বোধনের দিনেই বিজয়ার সুর শোনা যায় আসানসোলের ধেনুয়া গ্রামে

Spread the love

বোধনের দিনেই বিজয়ার সুর শোনা যায় আসানসোলের ধেনুয়া গ্রামে

সঙ্গীতা মুখার্জ্জী মণ্ডল, আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান -:

  মহালয়ার হাত ধরে শুরু হয়েছে বোধন। আগমনীর সুরে চারপাশ আনন্দ মুখরিত। রঙিন পোশাকে সুসজ্জিত কচিকাচাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে প্রকৃতি যেন সেজে উঠছে আপন খেয়ালে। কিন্তু বোধনের দিনই বিদায়ের সুর বেজে ওঠে আসানসোলের ধেনুয়া গ্রামে। 

 সর্বত্র চারদিনের হলেও মহালয়ায়    একদিনের দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয় আসানসোলের ধেনুয়া গ্রামে। ১৯৭৮ সালে ব্রাহ্মণ পণ্ডিত কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুরের হাত ধরে এই পুজো শুরু হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন দুর্গাপুজো গ্রামবাসীদের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সাহায্য করবে। গ্রামবাসীদের সাথে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন ও একটি ছোট মন্দির তৈরি করেন। তিনি নিজেই মূর্তি তৈরি করেন এবং পুজোর আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

  কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুরের মৃত্যুর পর, তার পুত্র তরুণ সরস্বতী ঠাকুর পিতার আদর্শ অনুসরণ করে পুজোকে আরও সুন্দর ও ঐতিহ্যবাহী করে তোলেন। এখানে মায়ের সাথে পরিবারের সদস্যদের পরিবর্তে দুই সখি জয়া ও বিজয়া থাকেন। কথিত আছে সাধক তেজানন্দ ব্রহ্মচারী সাধনা বলে মায়ের এই রূপ অবলোকন করেন বলে আজও সেই রীতি চলে আসছে। আজও ধেনুয়া গ্রামের একদিনের দুর্গাপুজো একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন।

 বর্তমানে স্থানীয় শিল্পীরা মূর্তি তৈরি করেন। সাধারণ মানুষই পুজোর আচার, অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। ভক্তদের মাঝে ভোগ বিতরণের ব‍্যবস্থা করা হয়। পুজো শেষে ঘট নিরঞ্জন করা হয়। চারিদিকে যখন দুর্গা পুজোর আমেজ তখন ধেনুয়া গ্রামের কালীকৃষ্ণ আশ্রমে আগমনীতেই বেজে ওঠে  বিদায়ের সুর। বিষণ্নতা নেমে আসে গ্রামবাসীদের মনে।

 গত কয়েকবছর ধরে এখানে পুজো দেখতে আসেন বার্ণপুরের বাসিন্দা মুনমুন মুখার্জ্জী। তিনি বললেন, সত্যিই এটা এক আলাদা অভিজ্ঞতা। অনেকটা সকালে জন্মদিবসের আনন্দের পাশাপাশি বিকেলে বিষাদময় মৃত্যুদিন পালনের মত! উপায় তো নাই, দীর্ঘদিনের রীতি। তবে একদিনের হলেও বহু মানুষের সমাগমে যথেষ্ট আনন্দ উপভোগ করা যায়। এটাই বা কম কিসের!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *