খায়রুল আনাম সম্পাদক বিপাশা আর্ট প্রেস,
পুর এলাকায় পরাজয়ের গ্লানি মুছতে পদে বদল ঘটালো শাসক শিবির
জেলা বীরভূমে সদ্য সমাপ্ত রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে জেলার ১১ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে শাসক শিবির তৃণমূল কংগ্রেস ১০টি দখল করতে পারলেও, জেলার পুর এলাকাগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেস শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। এরমধ্যে রামপুরহাট বিধানসভায় এবারও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন বিদায়ী কৃষিমন্ত্রী ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এবারও জয়ী হলেও বিগত নির্বাচনের চেয়ে তাঁর জয়ের ব্যবধান যে শুধুমাত্র কমে গিয়েছে তাই-ই নয়, তিনি নিজের ওয়ার্ডেও পিছিয়ে গিয়েছেন। আর তাই ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরই আশিসবাবু দলীয় নেতৃত্বের কাছে আবেদনও রাখেন যে, অবিলম্বে দলের ভিতরের গদ্দারদের চিহ্নিত করে তাঁদের দল থেকে তাড়াতে হবে। এরপরই দলের রামপুরহাট শহর সভাপতি সুশান্ত মুখোপাধ্যায় ভোটে পিছিয়ে থাকার সব দায়ীত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপরই রামপুরহাট শহর কার্যকরী সভাপতি হিসেবে দায়ীত্ব দেওয়া হয় সৌমেন ভকতকে। এবার সেই সৌমেন ভকতকেই দলের শহর সভাপতির স্থায়ীভাবে দায়ীত্ব দেওয়া হলো। সেইসাথে নতুনভাবে দলের শহর কমিটি গঠন এবং যাঁরা বিধানসভা ভোটে দলের সঙ্গে গদ্দারি করে বিজেপির হাত শক্ত করেছে, তাঁদের চিহ্নিত করে দল থেকে বহিষ্কার করার তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধুমাত্র এবারের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলেই নয়, বিগত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলেও রামপুরহাট পুর এলাকায় বিজেপির চেয়ে কম ভোট পেয়েছিলো শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সময় থেকেই এই পুর এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেও তা যে সফল হয়নি, তা সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটের ফলাফল থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর সে কারণেই এবার ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতের চেয়ে কম ব্যবধানে জয়ী হওয়ায়, তাঁকে আর মন্ত্রীত্বে না এনে, রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকারের পদের “চুষিকাঠি” ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই অনেকেই মনে করেন। ইতিমধ্যেই রামপুরহাট পুর বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায়, এখানে প্রশাসক বসিয়ে পুরসভা চালানো হচ্ছে। এতোদিন পর্যন্ত পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন হিসেবে বসে ছিলেন বিদায়ী পুর বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী তেওয়ারী। কিন্তু এবার তাঁকেও সরিয়ে দিয়ে পুর বোর্ডের চেয়ারপার্সন করা হলো ৯ নম্বর ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর মীনাক্ষী ভকতকে। এই মীনাক্ষী ভকতেরই স্বামী সৌমেন ভকতকে শহর সভাপতি করায় দলের একাংশের মধ্যেই এবার পুর শহরে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে পরিবারতন্ত্রের হাতেই দলকে ঠেলে দেওয়া হলো বলে বলা হচ্ছে। ১৮ ওয়ার্ডের রামপুরহাট পুরসভায় গত লোকসভা ভোটের ফলাফলে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ১৫টি ওয়ার্ডে প্রায় ৯ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলো বিজেপির চেয়ে। সেই থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস এখানে নিরন্তর জনসংযোগ গড়ে পুর এলাকায় জয়ের স্বপ্ন দেখলেও, সেই স্বপ্ন সফল হওয়া তো দূরের কথা, এবারও বিধানসভা ভোটে ৪টি ওয়ার্ড বাদ দিয়ে সব মিলিয়ে বিজেপির থেকে ৬ হাজার ১৫০ ভোটে পিছিয়ে থেকেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী পুর নির্বাচনের লক্ষ্যে বিজেপির কাছে এই পিছিয়ে থাকাটাই এখন কাঁটার মতো বিঁধছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে। প্রাচীন এই পুর শহরের একমাত্র নাট্য মঞ্চ প্রতিশ্রুতি দিয়েও সঠিকভাবে সংস্কার করে নাগরিক পরিষেবায় তুলে দিতে না পারা, শহরের প্রাচীন জলাশয়গুলি বুজিয়ে একের পর এক নির্মাণ কাজ হওয়া, এমন কী, যে বৃহৎ জলাশয়ে এক সময় সারা শহরের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন হতো, সেই জলাশয়ও মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আশিসবাবু তা ফিরিয়ে দিতে না পারায়, পুর নাগরিকদের মধ্যে যে ক্ষোভ জমেছিলো, এবারের ভোটে পুর নাগরিকরা আশিসবাবুর বিরুদ্ধে সেই ক্ষোভই উগরে দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। আগামীর পথ যে আশিসবাবু ও তাঁর দলের কাছে যে খুব একটা মসৃণ, এটাও মনে করছেন না রামপুরহাটের পুর নাগরিকেরা ।।