অনুষ্ঠিত হলো ‘যাত্রায় লোকশিক্ষা হয়’ সংস্থার ‘মিলন মেলা-২০২৪’
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছর ধরে অবলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে গ্রামীণ অপেশাদার যাত্রাদলগুলি। সেগুলি রক্ষার জন্য এক ছাতার তলায় আনার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে গড়ে ওঠে 'যাত্রায় লোকশিক্ষা হয়' সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনন্দ ব্যানার্জ্জী, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সোমনাথ প্রামাণিক ও উপদেষ্টা যাত্রার 'লিভিং লিজেন্ড' রুমা দাশগুপ্তা সহ অন্যান্য সদস্যদের সৌজন্যে সংস্থাটি প্রতি বছর আয়োজন করে চলেছে 'মিলন মেলা'।
গত ১৫ ই মার্চ সংস্থাটির উদ্যোগে কলকাতায় নলিনী গুহ সভাগৃহে আয়োজিত হয় বাৎসরিক ‘মিলন মেলা-২০২৪’. হুগলি গঙ্গাসাগর, কলকাতা, হাওড়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ থেকে অপেশাদার যাত্রা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় দেড় শতাধিক কলাকুশলী এই ‘মিলন মেলায়’ যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিতি ছিলেন যাত্রা জগতের কিংবদন্তি শিল্পী বেলা সরকার সহ জয়শ্রী মুখার্জ্জী, সোমনাথ ঘটক, কুমার অনুভব, দীপিকা, রজতাভ রায়, শ্রাবণী সরকার প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন যাত্রাপালাকার ড. তাপস কুমার, কানন কুমার মাইতি, বিমান মণ্ডল ও নিমাই নাথ প্রমুখ। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে
উপস্থিত অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক।
বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের অপেশাদার যাত্রাদলগুলিকে নিয়ে সারা বছর ধরে আয়োজন করা হয় ভ্রাম্যমাণ যাত্রা প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণকারী ৮ টি দলকে মিলন মেলার মঞ্চে সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান করাহয়। পাশাপাশি যেসব গৃহবধূরা যাত্রাকে ভালবেসে বছরের পর বছর গ্রামের অপেশাদারী যাত্রা দলে অভিনয় করে যাচ্ছেন এমন আটজন মহিলাকে 'প্রণাম তোমায় নারী' সম্মানে সম্মানিত করা হয়। উদ্যোক্তাদের আশা এরফলে বহু মহিলা গ্রাভের যাত্রাদলে অভিনয় করার জন্য উৎসাহ পাবেন।
অপেশাদার যাত্রা জগতের শিল্পীদের জন্য সংস্থাটি গত বছর থেকে 'যাত্রা গৌরব সম্মান' চালু করে। এটাই অপেশাদার যাত্রা জগতের সবচেয়ে বড় সম্মাননা। এবার এই সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন পশ্চিম বর্ধমানের বিশিষ্ট অভিনেতা তথা নির্দেশক সুবল চক্রবর্তী, হুগলির জনপ্রিয় অভিনেতা সুজিত ঘোষ ও স্বনামধন্য যাত্রা পালাকার বিমান মন্ডল। এই সম্মাননা অপেশাদার যাত্রা শিল্পীদের উৎসাহ ও প্রেরণা যোগাবে।
‘মিলন মেলা’য় বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য থেকে যেসব তথ্য আসে তার সারমর্ম হলো – মূলত অপেশাদার যাত্রা জগত থেকে উঠে আসা শিল্পীরা পরবর্তীকালে পেশাদার যাত্রা জগতের শিল্পীর চাহিদা মেটায়। অপেশাদার যাত্রা জগতের শ্রীবৃদ্ধি না ঘটলে পেশাদার যাত্রা জগত পেছিয়ে পড়বে। সুতরাং গ্রামীণ অপেশাদার যাত্রা শিল্পকে বাঁচাতেই হবে। গ্রামের অপেশাদার শিল্পীদের অভিনয়ের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অভিজ্ঞ শিল্পীদের নিয়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করতে হবে। পেশাদার ও অপেশাদার উভয় জগতের শিল্পীরা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করলে তবেই যাত্রা জগত তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
আনন্দ বাবু বললেন - আমাদের মূল লক্ষ্য হলো গ্রামীণ অপেশাদার যাত্রা শিল্পের উন্নতি ঘটানো। সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি। ধীরে ধীরে পেশাদার যাত্রা জগতের বিখ্যাত শিল্পীরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এরজন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আশাকরি সবার সহযোগিতায় গ্রামীণ যাত্রা জগত তার অতীত গৌরব ফিরে পাবে।
আনন্দ বাবুর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে সোমনাথ বাবু অতিরিক্ত সংযোজন করে বললেন - আমাদের রাজ্য সরকার দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে যেমন আর্থিক সাহায্য করে তেমনি যদি অপেশাদার গ্রামীণ যাত্রাদলগুলিকে অর্থ সাহায্য করে তাহলে এই শিল্পটি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে।