মানুষের ঠিকানা চাই

Spread the love

মানুষের ঠিকানা চাই

নীহার চক্রবর্তী (বেথুয়াডহরি, নদীয়া)

সুবিমল ভাবতো অনেকেই ওকে চেনে ।
আর চিনবেই বা না কেন ? ওর মতো গুণী মানুষ শহরে কজন আছে ? সংস্কৃতির কথা উঠলেই ওর নাম সবার আগে আসে ।
কিন্তু কয়েকদিন একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে সুবিমলের মন খুব ভেঙে গেলো ।
স্ট্যান্ডের এক রিক্সাওয়ালা একজনকে ওর ঠিকানা দিতে পারলো না ।
বরং সে তাকে বলল,’কত মানুষই তো বাস করে আমাদের শহরে ।’
কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে তার কথা শুনে মেঘভার মুখে সুবিমল নিজের পরিচয় দিতে গেলো ।

তার দুদিন পর স্টেশনের মধ্যে এক মুচি একজনের মুখে সুবিমলের নাম শুনে অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে থাকলো ।
শেষে বলল,’এমন নামে কেউ এখানে আছে নাকি ? সে থাকতে পারে । আমি জানি না ।’
হতাশ-মুখে তার কথা শুনে সুবিমল নিজেকে তুলে ধরতে মুচির দোকানের কাছে এগিয়ে গেলো ।

মন ভেঙে গেছে খুব সুবিমলের ।
মনে-মনে বলতে থাকলো,এ কেমন চেনানো আমাকে ? সাধারণই তো চেনে না আমাকে । কাদের জন্য তবে সংস্কৃতি ? এ ঠিক হচ্ছে না । সবার সাথে মেশা খুব দরকার আমার ।
শেষবার সুবিমল একেবারে কাছে দাঁড়িয়ে দেখল খুব চেনা এক চা-ওয়ালা একজনের কাছে ওর নাম শুনে তার দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকলো ।
সে তাকে ব্যঙ্গের সুরে বলল,’আমি সবাইকে চিনে বসে নেই । আমার কাছে আসতে হবে । বোঝাতে হবে নিজেকেই । তবেই না ।’

সুবিমল কিন্তু আগের মতো এগোতে চাইলো না । একরাশ লজ্জায় মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরে গেলো ।
নিজের ঘরে গিয়ে ও যখন আকাশপাতাল ভাবছে তখন সেই অচেনা লোকটা ওকে খোলা জানলা দিয়ে দেখে সহাস্যে বলল,’সেই কখন থেকে আপনাকে খুঁজছি । কিন্তু কেউ বলতে পারলো না । শেষে আপনার পাড়া বাড়ি দেখিয়ে দিলো । তাই এলাম । ভালো আছেন ?’
আরও লজ্জা নিয়ে তাকে দেখে খুব কষ্টে বিনয়ের হাসি হেসে সুবিমল তাকে বলল,’বুঝেছি । আমার অবস্থা এমনই । বাড়ির ভেতরে আসুন । ঘুমিয়ে ছিলাম এতদিন । একটু আগে জেগে গেলাম ।’

তাকেই কথা বলতে বলতে সুবিমল একসময় সখেদে বলল,’একদল মানুষ আমাকে চেনাতে চায় না । নিজেদের কাছে রেখে দিতে চায় । কিন্তু শুধু তাদের চিনে কী হবে আমার ? কিছু না । সত্যিই কিচ্ছু না । বুঝলাম কয়েকদিনে । এবার দেখি কি করা যায় ।’
সে ওর কথা না বুঝেই বুঝি অমায়িক-হেসে বলল,’আপনি কত বড় মানুষ । আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে আমি ধন্য ।’
‘আরে,ধুর.. এসব কী বলছেন ? আমি কি এসব কথা বলতে চেয়েছি আপনাকে ? আপনিও দেখছি..’
বেশ বিরক্তির সুরে বলে উঠলো সুবিমল তাকে ।

‘আমিও দেখছি মানে ?’
সহসা সে খুব আগ্রহের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো সুবিমলকে ।
কিন্তু সুবিমল উত্তর দিলো না তার কথার । খোলা জানলা দিয়ে অপলকে দেখতে থাকলো কতদিন বৃষ্টি না হওয়া গুমোট আকাশের দিকে ।
সে কথা বলতেই থাকলো । কিন্তু সুবিমলের দিক থেকে কোন উত্তর নেই ।
শেষে বাধ্য হয়ে সে একটা হাই তুলে বলল,’আজ তবে আসি ?’
তারও কোন উত্তর নেই । সুবিমল হঠাৎ হেসে উঠলো আকাশে সহসা মেঘের আনাগোনা দেখে ।
চলে গেলো সে । গেলো কিনা সেও চেয়ে দেখল না সুবিমল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *