মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু ) ,
আমফানে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে ক্যাগের রিপোর্ট তলব নির্দেশিকার তিনদিনের মাথায় পুনরায় মামলা টি উঠে কলকাতা হাইকোর্টে।মূলত মামলাকারীর পিটিশনে ‘আরও তথ্যদানে’র জন্য মামলাটি শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে। সেখানে রাজ্যের পক্ষে এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত মহাশয় শুনানি পর্বে ক্যাগ তদন্তে পূনবিবেচনার আবেদন রাখেন। সেইসাথে রিপোর্ট পেশে আরও কিছুটা সময় চান রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। এডভোকেট জেনারেলের এহেন আবেদন খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানায় – ‘ রাজ্য কে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে, আর নয়। এই নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্যসরকার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে’। উল্লেখ্য, আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণটি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা বরাদ্দকৃত। তাই কেন্দ্রীয় এজেন্সি অর্থাৎ ক্যাগ কে আর্থিক অনিয়মের তদন্তে তিনমাসের মধ্যে গত মঙ্গলবার আদেশনামায় রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমফানের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলাটি উঠেছিল। সেখানে ক্ষতিপূরণে অনিয়মের তদন্তে ক্যাগ কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি আগামী তিন মাসের মধ্যেই রিপোর্ট তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। কন্ট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল ( ক্যাগ) কে তদন্তের অভিমুখ ঠিক করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ‘আমফানে ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ পেয়েছে কিনা? না পেলে কেন পাইনি? কাদের মাধ্যমে ত্রাণ বিলি করা হয়েছে? প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ না পেলে তার দায় কার? ‘ এই বিধ বিষয়গুলি কে গুরত্ব দিয়ে ক্যাগ কে তদন্তভার তুলে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে হাইকোর্ট এও জানিয়েছে যে, ক্যাগের তদন্ত চলাকালীন ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণবিলি পর্ব চলবে। ইতিমধ্যেই এই মামলায় রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের প্রধান সচিবের রিপোর্ট চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আমফান দুর্নীতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে পাঁচটি মত মামলা চলছে। সেখানে রাজ্যের আইনজীবীরা অধিকাংশ শুনানিতে গড়হাজির যেমন হয়েছিলেন। ঠিক তেমনি রাজ্যের কাছে তলব করা রিপোর্ট কিংবা হলফনামা দাখিলে ব্যাপক গড়িমসি দেখা গেছে বলে মামলাকারী আইনজীবীদের দাবি। দীর্ঘসূত্রতায় এই মামলার ক্যাগের কাছে রিপোর্ট তলব নির্দেশিকায় তদন্তে অনেকটাই গতি পেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মাস খানেক আগে, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি.বি. রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চে আমফান সম্পর্কিত এক জনস্বার্থ মামলার শুনানি ঘটেছিল। সেখানে আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি বিস্তারিত তথ্য সহ রিপোর্ট আকারে হলফনামা পেশে ৭ দিনের সময়সীমা দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।পরে এই সময়সীমা আরও কিছুটা বাড়িয়ে নেয় রাজ্য। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী মারণ ভাইরাস করোনা সংক্রমণের মধ্যেই পশ্চিমবাংলায় আমফান নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে এসেছিল।মূলত পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাজুড়ে আমফানের ভয়াবহতা ছিল বেশি। বসতবাড়ি থেকে চাষের জমি। রাস্তাঘাট – বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পূর্ণ বিপর্যয় হয়। কলকাতার মত মহানগর আমফান পরবর্তী দু সপ্তাহ জনজীবন ব্যাহত ছিল। জল থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ ছিল। যা কলকাতায় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘটেনি। এহেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য সরকারের পাশে আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করে থাকে । ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য বিডিও থেকে এসডিও অফিসে হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত আবেদন জমা দিয়েছিল। বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশ সরকারি ক্ষতিপূরণ পায়। সিংহভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে ভুয়ো আবেদনকারীদের আমফানের ক্ষতিপূরণ পায় বলে অভিযোগ উঠে। পাকা বাড়িওয়ালা ব্যক্তিরা শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের মদতে এইবিধ দুর্নীতি ঘটায় বলে দাবি। যার পরিপেক্ষিতে পূর্ব মেদনীপুরে তৃনমূলের দশক শতক নেতা দলীয়ভাবে শোকজ পেয়ে বহিস্কৃত হয়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং ব্লকে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত খায়রুল আলম সেখ নামে এক চাষি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলাটি দাখিল করেছিলেন। মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী নুর ইসলাম সেখ – শমীক বাগচি সম্প্রতি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকারের আমফানে দুর্নীতি নিয়ে নানান তথ্য তুলে ধরেছিলেন। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের পক্ষে এডভোকেট জেনারেলের কাছে আমফান নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছিল। আমফানে রাজ্য সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা কতজন ত্রাণ পেয়েছেন? সর্বমোট আবেদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত কতজন? আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ করার আদেশনামা ছিল । কলকাতা হাইকোর্টের এহেন আমফান নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করার পরেই রাজ্য প্রশাসনে এসেছিল সক্রিয়তা। সম্প্রতি রাজ্যপাল আমফান সহ নানান দুর্যোগে কেন্দ্রীয় আর্থিক অনুদান নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছিলেন রাজ্য প্রশাসনের কাছে। যা নিয়ে রাজ্য বনাম রাজভবনের ঠান্ডা লড়াইও দেখা যায়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে আমফান নিয়ে রাজ্যের বিস্তারিত রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা না পড়ায় ক্ষুব্ধ হয় ডিভিশন বেঞ্চ ।কলকাতা হাইকোর্টের তরফে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের প্রধান সচিবের সশরীরে হাজিরা তলব করা হয়েছিল রিপোর্ট পেশে গাফিলতির কারন জানতে।এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিলির অনিয়মের তদন্তে ক্যাগ কে আগামী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল। আমফানে ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ পেয়েছে কিনা? না পেলে কেন পাইনি? কাদের মাধ্যমে ত্রাণ বিলি পর্ব চলেছে? প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরন না পেলে তার দায় কার? এইবিধ নানান তথ্যসমৃদ্ধ রিপোর্ট তলবে তদন্তভার ক্যাগ কে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রায় হাজার কোটি টাকার অনিয়ম ঘটেছে আমফান পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ বন্টনে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণে অনিয়ম নিয়ে জানিয়েছিলেন – ‘ তাড়াহুড়ো করে পাঠাতে গিয়ে দু একটা ভূল হয়ে গেছে’। বিরোধী দলগুলির দাবি – ” দু – একটা ভূল বলে মুখ্যমন্ত্রী পুকুর চুরির মতন বড়সড় দুর্নীতি কে রুখতে চেয়েছিলেন। তিনমাস পর ক্যাগের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে তখন বোঝা যাবে আমফানের কোটি কোটি টাকা কিভাবে লুট করা হয়েছে সরকারি মদতে”। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আমফানে ক্যাগ তদন্তের নির্দেশিকা কে পূনবিবেচনার আবেদন করে রাজ্য। তা পত্রপাঠ করে খারিজ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়েছে রাজ্য কে।