খায়রুল আনাম,
বীরভূম : জেলার মহম্মদবাজারের দেউচা-পাঁচামি খোলামুখ কয়লাখনি প্রকল্প নিয়ে এখন চরম সঙ্কটে পড়েছে সিপিএম। এক সময় সিপিএম বামফ্রন্টের নামে এই কয়লাখনি প্রকল্পের বিরোধিতা করলেও, অতীতে সিপিএম তাদের শরীকদলগুলির যে সব আচরণ করেছে, তাতে এই কয়লাখনি বিরোধী সিপিএমের আন্দোলনে শরীকদলগুলিও আর সিপিএমকে সঙ্গ দিচ্ছে না। এক সময় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে সঙ্গী করলেও তিনি আর বিষয়টি নিয়ে কোনও বাক্য খরচ করেন না। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মহম্মদ সেলিমকে হাতে গোনা লোক নিয়ে ময়দানে নামিয়েও কোনও সুফল মেলেনি। তিনি ফিনফিনে ধূতি-পাঞ্জাবী পড়ে কয়লাখনি বন্ধ করতে যতদূর যেতে হবে বলে হুংকার দিয়ে গেলেও আর আসেননি। আদিবাসীদের মধ্যে বিভাজন রেখা টেনে এই প্রকল্প বিরোধী আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সিপিএমের অভ্যেসি আন্দোলনও মার খেয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের পদস্থ আধিকারীকরা মহম্মদবাজারে এসে কয়লাখনির অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করে গিয়েছেন এবং এজন্য গ্লোবাল টেণ্ডারও ডাকা হয়েছে। এই খোলামুখ কয়লাখনি প্রকল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথাও জানিয়ে দিয়েছে সরকার। এবং এই কয়লাখনি হলে সরাসরি ১ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের কথাও বলা হয়েছে। এমন কী, এখানে খোলামুখ কয়লাখনির জন্য এলাকার গাছ ধ্বংস না করে তা স্থানান্তরিত করে অন্যত্র প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সরকার প্রতিশ্রুতি মতো স্বেচ্ছায় জমিদাতাদের ঘোষিত প্যাকেজ অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং সরকারি চাকরিও দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আবারও সিপিএম আদিবাসী অধিকার মঞ্চের নামে ভিন জেলা থেকে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তথা সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কেকে নিয়ে সিউড়ী শহরে স্বল্পসংখ্যক মানুষকে নিয়ে একটি মিছিল করে জেলা প্রশাসন ভবনে গিয়ে জেলাশাসক বিধান রায়ের হাতে একটি স্মারকলিপি দিয়ে অতীতের মতো এবারও কয়লাখনি বন্ধের দাবি জানায়। যে ভাবে কয়লাখনি হচ্ছে, তাঁরা তার বিরোধী বলে জানিয়ে সেই অতীতের নিস্ফলা হুংকারকে আরও একবার ঝালিয়ে নিয়েছে। জেলাশাসক বিধান রায় অবশ্য এসবকে কোনও আমল না দিয়েই স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজ্য সরকার স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতেই জমি নিয়েছেন। তাঁদের ক্ষতিপূরণের প্যাকেজও দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা তা গ্রহণও করেছেন। বলপূর্বক অনিচ্ছুক কারও জমি নেওয়া হয়নি, হবেও না। এমন কী তিনি জানিয়েও দিয়েছেন যে, কয়লাখনি প্রকল্পে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে। এরপর সিপিএম এখন আর এনিয়ে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
