মৃত্যুঞ্জয় রায়,
শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক অনন্য সৃষ্টি। এই সৃষ্টিশীলতার প্রধান শাখা-প্রশাখা জুড়ে আছে পান, নৃত্য, বাদ্য, চারু ও কারুকলা এবং সর্বোপরি নাটক। শিল্প আঙ্গিকের এই সকল মাধ্যমগুলোর দৈনন্দিন চর্চায় আজো মুখরিত শান্তিনিকেতনের অন্যতম ব্রহ্মচর্যাশ্রম বা আজকের পাঠভবন। সেইভাবেই আশ্রম প্রাঙ্গনের নাট্যচর্চায় বেড়ে উঠেছে ‘দল নাট্যগোষ্ঠী’। রবীন্দ্রনাথের গান, নাটক তারা তাদের অঙ্গে ধারণ করে।
সেই ধারাবাহিকতার প্রাপ্ত ছুঁয়েই মঞ্চে এলো ‘দল’-এর নবতম প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর।আগের মত এই প্রযোজনাতেও দেশজ রীতির বাংলা নাট্যশৈলীর সমন্বয় ঘটেছে নাট্যশৈলীতে। তবে নতুনত্বের মধ্যে যেটা ঘটেছে সেটা হলো আবহমান বাঙলার চতুর্দিক খোলা চৌকোণ সমতল মঞ্চে অভিনয়। ডাকঘর নাটকের এহেন মঞ্চায়ন শান্তিনিকেতনে কখনো হয়নি সেটা পুরোনো আশ্রমিকদের বয়ানেই স্পষ্ট। তারা বলেন, ‘নাটকটি বরাবর যেভাবে দেখে এসেছি সেখানে একটি ছোট বাচ্চাকেই সবসময় ‘অমল’ হিসেবে দেখেছি এবং সে একটি ছেলে। কিন্তু একসাথে প্রায় চার থেকে পাঁচ জন ছেলে/ মেয়ে বিভিন্ন সময়ে ‘অমল’-এর চরিত্রে অভিনয় করছে এবং তাদের কেউই বাচ্চা নন সেটা সত্যিই ডাকঘর নাটকের জন্য একটি নতুন ভাবনা। –
এ প্রসঙ্গে নির্দেশক বলেন, ‘নাটকটি প্রধানত পালাগানের আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়েছে যেখানে ‘পায়েন রীতি’র সাথে সাথে ‘গল্প কখন রীতি’র মিশ্রন হয়েছে। আর চরিত্র উপস্থাপনার ক্ষেত্রে মূলত দেশজ রীতির বাগুলা নাট্যশৈলীর অন্যতম উপাদান বদলী রীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। লোকায়ত নাট্যশেলীতে ‘বদলী রীতির একটি আলাদা মাত্রা থাকলেও এইখানে নির্দেশক তাঁর নিজের ভাবনা অনুযায়ী নতুনভাবে এই রীতির ব্যবহার ঘটিয়েছেন।
‘দল’ এর অন্যান্য প্রযোজনার মত এই নাট্য শরীরের পাত্রাভরনেও যেমন: সেট, লাইট এবং মেকআপ-এ আলাদা কোনো কারুকার্য ছিল না যেটা তাদের নাট্য প্রযোজনার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। রবীন্দ্রনাথের গান ও সুরের দোলায় মোহিত হয়ে কথা-গান, নৃত্য এবং বিশেষ করে আবহ সঙ্গীত এবং কোরিওগ্রাফীর এক অপূর্ব সমন্বয়ে মঞ্চ আবিষ্ট হয়ে ছিল পুরোটা সময়।