মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু ,
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সারদা তদন্তের গতিবেগ ক্রমশ বাড়ছে। একাধারে শনিবার কলকাতার ব্যাংকশাল আদালতে হাজিরা দিতে এসে সারদা কর্তার জেলে লেখা চিঠির যেমন পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। অপরদিকে সারদা তদন্তে একদা সিট কর্তা আইপিএস রাজীব কুমারের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পিটিশন সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করেছে সিবিআই। পাশাপাশি রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সচিব তথা প্রাক্তন কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা রুজুর আবেদনও রেখেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই দুটি পিটিশনের শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। শনিবার দুপুরে কলকাতার ব্যাংকশাল আদালতে তৃণমূল কংগ্রেসের কলকাতা জোনের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ তাঁর বিরুদ্ধে বিচারধীন মামলার হাজিরা দিতে এসেছিলেন।হাজিরা দিয়ে আদালত চত্বরে সম্প্রতি সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের একুশ পাতার চিঠি (কোর্টের সার্টিফাইড কপি) হাতে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন সারেন কুণাল।তিনি ব্যাংকশাল আদালতে সংশ্লিষ্ট এজলাসে নথিভুক্ত সারদা কর্তার চিঠি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেন। উল্লেখ্য, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের এই হাতে লেখা চিঠিটি ব্যাংকশাল আদালতে কেস রেকর্ডে অন্তভূক্ত হয়েছে সম্প্রতি। তাই আদালতের কাছে সার্টিফাইড কপির আবেদন রেখে তা তুলে চিঠির প্রতিটি ছত্রে ছত্রে লেখা অভিযোগ গুলির তদন্তের দাবি তুলেন কুণাল ঘোষ। সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি জেলে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন একুশ পাতার হাতে লেখা বিস্ফোরক চিঠি দেশের রাস্ট্রপ্রতি, প্রধানমন্ত্রী, সিবিআইয়ের ডিরেক্টর, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, মুখ্যমন্ত্রী সহ ব্যাংকশাল আদালতের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কে পাঠিয়েছেন। এই চিঠিতে ডান বাম সহ সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করা হেভিওয়েট নেতার নাম জড়ায়।যদিও ওই হেভিওয়েট নেতা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এর ডিরেক্টর কে যথাযথ তদন্তর দাবি তুলেছেন এহেন ‘রাজনৈতিক’ অভিঃসন্ধি মূলক চিঠির সততা জানতে।এদিন কুণাল প্রশ্ন তুলেছেন -‘ ২০১৩ সালে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের অন্তর্ধানের সময় টাইপ করা চিঠিটি তাহলে কে লিখেছিল’? চলতি মাসে প্রেসিডেন্সি জেলে সারদা আর্থিক দুর্নীতির মূল হোতা সুদীপ্ত সেন জেল সুপার মারফত একুশ পাতার হাতে লেখা চিঠি লিখেন।সেই চিঠি নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে যায়।এমনকি সেই চিঠি বামফ্রন্ট এর চেয়ারম্যান বিমান বসুর কাটমানি খাওয়ার দাবি করা হয়! এই চিঠিটির অবশ্য পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ মহাশয়। অপরদিকে চলতি সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে দুটি পিটিশন দাখিল করেছে সারদা তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। একটিতে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি সচিব আইপিএস রাজীব কুমারের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন রয়েছে।তদন্তকারী সংস্থার দাবি – ‘সারদা তদন্তে সিটের প্রধান দায়িত্বে থাকাকালীন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের লাল রঙের ডাইরি সহ পেন ড্রাইভ জাতীয় নানান গুরত্বপূর্ণ প্রমাণ লোপাট করেছেন রাজীব।তাই সিটের অন্যান্য তদন্তকারীদের দেওয়া তথ্য সূত্রের ভিক্তিতে রাজীব কে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার দরকার রয়েছে।’ এছাড়া কোর্টের নির্দেশ কে অমান্য করার জন্য আইপিএস রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা রুজু করার অনুমতিও চাওয়া হয়েছে দাখিল করা পিটিশনে।এই পিটিশনের নোটিশ আইপিএস রাজীব কুমার কে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। একদিকে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের একুশ পাতার হাতে লেখা চিঠির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি, অপরদিকে সারদা তদন্তে সিটের একদা প্রধান পদে থাকা আইপিএস রাজীব কুমার কে সিবিআইয়ের নিজস্ব হেফাজতে নেওয়ার আবেদন সারদা মামলায় গতিবেগ কে ক্রমশ বাড়াচ্ছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে সারদার গুরত্বপূর্ণ পদাধিকারী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের জামিন চাওয়ার মামলায় সিবিআই এক চাঞ্চল্যকর অডিও টেপের উল্লেখ করেছিল।সেই অডিও টেপের সততা জানাতে একদা রাজ্য তৃণমূল নেতা আসিফ খান সিজিও কমপ্লেক্সে সাক্ষ্যদানও করেগেছেন।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে আসন্ন বিধানসভার ভোটের প্রাক্কালে সারদা তদন্তে গতিপ্রকৃতি রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় করতে চলেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।