অসীমা

Spread the love

অসীমা

নীহার চক্রবর্তী (বেথুয়াডহরি, নদীয়া)

ঠোঁটের কোণে দুষ্টু-দুষ্টু হাসি নিয়ে সেদিন রূপা বলে ওর মাকে–
‘তাহলে তো চন্দন স্যার তোমাকে কাঁপিয়ে দিলো ।’
ওর মা তখন মিষ্টি-মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়–
-সে হতেই পারে । আর প্রেমেরই কি কোন বয়স আছে ?’
সহসা রেগে ওঠে রূপা । ওর চোখমুখের ভাব দেখে অবাক হয় ওর মা অবাক ।
এবার রূপা বলে মাকে–
‘বাজে কথা বল কেন তুমি ? আমি তো মজা করছিলাম ।’
সাথে-সাথে ওর মা উত্তর দেয়–
‘প্রেম নিয়ে বাজে কথা আসে কী করে ? আর বাজে কথাই বা কেন ? চন্দন,নন্দন,স্পন্দন আরও কত প্রেম আছে । প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে যে ।’
মার কথা শুনে তখন রূপা চুপ হয়ে যায় । চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ।
ওর মা তখন স্মিত হেসে উঠোনে নেমে পড়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে নিজের দেহমনকে ভেজাতে ।
চন্দন নয় । নন্দন নয় । নয় কোন স্পন্দন । প্রবাসে বসে থাকা রূপার বাবা ওর মাকে বাঁধতে পারেনি কখনো হৃদয়-শৃঙ্খল দিয়ে । সে চায়ওনি সে । তাই চন্দনের থেকে বয়সে আরও ছোটো রূপার প্রাক্তন প্রেমিক বন্ধনের সাথে একদিন বিকালের পর আলো নিভু-নিভু বেলায় রূপার মা মুক্তি নিয়ে নিলো চিরতরে প্রেম-কামহীন সংসার থেকে ।
অনেকদূরে গিয়ে মা রূপাকে হেসে-হেসে ফোনে বলল–
‘আমাকে আর খুঁজতে চেয়ো না,মা । প্রেমের ফাঁদকে আমি অস্বীকার করতে পারিনি । তাই চলে এসেছি তোমাদের ছেড়ে । তুমি সুখে থাকো নিজের ছন্দে ।
রূপার মার নাম সুছন্দা । সমাজের সব বেছন্দকে নস্যাৎ করে দিয়ে এখন সে তরুণ বুকে মুখ ডুবিয়ে পড়ে থাকে প্রায় সারাদিন । নিজের বুকটাও দিয়েছে একেবারে খুলে । বন্ধন সেখানে প্রেম আর কামের ছন্দে দিনে-দিনে দৃঢ় করে তুলছে বেঁচে থাকার আসল মানে ।
রূপা অসহায় । বাবাকে বলেছে সব ।
ওর বাবা শুনে সরোষে বলে–
-মাগী একটা । কী করে পারে ?’
রূপা চোখের জল চেপে দিয়ে সক্রোধে বলে ওঠে–
‘বাজে কথা বল না । প্রেমের মানে আদৌ কি তুমি জানতে ?’
এ গল্প নয় । জীবনের চলার অনন্ত গতি । তাই গল্পকার নিজের সামর্থ্যের বাইরে আর এগোতে চায় না ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *