‘ভাঙা অনুভূতির টুকরো খেলা’ – এক অসাধারণ কাব্যগ্রন্থ

Spread the love

‘ভাঙা অনুভূতির টুকরো খেলা’ – এক অসাধারণ কাব্যগ্রন্থ

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

   কাব্যচর্চার শ্রেষ্ঠ পীঠস্থান এই বাংলা। এর আনাচকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাব্য সৃষ্টির অসংখ্য রসদ। সেইসব রসদ কুড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দদের মত কবিরা একের পর এক অসাধারণ কাব্য সৃষ্টি করেছিলেন। আজও সেই পথ অনুসরণ করে চলেছেন এই বাংলার  একদল কবি। আসলে বাঙালিদের মনে একটা 'স্বভাব কবি' সত্ত্বা বিরাজ করে। হৃদয়ে বিরাজ করে প্রেমের অস্তিত্ব। শত প্রতিকূল পরিস্থিতি এগুলো কখনোই ধ্বংস করতে পারেনা। তাইতো আজও নিত্য নতুন ভিন্ন স্বাদের কাব্যের ডালি নিয়ে হাজির হন একদল কবি। কলকাতার আসন্ন বইমেলায় কাব্যপ্রেমী বাঙালিদের কাব্য পিপাসা মেটানোর জন্য 'ভাঙা অনুভূতির টুকরো খেলা' কাব্যগ্রন্থটি পাঠকের হাতে  তুলে দিতে চলেছেন কলকাতার রাকা ভট্টাচার্য্য। 

   কবি কোনো এক কাব্যগ্রন্থে লিখেছিলেন,  'হর এক প্রেম কিছু কবিতায় লাশ/ ভালোবেসে বলি তাকে দুঃখ বিলাস।' তাহলে কি কবি 'ভাঙা অনুভূতির টুকরো খেলা' কাব্যগ্রন্থে চিরপরিচিত একঘেয়েমি প্রেমের কবিতা লিখেছেন? বাস্তবে অনুভূতিশীল পাঠকের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রেম, প্রীতি, প্রতিরোধ ও বিরোধের টুকরো টুকরো অনুভূতি দেখা যায়। অবশ্যই এখানে প্রেম আছে। কিন্তু সেই প্রেম হয়ে উঠেছে তাৎপর্যময়। প্রতিটি কবিতার ছোট ছোট বাক্যবন্ধনীগুলি পাঠকের মনের মধ্যে ভাবনার খোরাক যোগায়।

    চলার পথে আমরা কত স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করি। প্রকৃতির নিয়মে 'ধরে রাখতেই ছেড়ে যায় কত গল্প'। তার স্থান দখল করে অন্য চরিত্র। আসলে রোমান্টিক মানুষের মন রঙিন হয়। তাইতো তার মনে হয় 'কবিতারা আজ প্রজাপতির মত উড়ছে'। প্রজাপতির রঙিন পাখার মত রোমান্টিক মানুষের মন প্রেমের জগতে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু যখন কবি লেখেন 'চুম্বন থেরাপিতে কিছু রোগ সারে'- চমকে ওঠে পাঠক। ভাবতে থাকেন, কবি কি তাহলে দেহগত প্রেমের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন? অচিরেই পাঠকের স্বপ্নভঙ্গ হয়। যখন তিনি লেখেন 'অমৃতময় মীরার সাধনা তোকে ভালবাসি খুব'। এখানে তো দেহগত প্রেমের কোনো স্থান নাই, সবটাই আধ্যাত্মিক। পাঠক বিরাজ করতে থাকেন অন্য জগতে। পরমুহূর্তেই 'হাতে শাণিত কাস্তে চাঁদ' এর হাত ধরে পাঠক ফিরে আসেন নিষ্ঠুর বাস্তব জগতে। চাঁদ রোমান্টিকতার ইঙ্গিত বহন করলেও কাস্তে যে অন্য কথা বলে। যদিও তার মধ্যেও থাকে অন্য ধরনের রোমান্টিকতা। হিংসা-দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ পৃথিবীর মানুষকে সতর্ক করে দিতে কবি ভোলেননা। তাইতো তিনি লেখেন 'ব্যক্তিত্বে বিরোধ থাক ব্যক্তিতে নয় কভু'। এভাবেই কাব্যগ্রন্থটির 'বাঁকে বাঁকে কত কথা পড়ে থাকা স্মৃতি' বারবার পাঠককে হাজির করে অন্য এক ভাবনার জগতে। 

সেখানে ‘ইচ্ছে করছে বলতে ভালবাসি খুব’। তবে প্রেমের পথে কখনোই গোলাপ ছড়ানো থাকেনা। ‘ফুল ছিঁড়ে কাঁটার আঘাতের ভয়’ থেকে যায়। রোমান্টিক পাঠকেল কণ্ঠে আফসোস ঝরে পড়ে ‘এ হৃদয়ে বসন্ত হয়েছে খুন’।

  এভাবেই  দু লাইন, চার লাইন, ছয় লাইন, আট লাইন, বারো লাইনের ২৩ টি কবিতার মধ্যে   অনুভূতিশীল মানুষের 'ভাঙা অনুভূতির টুকরো খেলা' ধরা পড়ে। 

   আসলে জীবনের যে প্রান্তে, যে অবস্থায় আমরা থাকিনা কেন অতীত ঘটনা কখনো ভোলা যায় না- স্মৃতি যেন বারেবারে ছবি হয়ে ফেরে। ফেলে আসা দিনগুলোর প্রেম, বিরহ মানুষ কি কোনদিন ভুলতে পারবে? আসলে ভুলতে পারা এত সহজ নয় ! 

  বইটির প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছে কবির কিশোরী কন্যা রাজেশ্বরী ভট্টাচার্য্য। সেটাও কাব্যগ্রন্থটির জন্য যথেষ্ট মানানসই হয়ে উঠেছে।

 সবমিলিয়ে বলা যায়, কাব্যগ্রন্থটি কাব্যপিপাসু পাঠকের কাব্যপিপাসা মেটাতে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *