সেখ মিলন ( ভাতাড়, পূর্ব বর্ধমান) বাবা প্রতিবন্ধী।সংসারে টান। পড়াশোনা ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়ে ভাতারের সন্তোষপুর গ্রামের দুই কিশোর। প্রতিদিনের মতো এদিনও ভাতারের বলগোনা বাজারে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতে দেখা যায় ওই দুই কিশোরকে। এই দৃশ্য পুলিশ আধিকারিকের নজরে আসতেই অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। জানা গেছে, কয়েক সপ্তাহ আগে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার ওসি পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন সাব-ইন্সপেক্টর প্রসেনজিৎ দত্ত। এদিন রুটিন মাফিক বর্ধমান কাটোয়া রোডে নজরদারি চালাচ্ছিলেন তিনি। ভাতারের বলগোনা বাজারে দুই কিশোরের ভিক্ষাবৃত্তির দৃশ্যটি প্রসেনজিৎ বাবুর মনে আঘাত করে। তড়িঘড়ি তিনি ভাতারের সন্তোষপুর গ্রামে গিয়ে ওই দুই কিশোরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। দুই কিশোরকে বুকে টেনে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেন ভাতারের ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। বেশ কিছুক্ষণ ওই দুই কিশোরের সঙ্গে সময় কাটানোর পর তাদেরকে শিক্ষার পরামর্শ দেন। ভিক্ষাবৃত্তিকে দূরে সরিয়ে দুই কিশোরের পড়াশোনার দায়িত্বভার নিজের কাঁধেই তুলে দেন ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। প্রথমে দুই কিশোর পুলিশ কর্মীদের দেখার পর কান্নাকাটি শুরু করলেও পরে প্রসেনজিৎ বাবুর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে পড়াশোনা করতে রাজি হন ওই দুই কিশোর। ভিক্ষার ঢালি দূরে সরিয়ে সেই হাতে তুলে দেন বই ,খাতা, কলম, ব্যাগ সহ বিভিন্ন পড়াশোনা সামগ্রী। জানা গেছে ওই দুই কিশোরের বাবা শারীরিকভাবে অক্ষম। মা কোনরকমে কাঁথাস্টিকের কাজ করে সংসার চালান। তাই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত যাবতীয় মুদিখানা সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যান। দুই কিশোরের যাবতীয় পড়াশোনার দায়িত্বভার গ্রহণের পাশাপাশি পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন ওসি। দেখা যায়, এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য দিবারাত্রি সজাগ থাকতে হয় পুলিশ কর্মীদের। দিবারাত্রি কর্মব্যস্ততার ফাঁকে পুলিশের এই মানবিক মুখ ফুটে উঠে বারবার। এর আগেও ভাতার থানার ওসি সৈকত মন্ডলকেও আদিবাসী প্রবণ এলাকায় গিয়ে আদিবাসী শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে দেখা গেছে। ভাষা দিবসের দিন ভাতারের নবাগত ওসি, প্রসেনজিৎ দত্তকেও একই ভূমিকায় দেখা গেল। সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে পুলিশ কর্মীদের এরূপ মানবিক ভূমিকাকে প্রশংসা করেছেন স্থানীয় মানুষজন।