আট দফা নির্বাচন কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত ভোটগ্রহণের  স্বতন্ত্র ক্ষমতা কে পুনরায় মান্যতা দিলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস.এ বোবদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ বাংলার আট দফা নির্বাচন কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ করে দেয়। মামলাকারী আইনজীবী এম.এল শর্মা গত ১ মার্চ বাংলার ভোট  ( আট দফা)  নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে প্রশ্ন রেখে জনস্বার্থ মামলা দাখিল করেছিলেন।পাশাপাশি বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে নিষেধাজ্ঞা জারী করার পাশাপাশি সিবিআই তদন্তও দাবি রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের কাছে।মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলা দুটি খারিজ করে দেয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন – ‘ দেশের ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের উপর খুব একটা হস্তক্ষেপ করেনা আদালত’৷ মামলাকারী আইনজীবী এম.এল. শর্মা মামলা দাখিলের পিটিশনে উল্লেখ করেছিলেন – ‘দেশের পাঁচটি রাজ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পাশাপাশি কত দফায় ভোট হবে তা জানিয়েছে। বিধানসভার সম আসনে অন্যান্য রাজ্যে তিন থেকে চার দফায় ভোট হলেও পশ্চিমবাংলায় আট দফাতে কেন ভোট গ্রহণ হবে? পাশাপাশি ভারতীয় সংবিধানের ১৪ এবং ২১ নং ধারায় মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এই আট দফার ভোটে।এমন কোন আইন নেই যে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এইভাবে দীর্ঘভাবে দফায় ভোট করাবে?’ এইবিধ নানান প্রশ্ন ছিল উক্ত জনস্বার্থ মামলায়।সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল করার নির্দেশ দেন মামলাকারী আইনজীবী এম.এল.শর্মা কে। তবে এহেন নির্দেশে ইচ্ছুক নন ওই মামলাকারী আইনজীবী। তাই আট দফা নির্বাচন কে চ্যালেঞ্জ জানানো জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এই আইনজীবীর অন্য এক জনস্বার্থ মামলায় বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে সিবিআই তদন্তর দাবি এবং নিষেধাজ্ঞা জারীর দাবি ছিল।এই মামলাটিও খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এদিন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের হয়ে সওয়াল-জবাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন বর্ষীয়ান আইনজীবী হরিশ সালভে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন – ‘সাধারণত কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ভোটগ্রহণ নিয়ে সাধারণত আদালত মাথা ঘামায় না। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে গাইডলাইন বেঁধে দিতে পারে আদালত ‘। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এইরুপ এক গাইডলাইন দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের উপর। চলতি মাসের প্রথম দিকে কলকাতা  হাইকোর্ট এই নির্দেশ টি দিয়েছিল। নির্বাচনী দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করে অবাধ ভোট চেয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন এডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টপাধ্যায় মহাশয়। সেই আবেদনে ‘সাড়া’ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই জনস্বার্থ মামলাটির শুনানি চলে।সেখানে হাইকোর্ট বাংলার অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটপর্বে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের উপর আশাবাদী তা সেদিন আদেশনামায় উল্লেখ করে থাকে । সেইসাথে  গুরত্বপূর্ণ কিছু একপ্রকার ‘গাইডলাইন’ বেঁধে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সবরকম পদক্ষেপ নেবে কমিশন। তাতে আশাবাদী কলকাতা হাইকোর্ট। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার ভোট দিতে পারে,সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কড়া ভুমিকা নেবে বলে আশাবাদী কলকাতা হাইকোর্ট। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে, বাংলায় ভোট করাতে হাজার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে।ইতিমধ্যেই ১২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী বিভিন্ন জেলায় শিবির করে এলাকায় রুটমার্চও শুরু করে দিয়েছে। সম্প্রতি  নির্বাচন কমিশনের তরফে এই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল অবধি ৮ দফায় চলবে দেশের সবথেকে বড় গনতান্ত্রিক উৎসব ভোটদান পর্ব।আগামী ২ মে একুশে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার প্রাক্কালে কলকাতা হাইকোর্টের দরবারে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট চেয়ে বিচারপ্রার্থী হয়েছিলেনখোদ প্রাক্তন এডভোকেট জেনারেল সাহেব। যদিও বর্তমান এডভোকেট জেনারেল মামলাকারীর প্রাক্তন এডভোকেট জেনারেল পদ উল্লেখ করার বিরোধিতা করেছিলেন।শুধু ‘আইনজীবী’ তকমায় প্রাক্তন এজি কে এই মামলায় চেয়েছিলেন বর্তমান এজি।ঘটনা যাইহোক,    কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলাটি দাখিল করেছিলেন এই রাজ্যের প্রাক্তন এজি বিমল চট্টপাধ্যায়। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট চেয়ে তাঁর এই মামলাটি । মামলার পিটিশনে দ্রুত শুনানির আবেদন জানানো হয়েছিল।।যদিও সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে বিজেপি ঘেঁষা এক আইনজীবী বাংলার অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট চাওয়ার জন্য মামলা দাখিল করেছিলেন। নানান হিংস্বাত্মক ঘটনার নজির টেনে মামলা টি করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের ওই মামলাকারী আইনজীবী এই রাজ্যের বাসিন্দা না হওয়ায় মামলাটি খারিজ হয়েছিল। তবে  কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে প্রাক্তন এজি বিমল চট্টপাধ্যায় এই মামলায় রাজ্য সরকার এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশন কে পক্ষভুক্ত করেছিলেন।  গত বিধানসভা (২০১৬), লোকসভা (২০১৯)  সালের সারা রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন হিংস্বাত্মক ঘটনার উল্লেখ করে আমজনতা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে মামলাকারী প্রাক্তন এজির দাবি।তাই ভয়মুক্ত ভোটের দাবিতে এই জনস্বার্থ মামলাটি বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন এজি সাহেব।নির্বাচনী বিধিনিষেধ কড়াভাবে পালনের দাবি ছিল দাখিল এই মামলাটি তে।দুশো মিটারের মধ্যে দুটি রাজনৈতিক দল যাতে একসাথে সভা সমাবেশ না করতে পারে।সেই দাবিও ছিল এখানে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন বেশ কয়েক দফায় এই রাজ্যের ভোট প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছে। পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিটি ব্যক্তির তথ্য বিশদভাবে সংগ্রহ করেছে তারা।এমনকি ভোটে গাফিলতি পেলে অভিযুক্ত কে চার্জশিট দাখিল করার হুশিয়ারিও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে।কেন্দ্রীয় বাহিনী দু দফায় ১২৫ কোম্পানি এসেছে বাংলায়।তাও নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেথেকে আসছে।পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া,বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায়  স্থানীয় থানার পুলিশের সাথে রুট মার্চ চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।কেন্দ্রীয় নির্বাাচ কমিশন দুজন দুঁদে আইপিএস কে এই রাজ্যের নির্বাচনী পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে। যাদের নিয়ে এই রাজ্যের শাসক দলের এলার্জি রয়েছে বলে অভিযোগ।ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের টপ র‍্যাঙ্কের আইপিএস কে সরিয়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুলিশের প্রতি কড়া হুশিয়ারি দিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং নির্ভিকতা বিশেষত অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাতে আশাবাদী হওয়াটা নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ বেড়ে গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।পাশাপাশি মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে আট দফা নির্বাচন কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতির তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে নিষেধাজ্ঞা জারী এবং সিবিআই তদন্ত দাবি রেখে জনস্বার্থ মামলাটিও খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *