মোল্লা জসিমউদ্দিন,
সোমবার রাত এগারো টা নাগাদ ‘নিউমোনাটিস’ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন প্রাক্তন বিচারপতি অমিতাভ লালা (৭১)। কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন তিনি। রক্তের প্লেটলেট পরিমাণ অত্যন্ত কমে যাওয়ায় সম্প্রতি তিনি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে থাকার পাশাপাশি এলাহাবাদ হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি পদে ছিলেন অমিতাভ লালা।২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর বাম জমানায় গণহত্যা ‘আনন্দমার্গী’র ঘটনায় তদন্ত কমিশনের দায়িত্বে ছিলেন এই প্রাক্তন বিচারপতি। তদন্ত কমিশনের রিপোর্টও জমা দিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাগ্রহণ তিনি দেখে যেতে পারলেন না। বাম শাসনকালে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অমিতাভ লালা কে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সংবাদমাধ্যমে শিরোনামের পাশাপাশি রাজ্যরাজনীতিতে তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল সেসময়। ২০০৪ সালে কলকাতা হাইকোর্ট আসার পথে সিপিএমের মিছিলে দীর্ঘক্ষণ আটকে গিয়েছিলেন বিচারপতি অনিতাভ লালা। পরে হাইকোর্টে এসে শুনানিতে পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন – ‘কাজের দিনে মিছিল না হওয়া বাঞ্চনীয়’। কর্মচঞ্চল দিনে মিছিল বন্ধ করার প্রস্তাবনা ছিল তাতে। আর এতেই সেসময়কার শাসকদল সিপিএমের শীর্ষনেতা বিমান বসু হাইকোর্টের বিচারপতি অমিতাভ লালার এহেন আদালতের পর্যবেক্ষণ কে ‘ লালা,বাংলা ছেড়ে পালা’ বলে তীর্যক মন্তব্য করেছিলেন। পরে অবশ্য উচ্চআদালতে এইরুপ কটু মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন বিমান বাবু। ওই ঘটনার কিছু সময়কালের পর এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলী হয়ে যান বিচারপতি। বিজ্ঞানের স্নাতক শেষ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ডিগ্রি করেন প্রয়াত বিচারপতি। ১৯৭৫ সালে কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে বিচারপতি পদে স্থায়ী হন। ২০০৫ সালে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলী হন। সর্বশেষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি পদে অবসরগ্রহণ করেছিলেন। এহেন বিচারপতির প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন অল ইন্ডিয়া লিগ্যাল এড ফোরামের সম্পাদক তথা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয়দীপ মুখার্জি, বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমান সদস্য আনসার মন্ডল, কলকাতা হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক কুমার ঢনঢনিয়া প্রমুখজন।