মনসা পুজোয় মেতে উঠল মঙ্গলকোটের গণপুর গ্রাম

Spread the love

মনসা পুজোয় মেতে উঠল মঙ্গলকোটের গণপুর গ্রাম

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

   খাতায়-কলমে কয়েকটি বাড়ির হলেও বাস্তবে পুজো যে সবার সেটা আবার প্রমাণিত হলো। ১ লা নভেম্বর ছিল মঙ্গলকোটের গণপুর গ্রামের 'মণ্ডল' বাড়ির মনসা পুজো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটাই হয়ে উঠেছে সর্বজনীন এবং কার্যত গোটা গ্রাম মেতে উঠল পুজোয়। 

  'মণ্ডল' বাড়ির সদস্যদের দাবি অনুযায়ী প্রায় পাঁচশ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়। একটি তালপাতা দিয়ে ঘেরা বাড়িতে তখন পুজো হতো। বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে দালান বাড়ি। সাধারণত কার্তিক মাসের শনিবার বা মঙ্গলবারে এই পুজো হয়। পুজোর একসপ্তাহ আগে 'মনসামঙ্গল'-এর বেহুলা-লখিন্দরের ঘটনাবহুল করুণ উপাখ্যানটি গানের আকারে অল্প অল্প করে সাতদিন ধরে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়। আট দিনের মাথায় একটি গাছকে কেন্দ্র করে বেহুলা-লখিন্দরের প্রতীকী বিবাহ হয়। এভাবেই পুজোর সমাপ্তি ঘটে। 

    মনসার অভিশাপ 'বিভা রাতে খাইবা ভাতার' এর হাত থেকে বাঁচার জন্য সাঁতালি পর্বতে লোহার বাসরঘর বানানো হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মনসার নির্দেশে রাখা গোপন ছিদ্র পথে কালনাগিনী ঢুকে লখাইকে দংশন করে এবং তার মৃত্যু ঘটে। বেহুলা স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে কলার ভেলায় ভেসে বহু বিপদ অতিক্রম করে স্বর্গে এসে পৌঁছায় এবং নাচের মাধ্যমে দেবতাদের তুষ্ট করে। দেবতাদের আদেশে মনসা লখীন্দরের প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। বেহুলার সতীত্বের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে অবশেষে চাঁদ মনসার পুজো দেয়। উপাখ্যানটি প্রাচীন হলেও মানবিক আবেদনের কারণে আজও সেটি বাঙালি সমাজে সমান জনপ্রিয়। 

 পুজোকে কেন্দ্র করে শুধু 'মণ্ডল' বাড়ি নয়, আদিবাসী বাড়িগুলোও আত্মীয় স্বজনে ভরে ওঠে। মেলা বসেছে। জানা যাচ্ছে আগামী দু'দিন ধরে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।

 মণ্ডল বাড়ির অন্যতম সদস্য সঞ্জীব মণ্ডল বললেন - দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই পুজোর আয়োজন করে আসছে। আমরা সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছি। মায়ের আশীর্বাদে আমরা আগামী দিনেও সেটা ধরে রাখব। তিনি আরও বললেন - সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য পুজো অবশ্যই আগের থেকে অনেক জমজমাট হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *