আনিসুর মামলায় স্থগিতাদেশ দিলো না ডিভিশন বেঞ্চ
মোল্লা জসিমউদ্দিন, ১২ মার্চ
চলতি সপ্তাহে তৃনমূল নেতা কুরবান শাহ খুনের মামলায় অভিযোগকারীদের মধ্যে অন্যতম নিহতের ভাগ্নে জহর আলি শা কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলা চালাতে চান না বলে জানিয়েছিলেন।যদিও নিহতের আরেক ভাই মামলা চালাতে ইচ্ছুক বলে জানিয়েছেন। শাসক দলের চোরা সন্ত্রাসের জন্য মামলা প্রত্যাহারের আবেদন বলে নিহতের পরিবারের একাংশ দাবি তুলেছিলেন। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে। সেখানে জেলবন্দি আনিসুর রহমানের পক্ষে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল।সেখানে এদিন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ কে বহাল রাখলো।অর্থাৎ সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশে কোন স্থগিতাদেশ জারী করলো না হাইকোর্ট। এই মামলায় আনিসুর রহমান সহ আট জন জেলবন্দি রয়েছে। চলতি বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতা হাইকোর্টে বড়সড় আইনী ধাক্কা গেল এই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। নিম্ন আদালতের রাজ্যের তরফে খুনের মামলা প্রত্যাহারে নির্দেশ কে খারিজ করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ । শুধু তাই নয় খুনের মামলায় অভিযুক্ত তৃনমূল নেতা জেল থেকে মুক্তি পেয়ে অভিনন্দনের ফুলের মালা পড়লেও পুলিশ কে দ্রুত হাতকড়া পড়ায়আনিসুর কে।বাংলার রাজনীতিতে যাবতীয় ফোকাস এখন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বিধানসভা।যে বিধানসভা কেন্দ্রে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এবার তৃণমূল প্রার্থী, আবার এই রাজ্যের অন্যতম বিরোধী দল বিজেপির প্রার্থী একদা পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মহাশয়। তাই শুভেন্দু বিরোধী আনিসুর রহমান কে ‘তুরুপের তাস’ হিসাবে চেয়েছিল শাসক শিবির বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। যাবতীয় ভোটের অঙ্কে জল ঢেলে দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। এইরুপ মনে করছে অনেকেই ।গত ২ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ আইনের উপর সাধারণ মানুষ যাতে আস্থা না হারায় সেজন্য এই ধরনের নির্দেশ টি দিলো বলে আইনজীবীদের একাংশের দাবি। এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে সরকারি আইনজীবীর নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। ডাকবাক্সের মত যাতে তাঁরা ( সরকারি আইনজীবী) ব্যবহৃত না হন, সেই হুশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে ওইদিনের আদেশনামায়। বিশেষত যে খুনের মামলায় মূল অভিযুক্তের জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছিল, সেই মামলাতেই কিভাবে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন রাখেন সরকারি আইনজীবী? তা বোধগম্য হয়নি কলকাতা হাইকোর্টের।গত ২ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে উঠেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা কুরবান শাহের খুনের মামলা।এই মামলায় নিম্ন আদালতে ( তমলুক) সরকারি আইনজীবীর আবেদনে মামলা প্রত্যাহার করে নেয় রাজ্য সরকার। গত ২০১৯ সালে নবমীর দিন খুন হয়েছিলেন কুরবান শাহ।এই খুনের মামলায় মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমান। একসময় মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমানের জামিনের কড়া বিরোধিতা করেছিল রাজ্য সরকার। অথচ সেই রাজ্য সরকার সম্প্রতি এই খুনের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করে থাকে।চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে তমলুক আদালত সরকারি আইনজীবীর আবেদনে শিলমোহর দেয়।নিম্ন আদালতের এই অর্ডার কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হন নিহতের ভাগ্নে ও তার আইনজীবী। খুনের মামলায় শুধুমাত্র সরকারি আইনজীবীর মামলা প্রত্যাহারে কি ন্যায় বিচার অধরা রয়ে যাবে? আইনের প্রতি আস্থা হারাবে সাধারণ মানুষজন।তাই কলকাতা হাইকোর্টে সুবিচারের আশায় দারস্থ হয় নিহতের পরিবার।এতে কলকাতা হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ তমলুক আদালতের গত ২৬ ফেব্রুয়ারির মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ কে খারিজ করে দিয়েছিল।রাজ্যের সরকারি আইনজীবীদের ডাকবাক্স না হওয়ার হুশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে পেশ হওয়া এই মামলার পর্যবেক্ষণে।চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাকারীদের মধ্যে নিহতের ভাগ্নে জহর আলি শা তার দায়ের করা মামলা খারিজের আবেদন জানায়। মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমানের পক্ষে আইনজীবীরা কলকাতা হাইকোর্টের সিঙেল বেঞ্চের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল পিটিশন দাখিল করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। যেখানে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সিঙেল বেঞ্চের নির্দেশ কে বহাল রাখে।অর্থাৎ কোন স্থগিতাদেশ জারী নয় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশে।