আমি শ্রদ্ধেয় পুরুষ

Spread the love

আমি শ্রদ্ধেয় পুরুষ

সঙ্গীতা কর (কলকাতা)

শোনো নারী, সব পুরুষ লুব্ধ চোখে শরীর দেখে না
সব পুরুষ তোমার অপমান দেখে মাথা নিচু রাখে না,
মনে পড়ে ভরা রাজসভায় তোমার অপমানে
গর্জে উঠেছিলো যে অন্য কারও সহায়তা না নিয়ে,
নিরুত্তর পঞ্চপান্ডব, নিরুত্তর তোমার গোপন অনুরাগ কর্ণ, নিরুত্তর ছিলেন পিতামহ ভীষ্ম
তুমি যাঁদের আজীবন সম্মানে, ভালোবাসায় রেখেছিলে
তাঁরা সবাই নিরুত্তর থাকলেও আমি কিন্তু এগিয়ে গিয়েছিলাম
চিৎকার করে বলেছিলাম এ অন্যায়!
নারীর বস্ত্রহরণ কোনো খেলায় হারজিতের বিষয় হতে পারে না
সংখ্যা লঘিষ্ঠের অপমানে আমার প্রতিবাদ মিলিয়ে গিয়েছিলো দুরাচারীর হাস্যরসে,
মনে পড়ে তোমার, মনে পড়ে নারী সে কথা?
আমি মহাভারতের বিকর্ণ
নারীর অপমানের প্রথম প্রতিবাদী। ‌

সব পুরুষ তোমায় প্রেমে আঘাত দেয় না
তবুও তুমি মনে মনে দোষী করো সবাইকে
তোমার ছোটো ছোটো ইচ্ছা পূরণে সবার আগে এগিয়ে যেত যে, আমি সেই!
তোমাকে ভালোবেসে যে অবহেলা পেয়েছে বারবার আমি সেই
তোমার মন জুড়ে শুধুই তৃতীয় পান্ডব,
অথচ নিভৃতে যে ভালোবেসেছে তার খোঁজ রাখোনি কোনোদিন
আমি দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীম।

তুমি শুধু আমায় শত্রু ভাবো নারী
তবে একবার ভেবে দেখো আমার মতো পরম মিত্র তোমার আর কে আছে?
জগত জানে সখা রূপে পাশে থাকার আমিই উদাহরণ আমি শ্রীকৃষ্ণ।

আমি ভ্রাতৃ রূপে নিজের রাজ্য দিয়েছি বিসর্জন
তোমার জন্যই সমগ্র লঙ্কাকান্ডের আয়োজন
সোনার লঙ্কা ছাই হয়েছিলো শুধু প্রতিশোধ নিতে
ওহে নারী, আমি সেই অগ্রজ ভ্রাতা রাবণ।

আমি প্রেমের নামে সহবাস করে ছুঁড়ে ফেলে দিইনি তোমায়
বরং মর্যাদার সঙ্গে ছিনিয়ে নিতে পৃথ্বীরাজ রূপে রেখে গেছি পরিচয়।

আমি আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত চলেছি তোমার সাথে হাতে হাত রেখে
কখনও পিতা হিসেবে নিয়েছে দায়িত্ব
কখনও স্বামী হিসেবে দিয়েছি প্রেম
কখনও ভ্রাতৃরূপে দিয়েছি অবাধ স্নেহ,
আবার কখনও বা তোমার অপমানে হয়েছি মিছিলের প্রথম মুখ
নিজের প্রাণ বাজি রেখে রাজপথে বসেছি ধর্ণায়
তবে কেন এই অপবাদের বোঝা?
কেন বিষম দোষে দোষী করো আমায়??
পারলে মনে রেখো শ্রদ্ধায়
পারলে মনে রেখো শ্রদ্ধায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *