পা দিয়ে লিখে মাধ্যমিকে বাজিমাত ও গৃহশিক্ষক ছাড়াই মাধ্যমিকে কৃতি আদিবাসী ছাত্রকে সম্বর্ধনা

Spread the love

পা দিয়ে লিখে মাধ্যমিকে বাজিমাত ও গৃহশিক্ষক ছাড়াই মাধ্যমিকে কৃতি আদিবাসী ছাত্রকে সম্বর্ধনা

সেখ সামসুদ্দিন, ২৩ মেঃ মেমারি ১ ব্লকের দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলা গ্রামের আদিবাসী পরিবারের মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী ছিল জগন্নাথ মাণ্ডি। জন্ম থেকেই সে প্রতিবন্ধী। দুই হাত না থাকায় নাম রেখেছিলেন জগন্নাথ। খর্বকায় হাতে নেই তালু, নেই আঙুলও। তাতেও দমে যায়নি সে। এবার সেই ছেলেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পা দিয়ে লিখেই এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। মা বাবা থাকতেও নেই। জন্মের পরই জগন্নাথকে ছেড়ে চলে যায় মা। বাবাও থাকে অন‍্যত্র। বৃদ্ধা ঠাকুমার কাছেই বড় হয় জগন্নাথ। এলাকাতেই বিয়ে হয়েছে তার পিসির। পিসির রোজগারেই চলে তাদের সংসার এমনকি জগন্নাথের পড়াশোনার খরচ। নিজে প্রতিবন্ধী, ঘরেতে অভাব, কিন্তু অদম‍্য ইচ্ছা শক্তি ও অদম‍্য জেদের জোরে সমস্ত প্রতিকুল প্রতিবন্ধকতাকে দুরে সরিয়ে গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার করে নুদিপুর ভুপেন্দ্র স্মৃতি বিদ‍্যামন্দিরের এবছরের মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী ছিল জগন্নাথ!
এবার সেই জগন্নাথই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পা দিয়ে লিখেই এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে।
গত শুক্রবার মাধ‍্যমিকের ফলাফল ঘোষণা হতেই দেখা গেল সফলতার চওড়া হাসি জগন্নাথ মাণ্ডির মুখে। জগন্নাথের এই সাফল‍্যে শিক্ষক শিক্ষিকা পাড়াপ্রতিবেশী সকলেই খুশি।
অপরদিকে মেমারি ১ ব্লকের দেবীপুর অঞ্চলের পূণ‍্য গ্রামের আদিবাসী পরিবারের ছাত্র সূর্য বেসরা। ছোট থেকেই মানুষ এই পূর্ণগ্রামে তার মামার বাড়িতে। তার মাসির আদর যত্নে লালিত পালিত হয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে সূর্য। গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডির সীমানা পেরিয়ে সে ভর্তি হয় দেবীপুর আদর্শ বিদ্যালয়ে। পরিবারে অভাব অনটন নিত্য দিনের সঙ্গী। মাসী দিন মজুরের কাজ করে কোনরকমে সংসার চালানোর পাশাপাশি সূর্যর পড়াশোনার খরচও চালান। গৃহশিক্ষক দেওয়ার মত ক্ষমতা সূর্যের মাসির ছিল না। পূণ‍্যগ্রাম শ্রীকৃষ্ণানন্দ মিশনে বিনা পয়সায় পড়াশোনা করে সূর্য এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে এবং শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা হওয়ার পর জানা যায় কোন গৃহশিক্ষক ছাড়াই সূর্য বেশ ভালো ফল করেছে মাধ্যমিকে। তার প্রাপ্ত নাম্বার ৬২৬। এই পুণ্যগ্রাম শ্রীকৃষ্ণ আনন্দ মিশনে প্রায় ৩০ জন ছাত্রকে বিনা পয়সায় পড়াশোনা করানো হয়। আগামী দিনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সূর্যের। সূর্যের এই সাফল্যে খুশি পূণ‍্যগ্রাম কৃষ্ণানন্দ মিশনের মহারাজ সহ সকলেই। আগামী দিনেও সূর্যর পাশে থাকারও আশ্বাস দেন মিশনের মহারাজ। প্রতিটি বিষয়ে গৃহশিক্ষক দেয়ার ক্ষমতা যেসব ছাত্রের পরিবারের আছে তারা হয়তো আজ মাধ্যমিকে ভালো ফল করে খবরের শিরোনামে আছে, কিন্তু প্রতিটি বিষয় তো দূরের কথা একটিও গৃহশিক্ষক দেওয়ার ক্ষমতা সূর্য বেসরার পরিবারের মতো যে সকল পরিবারের নেই তাদের খবর হয়তো কেউ রাখেনা, তাই সকলের কাছে বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলোর কাছে সূর্য একটা আকাশের সূর্যের মতো জ্বলন্ত উদাহরণ।
আজ এই দুই কৃতি সন্তানকে তাদের বাড়ি গিয়ে সম্বর্ধনা জানান বর্ধমান সদর দক্ষিণ মহকুমাশাসক কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল, মেমারি ১ বিডিও ডাঃ আলী মহঃ ওয়ালি উল্লাহ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বসন্ত রুইদাস, শিক্ষা কর্মাধ‍্যক্ষ আব্দুল হালিম, দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিতাই ঘোষ সহ বিশিষ্ট ব‍্যক্তিবর্গ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *