আত্ম কথা “ঝুমুর কলা সঙ্গম”

Spread the love

নিগমানন্দ ঠাকুর,

আ ত্ম ক থা

“ঝুমুর কলা সঙ্গম”

সাল ১৯২৬, দিনটা ছিল ৩ সেপ্টেম্বর । এই দিনেই আহিরীটোলায় জন্মগ্রহণ করেন আমাদের চলচ্চিত্র জগতের মহানায়ক, “মহানায়ক উত্তমকুমার” । আর তিন বছর পরেই হবে তাঁর জন্ম শতবর্ষ । শতবর্ষ ছুঁতে চলা মহানায়ককে কি আমরা যোগ্য সন্মান দিতে পেরেছি ? টালিগঞ্জ পাড়ায় একটা পূর্ণাবয় মূর্তিতে বছরে দু’বার জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যেই এখন সব কিছু সীমাবদ্ধ ।

টালিগঞ্জের মূর্তির পাশাপাশি মহানায়কের আরও একটা স্মৃতিচিহ্ন আছে সবার পরিচিত হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনের বিপরীতে । সেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াত । স্টেশনের বিপরীতেই প্রবাহমান গঙ্গা, আর গঙ্গার তীরে “উত্তম উদ্যান” । কয়েক বছর পূর্বেও মহানায়ক নামাঙ্কিত এই উদ্যানে ছিল কৃত্রিম পাহাড়, ঝর্ণা, দোলনা, রঙীন মাছ সহ ছোট্ট একটা জলাশয়, তার উপর একটা সাঁকো, আর ছিল মহানায়ক উত্তমকুমারের সুন্দর হাসি মুখের একটি ম্যুরাল । শিল্পী মলয় বসু এই ম্যুরালটি তৈরী করেন ১২৭ রকমের রঙীন পাথর ও কাঁচ দিয়ে । প্রয়াত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী কণিকা বন্দোপাধ্যায় নামাঙ্কিত সাংস্কৃতিক সংস্থা “ঝুমুর কলা সঙ্গম”-এর উদ্যোগে সুসজ্জিত এই উদ্যানে ১৯৯৭ সালের ১৬ নভেম্বর মহানায়কের ম্যুরালটির উদ্বোধন করেন এবং উদ্যানটি “উত্তম উদ্যান” নামে নামকরণ করেন তৎকালীন পূর্ব রেলের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার জয়ন্ত রায়-এর স্ত্রী ঈপ্সিতা রায় । তারপর থেকে প্রতিনিয়ত দেখাশোনা ছাড়াও প্রত্যেক বছর নিয়মিত ভাবে মহানায়কের মৃত্যু দিন (২৪ জুলাই) ও জন্মদিনে (৩ সেপ্টেম্বর) “ঝুমুর কলা সঙ্গম” সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে । সেখানে এসে মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্র, সঙ্গীত ও ক্রীড়া জগতের বহু বিশিষ্ট মানুষ, কিন্তু আজ সে সব অতীত ।

এখন ম্যুরালটি থাকলেও পাহাড়, ঝর্ণা, দোলনা কিছুই আর নেই । আছে শুধু একরাশ বেদনা ও হতাশা, আর আছে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান, ছাতুর দোকান, সেলুন । আছে ভবঘুরেদের নোংরা কাপড়, অসংখ্য মদের বোতল ও লক্ষ লক্ষ বিড়ি সিগারেটের টুকরো । এখন ছেঁড়া ত্রিপল দিয়ে ঢাকা নোংরা, দুর্গন্ধময় একটা জায়গায় পরিণত হয়েছে সেই “উত্তম উদ্যান” । বর্তমানে সেখানে উত্তমকুমারের ম্যুরালে শরীর এলিয়ে তার ক্ষতি করে বসে আড্ডা দেয় কিছু ভবঘুরে, কিছু দুষ্কৃতি । এই অবস্থাতেও এবছর ২০২৩ সালেও ২৪ জুলাই সেখানে মহানায়কের মৃত্যু দিন এবং ৩ সেপ্টেম্বর জন্মদিন পালন করা হয়েছে যথাযথ মর্যাদায় । এখনও প্রতিদিনই কিছু চলচ্চিত্র অনুরাগী যাঁরা উত্তমকুমারকে ভালোবাসেন তাঁরা হাওড়া থেকে কলকাতা যাতায়াতের পথেই মহানায়কের ভগ্নপ্রায় এই ম্যুরালে মনে মনে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান তবে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে ।

১৯৯৭ সাল থেকে মহানায়ককে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি “ঝুমুর কলা সঙ্গম” সেই সময় দাবী তোলে কলকাতা শহরের যে কোনো একটা মেট্রো স্টেশনের নামকরণ হোক মহানায়কের নামে । এই দাবী জানাতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মাননীয় লালুপ্রসাদ যাদব ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মাননীয় অধ্যক্ষ হাসিম আব্দুল হালিম সহ বহু সরকারী দপ্তরে দাবী পেশ করে “ঝুমুর কলা সঙ্গম” । এই দাবীর স্বপক্ষে এগিয়ে আসেন বহু চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । অবশেষে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই দাবী পূরণ করেন মাননীয়া মমতা বন্দোপাধ্যায় টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনটিকে “মহানায়ক উত্তমকুমার” নামে নামাঙ্কিত করে । এর জন্য “ঝুমুর কলা সঙ্গম” মাননীয়া মমতা বন্দোপাধ্যায়কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায় ।

২০০১ সাল থেকে “ঝুমুর কলা সঙ্গম” এরাজ্যে প্রথম শুরু করে মহানায়ক উত্তমকুমারের স্মরণে “উত্তম রত্ন” পুরস্কার । বিগত বছরগুলোতে এই রাজ্যের বহু চলচ্চিত্র শিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী, বাচিক শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক (“উত্তম লেখনী” পুরস্কার), সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, সমাজসেবী সহ বিভিন্ন মাধ্যমের গুণী মানুষদের হাতে “উত্তম রত্ন” পুরস্কার তুলে দিয়েছে “ঝুমুর কলা সঙ্গম” । যদিও করোনা সহ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে কয়েক বছর এই পুরস্কার প্রদান করা সম্ভব হয়নি । তবে এবছর দশজন গুণী মানুষের হাতে “উত্তম রত্ন” পুরস্কার তুলে দেওয়া হলো ।

এবছর যাঁদের হাতে আমরা “উত্তম রত্ন” পুরস্কার প্রদান করলাম তাঁরা হলেন….
“প্রচার অঙ্কন শিল্পী – গৌতম বরাট”, “অভিনেতা- সুদীপ মুখার্জী”, “অভিনেত্রী – ইন্দ্রানী দত্ত”, “সঙ্গীত পরিচালক – উপালী চট্টোপাধ্যায়”, “সঙ্গীত শিল্পী – দেবারতি দাশগুপ্ত সরকার”, “সঙ্গীত প্রশিক্ষক – অনুশীলা বসু”, “উদ্যোগপতি – প্রকাশ আগরওয়াল”, “নাট্যকর্মী – উৎসব দাস”, “সমাজসেবী – শঙ্কর দাস” এবং “সাংবাদিক – মানস বসাক” । ২ সেপ্টেম্বর শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে “উত্তম রত্ন” পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী পাপিয়া অধিকারী, সাংবাদিক-সাহিত্যিক অমিতাভ সিরাজ, সমাজসেবী দেবাশীষ সর্ববিদ্যা, অভিনেতা-সমাজসেবী শিবু দে এবং আয়োজক সংস্থার সভাপতি শিখা মিত্র ভট্টাচার্য ও সম্পাদক সমীর ভট্টাচার্য প্রমুখ ।

বিগত বছরগুলিতে যাঁদের হাতে আমরা “উত্তম রত্ন” পুরস্কার তুলে দিতে পেরেছি তাঁরা হলেন….
সুকুমার মিত্র (সঙ্গীত শিল্পী), চন্দন দাস (অভিনেতা), শক্তিপদ রাজগুরু (সাহিত্যিক), শান্তিময় বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রযোজক), সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (অভিনেত্রী), মাধবী মুখোপাধ্যায় (অভিনেত্রী), নির্মলা মিশ্র (সঙ্গীত শিল্পী), শশীভাই গাথানী (কর্ণধার, গাথানী রেকর্ডস্), ভারতী দেবী (অভিনেত্রী), চিরঞ্জিত চক্রবর্তী (অভিনেতা), জর্জ বেকার (অভিনেতা), সুপ্রকাশ চাকী (সঙ্গীত শিল্পী), লক্ষ্মীকান্ত রায় (গীতিকার), শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় (অভিনেতা), পিন্টু ভট্টাচার্য্য (সঙ্গীত শিল্পী), সবিতা বসু (অভিনেত্রী), মিস জোজো (সঙ্গীত শিল্পী), কনীনিকা ব্যানার্জী (অভিনেত্রী), ভাস্কর ব্যানার্জী (অভিনেতা), রেশমি মিত্র (চলচ্চিত্র পরিচালক), সুমিতা সান্যাল (অভিনেত্রী), শুভাশীষ মুখোপাধ্যায় (অভিনেতা), দেবলীনা দত্ত (অভিনেত্রী), ঋষি কৌশিক (অভিনেতা), সমতা দাস (অভিনেত্রী), শুভ্রজিৎ দত্ত (অভিনেতা), সুবীর ব্যানার্জী (সমাজসেবী), সজল মিত্র (অনুষ্ঠান আয়োজক), যোগেশ দত্ত (মুকাভিনেতা), অলকানন্দ রায় (নৃত্য শিল্পী), শতাব্দী রায় (অভিনেত্রী), নিমু ভৌমিক (অভিনেতা), বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী (অভিনেতা), পাপিয়া অধিকারী (অভিনেত্রী), অচীন মুখোপাধ্যায় (সঙ্গীত শিল্পী), অমিতাভ ভট্টাচার্য (অভিনেতা), বিশ্বরূপ রুদ্র (সঙ্গীত শিল্পী), শ্রীরাধা বন্দোপাধ্যায় (সঙ্গীত শিল্পী), অজিত পাণ্ডে (সঙ্গীত শিল্পী), শ্রীলেখা মিত্র (অভিনেত্রী), অরুনিমা ঘোষ (অভিনেত্রী), অশোক ভদ্র (সঙ্গীত পরিচালক), গৌতম সুস্মিত (গীতিকার), পরাণ ব্যানার্জী (অভিনেতা), শাশ্বত চ্যাটার্জী (অভিনেতা), পূর্ণিমা ঘোষ (নৃত্য শিল্পী), ব্রততী বন্দোপাধ্যায় (বাচিক শিল্পী), বনশ্রী সেনগুপ্ত (সঙ্গীত শিল্পী), অপরাজিতা আঢ্য (অভিনেত্রী), হৈমন্তী শুক্লা (সঙ্গীত শিল্পী), অনন্যা চট্টোপাধ্যায় (অভিনেত্রী), চৈতালী দাশগুপ্ত (সঞ্চালিকা), সুছন্দা ঘোষ (সঙ্গীত শিল্পী), সাহেব চট্টোপাধ্যায় (অভিনেতা ও সঙ্গীত শিল্পী), মনোময় ভট্টাচার্য্য (সঙ্গীত শিল্পী), কৃষ্ণা মজুমদার (বাচিক শিল্পী), বেলা সাধুখাঁ (সঙ্গীত শিল্পী), কিংশুক রায় (সঙ্গীত শিল্পী), রুনু দত্ত (সঙ্গীত শিল্পী), অসীমকুমার ঘোষ (সাংবাদিক, সিনে এ্যাডভান্স), সমীরণ মুখোপাধ্যায় (সাংবাদিক, গণশক্তি), সুবীর ব্যানার্জী (সাংবাদিক, দৈনিক স্টেটসম্যান), অলোকপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (সাংবাদিক, আজকাল), গুঞ্জন ঘোষ (সাংবাদিক, বর্তমান), সুমন গুপ্ত (সাংবাদিক, বর্তমান), কুনাল ঘোষ (সাংবাদিক, সংবাদ প্রতিদিন), বিপ্লবকুমার ঘোষ (সাংবাদিক, আনন্দবাজার পত্রিকা), প্রসূন আচার্য্য (সাংবাদিক, আনন্দবাজার পত্রিকা), সম্রাট চট্টোপাধ্যায় (সাংবাদিক, চ্যানেল টেন), ধ্রুব বসু (প্রাক্তন প্রেস সচিব, রাজভবন), বীরেন্দর সিং (প্রাক্তন ওসি, আর পি এফ, হাওড়া) সহ আরও বহু গুণী মানুষ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *