মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
হয়তো নারদায় একদা ধৃত নেতা মন্ত্রীদের গৃহবন্দী নির্দেশিকাতে উজ্জীবিত হয়ে ছত্রধর মাহাতো গৃহবন্দী থাকবার আবেদন রেখেছিল আদালতের কাছে।তবে আদালত তাতে সায় দিলনা।ছত্রধর কে থাকতে হবে জেলখানাতেই। কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএ এজলাসে উঠে ধৃত ছত্রধর মাহাতোর গৃহবন্দী থাকবার আবেদনের শুনানি। সেখানে বিচারক পার্থসারথী সেন এই আবেদন খারিজ করে দেন। ১৭ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। আপাতত আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে থাকতে হচ্ছে ছত্রধর মাহাতোকে।গত শুক্রবার তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক জেলবন্দি ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবী এই গৃহবন্দি থাকবার আবেদনটি জমা দিয়েছেন। যা আদালত গ্রহণ করেছিল।আইনজীবীর মাধ্যমে ছত্রধর জানিয়েছেন -‘ তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। বাড়িতে থেকেই তদন্তের সব রকম সহযোগিতা করবেন’। করোনা সংক্রমণ এড়াতে গৃহবন্দী থাকার আবেদন রয়েছে সেখানে। উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ এনআইএর গোয়েন্দারা ছত্রধর মাহাতো কে তাঁর বাড়ি থেকে একপ্রকার তুলে আনে।বর্তমানে জেলবন্দি হিসাবে রয়েছেন ছত্রধর মাহাতো।একুশে বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের আগেই এনআইএর বেড়াজালে পড়েছিল ছত্রধর মাহাতো। কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএ এজলাসে পেশ করা হয়েছিল ছত্রধর মাহাতো কে।বিচারক সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে ধৃত ছত্রধর মাহাতো কে ৬ এপ্রিল অবধি এনআইএ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা ধাপে ধাপে মেয়াদ বাড়ে । ।চলতি বছরের প্রথম দিকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রীতিমতো ভৎসনার মুখে পড়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। দীর্ঘ তেরো বছর পর ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে ইউপিএ ধারা যুক্ত করার আবেদন টি দেখে হতবাক হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এনআইএর ছত্রধর মাহাতো কে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এই দুটি মামলা গ্রহণ পরবর্তী দশ বছর জেল হেফাজতে থাকার পর শাসক দল তৃণমূলে যোগদানের পর থেকে পুরাতন মামলায় অতিসক্রিয় হয়ে উঠে কেন্দ্রীয় এজেন্সি বলে অভিযোগ। ওইদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর তদন্তে অসহযোগিতা করার অভিযোগে ছত্রধর মাহাতো কে গ্রেপ্তারের আবেদন টি কে খারিজ করে দিয়েছিল। তার আগে অভিযুক্ত ছত্রধর মাহাতো রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে গেলে তা সিটি সেশন কোর্টের এনআইএ এজলাস থেকে অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে ছত্রধর মাহাতো কে। এই মামলার যাবতীয় নথি তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলার গত শুনানিতে পিটিশনকারী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর কাছ থেকে হলফনামা চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ইতিমধ্যেই এই মামলায় তদন্তে সহযোগিতার জন্য শালবনীর কোবরা ক্যাম্পে অভিযুক্ত ছত্রধর মাহাতো দুবার জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয়েছিলেন। গতবছর ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টের রায়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতো।এর মধ্যে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক পদ পান ছত্রধর মাহাতো।তারপর থেকেই দুটি পুরাতন মামলায় সক্রিয় হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। গতবছরের ৩০ মার্চ এই দুটি মামলায় সক্রিয় হয় তারা। সিটি সেশন কোর্টে এই মামলার শুনানি চলছে।তবে ছত্রধর মাহাতো কে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিল এনআইএ। মূলত মামলার তদন্তে অসহযোগিতা করার অভিযোগ ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারি চেয়ে গতবছর আগস্ট মাসে তারা এই পিটিশন টি দাখিল করেছিল হাইকোর্টে। বেশ কয়েক টি শুনানির পর গত শুনানিতে প্রধান বিচারপতির এজলাসে এই মামলার শুনানিতে এনআইএর হলফনামা তলব করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএর এজলাসে ছত্রধর মামলা চলছে । অভিযোগ, প্রায় একযুগ আগেকার দুটি ফৌজদারি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ পুন তদন্তের নামে অতিসক্রিয় হয়ে উঠে। ইউএপিএ ( রাস্ট্রদ্রোহিতা) মামলায় ফের জরুরি তলব করা হয় ছত্রধর মাহাতো কে। করোনা আবহে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এনআইএ এর এহেন অতিসক্রিয়তা দেখা যায়। এগারো বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালে বিগত বাম জমানায় শালবনীতে জিন্দালদের কারখানার উদঘাটন পরবর্তীতে উত্তপ্ত হয় জঙ্গলমহল। ধারাবাহিক পুলিশি সন্ত্রাসে এবং তৎকালীন শাসকদলের নেতাদের অত্যাচারে গড়ে উঠে জনসাধারণের কমিটি। সিপিএমের তরফে বারবার এই কমিটি কে মাওবাদীদের প্রকাশ্য মুখ হিসাবে অভিযোগ তোলা হত। সেসময় জঙ্গলমহলে এক বাম নেতা খুনে ছত্রধর মাহাতো সহ ৩০ জনের নাম জড়ায়। এই মামলায় নিম্ন আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়। অপরদিকে সমসাময়িক ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন বাঁশতলা স্টেশনে দিল্লি ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক অপহরণে অভিযোগ উঠে জনসাধারণের কমিটির বিরুদ্ধে। এই ঘটনার মামলাতেও চার্জশিট দাখিল হয় নিম্ন আদালতে। এই দুটি মামলায় প্রথম দিকে জেলা পুলিশ তদন্তকারী হিসাবে থাকলেও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ তদন্তভার নেয়। কেননা রাস্ট্রদ্রোহিতার ( ইউএপিএ) ধারা রুজু করা হয়। যা এই বাংলায় সর্বপ্রথম কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কার্যকর করা হয় বলে জানা যায়। যদিও ছত্রধরের আইনজীবীরা কলকাতা হাইকোর্টে বিভিন্ন শুনানিতে ইউএপিএ ধারা রুজু করার ক্ষেত্রে যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে তা বেশিরভাগ মানা হয়নি বলে দাবি রেখেছিলেন। টানা দশবছর জেল হেফাজতে থেকে গতবছর কলকাতা হাইকোর্টের রায়দানে মুক্তি পেয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতো সহ অন্যরা। গত ২৮ মার্চ ফের গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ছত্রধর।১৭ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতে থাকতে হচ্ছে জঙ্গলমহলের এই নেতা কে।