অনুষ্ঠিত হলো নিখিল ভারত বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনের কানপুর শাখার বাৎসরিক অনুষ্ঠান
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, কানপুর, উত্তরপ্রদেশ-:
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের কানপুরের সুরেন্দ্রনাথ সেন ডিগ্রি কলেজের সভাগারে অনুষ্ঠিত হলো নিখিল ভারত বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনের কানপুর শাখার বাৎসরিক অনুষ্ঠান। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমীর রক্ষিত। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও বৃক্ষে জল সেচনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী নীতা কর্মকারের নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীত ও নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।
মঞ্চে আহ্বান জানানো হয় প্রধান অতিথি সমীর রক্ষিত (রায়পুর শাখা), সুবক্তা অরুণ কুমার রায় (এলাহাবাদ শাখা) শ্রীমতি শেলী চট্টরাজ (রাঁচি শাখা), বরেণ সরকার (শাখা পত্রিকা সম্পাদক), কমল রায় (প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ সভাপতি) এবং বর্তমান শাখা সভাপতি তুষারকান্তি চক্রবর্তী প্রমুখকে।
সমৃদ্ধা ঘোষের সরস্বতী বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাহিত্য সভার কাজ। স্বাগত ভাষণ দেন শাখা সভাপতি তুষার কান্তি চক্রবর্তী। পরে শাখা পত্রিকার আবরণ উন্মোচন করেন সমীর রক্ষিত ও অরুণ রায়। উপস্থিত সদস্যদের হাতে পত্রিকা তুলে দেন পত্রিকার সহ সম্পাদক দিব্যেন্দু শেখর বাগ।
অনুষ্ঠানে বহির্বঙ্গে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য উপস্থিত বাঙালি সহ অন্যান্যদের কাছে কমল রায় আবেদন জানান। তার আকুল আবেদন সবার হৃদয় স্পর্শ করে।
অন্যদিকে মৃদুল ঘোষ বিশ্বাস কানপুরে বাঙালি সংস্কৃতির চর্চাকে লালন করতে ও এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে কী কী করণীয় সেই বিষয়ে তার মূল্যবান মতামত পেশ করেন। এছাড়া উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কানপুরে বাঙালির অবদান সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন ।
শেষ বক্তা হিসাবে সমীর বাবু বাংলা ভাষা চর্চা বাড়াতে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ভূমিকা কী হওয়া উচিত সেটা তুলে ধরেন।
সম্মেলনে উপস্থিত সমস্ত অতিথি ও শাখার বরিষ্ঠ সদস্যদের হাতে 'ব্রতীন্দ্র নারায়ন রায়' স্মারক তুলে দেওয়া হয়। কানপুরের তিনটি বাংলা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকদের জন্যও তুলে দেওয়া হয় স্মারক। প্রথম অধিবেশন সঞ্চালনা করেন সচিব স্নেহাংশু ঘোষ।
দ্বিতীয় অধিবেশন সঞ্চালনা করেন শ্রীমতী লীনা বোস ।
দ্বিতীয় অধিবেশনে সেন পরিবারের সন্তান শুভ্র সেন তার বক্তব্যে সুরেন্দ্রনাথ সেনের পারিবারিক ইতিহাস তুলে ধরেন। বর্তমান সেন পরিবারের সদস্যরা কানপুরে বাংলা ভাষার চর্চা বৃদ্ধির জন্য কোন ধরনের উদ্যোগ নিতে চান সেটা তুলে ধরেন। এছাড়া অন্যান্যরা বাংলা ভাষা চর্চা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য পেশ করেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট বাচিক শিল্পীরা কবিতা পাঠের আসরে কবিতা পাঠ করেন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীত শিল্পীরা।
ভারতনাট্যম পরিবেশন করেন অঙ্কিত রাও। 'নট নিক্কন' এর শিল্পীরা ব্যালের মাধ্যমে পরিবেশন করেন 'বৃদ্ধাশ্রম'। গ্লোবাল পাবলিক স্কুলের বাচ্চাদের পরিবেশিত নৃত্য সকলকে মুগ্ধ করে। 'বিশ্বাস' দম্পতি দীপক কুমার বিশ্বাস ও শ্রীমতী বাণী বিশ্বাস পরিবেশন করেন শ্রুতিনাটক 'ফুলশয্যা'। বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের শিল্পীদের পরিবেশিত নৃত্যময় গীতি আলেখ্যের রেশ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেও দীর্ঘসময় ধরে থেকে যায়।
দ্বিতীয় অধিবেশন সঞ্চালনা করেন শ্রীমতী লীনা বোস এবং সমগ্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা এবং সঞ্চালনা করেন শ্রীমতী শতাব্দী বসু এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন শ্রীমতি নীতা কর্মকার।
উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সচিব স্নেহাংশু ঘোষ বলেন, বড় মাপের এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে গিয়ে আমরা বহু মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। অনেকের অনুপস্থিতি আমাদের ব্যাথিত করেছে। আশাকরি আগামী দিনে তারা উপস্থিত থাকবেন।
প্রসঙ্গত ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত কানপুর শহরে সুরেন্দ্রনাথ সেন , অতুল প্রসাদ সেন, কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের হাত ধরে কানপুর শহরে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত। প্রথম অধিবেশন হয় কাশীতে এবং সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১৫০ টি শাখা গড়ে উঠেছে।