মোল্লা জসিমউদ্দিন,
চলতি ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এই রাজ্যের বহুচর্চিত বিধানসভার নির্বাচনী দিনক্ষণ ঘোষণা করতে চলেছে, এইরূপ সংবাদ আসছে বিভিন্ন সুত্র থেকে।পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট সব রাজনৈতিক দলের কাছে গুরত্বপূর্ণ আসন।কেননা একাধারে যেমন শাসক দল তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ বিবাদে রক্তাক্ত এই মঙ্গলকোট। ঠিক তেমনি গত পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীশুন্য মঙ্গলকোটের সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে না পারার যন্ত্রণাটাও অব্যক্ত। একদিকে রাজনৈতিক মঞ্চে ‘পিঞ্চ হিটার’ খ্যাত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডলের খাসতালুক যেমন মঙ্গলকোট। ঠিক তেমনি রাজ্যের তৃণমূলপন্থী মুসলিম সংগঠন জমিয়ত উলেমা হিন্দের রাজ্যের সর্বাধিনায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর নির্বাচনী ক্ষেত্র এই মঙ্গলকোট। অনুব্রত সিদ্দিকুল্লাহের এলাকা দখলের লড়াইয়ে মঙ্গলকোটের কুড়ির বেশি তৃনমূল কর্মী গাঁজা সহ বিভিন্ন জামিন অযোগ্য ধারায় জেলবন্দি।এমনকি তৎকালীন পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের বোর্ড মেম্বার তথা মঙ্গলকোটের আদি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা বিকাশ চৌধুরীও রাজনৈতিক বেড়াজালে জেলবন্দি রয়েছেন।এই মামলায় অবশ্য তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি অজ্ঞাতকারনে মূল অভিযুক্ত কে পাকরাও তে নীরব বলে অভিযোগ। রাজনৈতিক কারবারিদের মতে, বিভিন্ন বিধায়ক কে এই বিধ মামলায় ‘হাতের পুতুল’ করে রেখে দিয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যদিও তৃনমূলের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। একুশে বিধানসভা নির্বাচনে মঙ্গলকোটে কে তৃনমূলের প্রার্থী হতে পারেন, এই জল্পনা চলছে চরমে।এই প্রার্থীপদ পাওয়ার ময়দানে রয়েছে পাঁচের কাছাকাছি নাম।গত ২০১১ সালের অল্পভোটে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরী যেমন আছেন। আবার বর্তমান বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীও আছেন। তবে এই দুজনের মধ্যে কাউকে প্রার্থী করলে নিশ্চিত হারবে। এটি বিরোধী দলগুলি নয় তৃণমূলেরই সাধারণ কর্মীসমর্থকদের বিশ্বাস।কেননা এই দুজনেরই নিজস্ব সক্রিয় গ্রুপ রয়েছে। তাই দলীয় অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা প্রবল। তাই এই দুজনের বাইরে নুতন মুখ খুঁজছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বলে জানা গেছে। বিশস্ত সুত্রে জানা গেছে, মন্তেশ্বরের দলত্যাগী বিধায়ক সৈকত পাঁজার জায়গায় অপূর্ব চৌধুরী কে প্রার্থীপদ দিতে পারে তৃণমূল। একাধারে মন্তেশ্বর তৃনমূলের ত্রিমুখী আভ্যন্তরীণ বিবাদ মেটাতে যেমন বহিরাগত মুখ প্রয়োজন ঠিক তেমনি অপূর্ব চৌধুরীর বসতবাড়ি মন্তেশ্বর লাগোয়া কৈচর এলাকায়। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে কলকাতা সংলগ্ন কোন আসনে প্রার্থীপদ দিতে পারে তৃণমূল নেতৃত্ব। কেননা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে মঙ্গলকোটে দাঁড় করালে একাধারে অপূর্ব চৌধুরীর অনুগামীরা দলীয় অন্তর্ঘাত করবে আবার ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকির মঙ্গলকোটের অসংখ্য অনুগামী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে হারাতে বিপক্ষ দল কে ভোট দেবেন।তবে তৃণমূল নেতা অপূর্ব চৌধুরী জানিয়েছেন – ” দল যাঁকে প্রার্থী করবে, তাঁকেই মঙ্গলকোটে সর্বশক্তি দিয়ে জেতাবো”। এই দুজনের বাইরে তৃনমূলে ভাসছে আরও তিনটি নাম। ভূমিপুত্র হিসাবে মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শান্ত সরকার এবং মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মুন্সি রেজাউল হকের নাম আসছে স্থানীয় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে।স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অত্যন্ত পরিচিত এই দুটি নাম।মানুষের আপদে-বিপদে এঁরা খুব ছোটেন।হাডুডু ম্যাচ কিংবা ফুটবল টুর্নামেন্ট সব খেলাতেই পুরস্কার বিতরণীতে থাকেন। ‘দিদি কে বলো’ কিংবা ‘বঙ্গধ্বনি’ দলীয় কর্মসূচিতে দিনরাত এক করে দিয়েছেন এঁরা। মুসলিম ভোট অঙ্কে মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মুন্সি রেজাউল হক যেমন ফাক্টর তৃনমূলের কাছে।ঠিক তেমনি আবার সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শুনে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করাতে সিদ্ধহস্ত মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের চন্দন সরকার ওরফে শান্ত বাবু। আবার তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছেন – ‘ বীরভূমের হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল তাঁর পৈতৃক এলাকা নানুর পেতে কাজল সেখ কে মঙ্গলকোটে প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রাখতে পারেন। কেননা একদা অনুব্রত বিরোধী কাজল সেখ নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করে তৃনমুল কে হারাতে সিপিএম কে গত বিধানসভায় জিতিয়েছিলেন’।যদিও কাজল সেখ এহেন দলীয় অন্তর্ঘাতের কথা সর্বদা অস্বীকার করে দিয়েছেন। সম্প্রতি বীরভূম জেলা পুলিশ দুজন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী দিয়েছে নানুরের রবীনহুড খ্যাত কাজল সেখ কে। তাই কাজল সেখ কে নানুর পেতে মঙ্গলকোটে প্রার্থীপদ দিলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।