সরকারের কাছে অর্থ গচ্ছিত রেখে নিতে হবে ছাড়পত্র
দুর্নীতিরোধে খাস জমির পাথর খাদান তোলা হচ্ছে নিলামে
খায়রুল আনাম
প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে জেলা বীরভূমের একাংশে মাটির নীচে যে কয়লা রয়েছে, তা উত্তোলন করে দেউচা-পাঁচামি খোলামুখ কয়লাখনিকে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি হিসেবে সামনে নিয়ে আসতে রাজ্য সরকার সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। কোনও অনিচ্ছুকের জমি বলপূর্বক নেওয়া হবে না বলে আগেই জানিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। স্বেচ্ছায় জমিদাতাদের পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি, জমির মূল্য, পুনর্বাসন-সহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুবিধা প্রদানের ঘোষণার পরে, বহুজন স্বেচ্ছায় জমি দিয়ে সরকার ঘোষিত সুবিধা গ্রহণ করেছেন। বিভিন্নভাবেই বলা হচ্ছিল যে, সরকার একইভাবে জেলার পাথর শিল্পাঞ্চলের মানুষদেরও জীবন-জীবিকায় হাত দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করে দেবে একইভাবে। প্রাকৃতিক সম্পদ- কেন্দ্রিক মানুষের যে জীবিকা তাও হরণ করে নেবে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার জেলা সফরে এসে জানিয়ে দিয়ে যান যে, রাজ্য সরকার একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে সমগ্র বিষয়গুলির স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজতে আগ্রহী। জেলা বীরভূমের একটা অংশে রয়েছে উন্নতমানের কালো পাথর। এবার রাজ্য সরকার জেলার মহম্মদবাজার, নলহাটি-১, মুরারই-১ ও রামপুরহাট-১–এই চারটি ব্লকের সরকারি ৩২১.১ একর খাস জমিতে যে উন্নতমানের কালো পাথর বা ব্যসল্ট অধ্যুষিত খাস জমি রয়েছে তা নিলামের মাধ্যমে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা বেশি দর দেবে তাদেরই পাথর অধ্যুষিত এলাকার খাস জমি লিজ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই এই লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে এবং ২৫ জানুয়ারির মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। আর এই লিজ পেতে কী পরিমাণ অর্থ সরকারের কাছে গচ্ছিত রাখতে হবে এবং লিজের মেয়াদ কতদিনের হবে, সে সব বিষয়ই সরকারিভাবে ‘বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লিজের মাধ্যমে নেওয়া পাথর খাদান থেকে পাথর উত্তোলন এবং পাথরভাঙা কল বা ক্রাশার চালাতে গেলে অবশ্যই পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র নিতে হবে। বর্তমানে এখানকার পাথর শিল্পাঞ্চলে বহু সংখ্যক পাথর খাদান এবং ক্রাশার চললেও, কয়েকটির মাত্র পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকী নব্বই শতাংশের বেশি রমরমিয়ে চলছে অবৈধভাবে। এইসব এলাকার খাস জমি লিজের মাধ্যমে দিলে তা থেকে সরকারের কোষাগারে বিপুল পরিমণের অর্থ জমা হবে এবং পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানে বর্তমানে যে সব পাথর খাদান ও ক্রাশারগুলি রয়েছে তা সবই ব্যক্তি মালিকানাধীন । তবে, পাথর পরিবহনের জন্য যে কয়েক হাজার লরি ও ডাম্পার রয়েছে তারজন্য যে ডিসিআর কাটতে হয়, সেই বাবদ সরকারী কোষাগারে বিপুল পরিমাণের অর্থ জমা হচ্ছে। কিন্তু অবৈধভাবে পাথর খাদান এবং ক্রাশার চলার ফলে স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিবেশবিধি একেবারেই মানা হয় না। সরকারি কোষাগারে সঠিক পরিমাণের রাজস্বও জমা পড়ছে না। কিন্তু এখানকার খাস জমি পাথর খাদান ও ক্রাশারের জন্য লিজে দিলে সেইসব সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে এবং সরকারের কোষাগারে বিপুল পরিমাণের অর্থ জমা পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে ।।
ছবি : লিজ প্রক্রিয়া চলছে।