্গিত পেয়ে মায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল দেখবার মত। 'বিধাতার বিচারে তুই দিশাহারা' শিশুশিল্পী সঞ্চিতার কোনো প্রশংসায় যথেষ্ট নয়। তার ভঙ্গি দেখে মনে হবে হয়তো সে সত্যিকারের মূক ও বধির। মূক ও বধির চরিত্রে অভিনয় করা কতটা কষ্টকর সেটা একমাত্র একজন শিল্পী বোঝেন। সদানন্দ চ্যাটার্জ্জী ও ত্রিপর্ণা ভূঁইয়া নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জীর গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও ইংরেজি সাবটাইটেল অবলম্বনে তৈরি 'নয়নতারা' রাজা মুন্সীর পরিচালনা, সিনেমাটোগ্রাফি ও সম্পাদনায় লেখকের বিমূর্ত ভাবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। এই ছবির ক্ষেত্রেও পরিচালক নিজস্ব ঘরানা বজায় রেখে কৃত্রিম আলোর পরিবর্তে প্রাকৃতিক আলো ও ঝাঁ চকচকে সেটের পরিবর্তে বাস্তব পরিবেশকে ব্যবহার করেছেন। তিনি যেভাবে শিল্পীদের ব্যবহার করেছেন তাতে পরিচালক হিসাবে তার মুন্সীয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। নিজের সন্তান মৈয়ূখ ঘোষের সুরে চলচ্চিত্রটির একমাত্র সঙ্গীতটি পরিবেশন করেছেন মোম ঘোষ। রঞ্জন পাত্রের লেখা 'বিধাতার বিচারে তুই দিশাহারা...' গানটি সত্যিই অসাধারণ। গানের কথা ও সুর হৃদয় স্পর্শ করে।
রাজার হাত ধরে ত্রিভুবন জয় করার সমস্ত উপাদান ‘নয়নতারা’-য় আছে।