মুখ্যমন্ত্রীর আগ্রহে তারাপীঠে একান্ন পীঠ দর্শনে ব্যয় হচ্ছে একশো কোটি টাকা

Spread the love

দেশ-বিদেশের সতীপীঠগুলি ঘুরে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

মুখ্যমন্ত্রীর আগ্রহে তারাপীঠে একান্ন পীঠ দর্শনে ব্যয় হচ্ছে একশো কোটি টাকা

         খায়রুল  আনাম

জমিজট কাটিয়ে এবার  পঞ্চপীঠের  জেলা বীরভূমের অন্যতম  পীঠস্থান তারাপীঠকে ভক্ত ও পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয়  করে গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন,  তা এবার বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে বলেই জানা যাচ্ছে।  তারাপীঠের প্রবেশ পথ জেলা বীরভূমের অন্যতম মহকুমা পৌর শহর রামপুরহাট রেল স্টেশনকে ইতিমধ্যেই রেল কর্তৃপক্ষ  তারাপীঠ মন্দিরের আদলে সাজিয়ে তুলতে কাজ শুরু করে দিয়েছে।  তারাপীঠে জন সমাগম যে ভাবে হচ্ছে এবং হোটেল, লজ-সহ অন্যান্য বাণিজ্য  কেন্দ্র গড়ে উঠছে তাতে তারাপীঠের উপরে চাপও বাড়ছে। এজন্য কয়েক দিন আগেই রাজ্যের দমকল মন্ত্রী সুজিত  বসু তারাপীঠে এসে এখানে দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়ে সমস্ত দিকগুলি পরিদর্শন  করে গিয়েছেন।  রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখানে একটি হেলিপ্যাডও তৈরী করা হয়েছে।  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারাপীঠ–রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ বা টিআরডিএ গঠন করে  ২০১৭ সালে তারাপীঠের সার্বিক উন্নয়নের জন্য  উন্নয়ন পর্ষদের জন্য অর্থও মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত  নেন যে,  তারাপীঠকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এজন্য চিলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ৩১ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়।  ওই জায়গাটি রাজ্য বন দফতরের অধীনে থাকায় এনিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায়, এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।  কিন্তু জমির সেই সমস্যা মিটিয়ে বন দফতর জমিটি তুলে দিলো তারাপীঠ–রামপুরহাট  উন্নয়ন পর্ষদের হাতে। এরফলে তারাপীঠের সার্বিক উন্নয়নে আর কোনও বাধা থাকছে না। 

     কথিত আছে যে,  বিষ্ণুচক্রে কর্তিত  সতীর দেহাংশ যে ৫১ অংশে খণ্ডিত হয় তারমধ্যে ৫ টি অংশ বীরভূম জেলায় পড়ায় বীরভূমকে পঞ্চপীঠের জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।  সেই পঞ্চপীঠের একটি পীঠস্থান তারাপীঠ। এই তারাপীঠের শ্বেত শিমুলতলায় সাধনায় বসে মা তারার ভক্ত সাধক বামাক্ষ্যাপা সিদ্ধিলাভ করায়, তারাপীঠের মা তারার সঙ্গে সাধক বামাক্ষ্যাপার নামও উচ্চারিত হয়। সেই তারাপীঠ দর্শনে আসা পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা যাতে একই সঙ্গে ৫১ পীঠ-ই দর্শন করতে পারেন, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারাপীঠকে ৫১ পীঠের নআদলে সাজাবার জন্য  প্রায় একশো কোটি টাকা অনুমোদন করলেন। এই অর্থ অনুমোদনের আগে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তারাপীঠ পরিদর্শন করে যান। তারপরই এই আর্থিক অনুমোদন মিললো।  অন্য পীঠগুলি  পাকিস্তানের করাচিতে রয়েছে  মা মহিষমর্দিনী।   বাংলাদেশের চট্টগ্রামে সতীর  ডান হাত পড়েছিলো বলে কথিত আছে। সেখানে মা পূজিতা  হন ভবানী রূপে। কাশ্মীরে সতীর গলা পড়ায় সেখানে মা মহামায়া রূপে পূজিতা হন। কৈলাস পর্বতের পাদদেশে মানস সরোবর, পাঞ্জাবের  জলন্ধর এবং ত্রিপুরা-সহ একাধিক জায়গায় সতীর কর্তিত দেহাংশ পড়ায়, সেই সমস্ত স্থানগুলিতে তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তারাপীঠে এই সমস্ত ৫১ পীঠস্থানেরই আদলে পীঠস্থান তৈরী করা হবে। এজন্য একটি বিশেষজ্ঞ  দলও গঠন করা হয়েছে।  ওই বিশেষজ্ঞ  দলের প্রতিনিধিরা দেশ-বিদেশের ওইসব পীঠস্থানগুলি পরিদর্শন করতেও শুরু করে দিয়েছেন।  এই নির্মাণ কাজ দ্রুততার সাথে শুরু করে দ্রুততার সাথেই শেষ করার জন্য নির্মাণ কাজের সাথে হিডকো-কে যুক্ত করার ভাবনাও রয়েছে। অযোধ্যায়  রামমন্দির নির্মাণ এবং উদ্বোধনের পরে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনায় প্রায় একশো কাটি টাকা ব্যয়ে তারাপীঠে   ৫১ সতীপীঠের আদলে তারাপীঠকে সাজিয়ে তোলার ভাবনা যথেষ্ট  তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে ।। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *