আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার বাঙালিরা মেতে উঠল দুর্গাপুজোয়

Spread the love

আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার বাঙালিরা মেতে উঠল দুর্গাপুজোয়

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

পেশাগত দিক দিয়ে কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিক, অধ্যাপক, অথবা আইটি সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত। ওরা কলকাতা থেকে প্রায় ১৬ হাজার মাইল দূরে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার ঘোরোয়াতে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালি। পেশার টানে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশ বিভুঁইয়ে বাস করলেও দেশের প্রতি, নিজ রাজ্যের প্রতি টান বা সংস্কার ওদের এতটুকু কমেনি। 

তাইতো দুর্গাপুজো এলেই মনটা কেমন যেন উদাসীন হয়ে ওঠে। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। ফিরে যেতে মন চায় নিজের জন্মভিটেতে। পেশার প্রতি দায়িত্ববোধ ও দূরত্বের জন্য ইচ্ছে থাকলেও ফেরা যায়না। বছর আটেক আগে এখানে বসবাসরত বাঙালি পরিবাররা নিজেদের মত করেই সুদূর প্রবাসে দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠে। আজও ধারাবাহিকভাবে সেটা চলে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

পুজোর জন্য অফিসে ছুটি পাওয়া যায়না বলে তিথি-নক্ষত্র মেনে এখানে দুর্গাপুজো হয়না। প্রতিবছর সপ্তাহান্তে দুর্গোৎসব পালিত হয়। এবার গত ১৪ ই অক্টোবর দু'দিন ব্যাপী দুর্গাপুজো শুরু হয়- প্রথমদিন ষষ্ঠী, সপ্তমী ও অষ্টমী এবং পরের দিন নবমী ও দশমী। 

প্রবাস হলেও পুজোয় আন্তরিকতা ও নিষ্ঠায় কোনো ঘাটতি থাকেনা। পুরোহিতের উপস্থিতিতে আনা হয় ঘট ও কলাবউ। শাড়ি পরিহিতা মহিলা ও ধুতি-পাঞ্জাবী সজ্জিত পুরুষদের দেখে বোঝা যাবেনা এটা বিদেশ। ভক্তিভরে পুজোর অঞ্জলি দেওয়া হয়। রীতি মেনে বিসর্জনের আগে সিদুর খেলা হয়। তবে এখানে ঠাকুরের মূর্তি বিসর্জন করা হয়না, পরের বছরের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হয় একটি স্টোররুমে। 

এবার একটি বিরাট স্কুলবাড়িতে পুজোর আয়োজন করা হয়। ব্যস্ততার জন্য জুলাই মাস থেকেই শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি। আট থেকে আশি সকলেই পুজোর মণ্ডপসজ্জা, ভোগরান্না, অতিধি আপ্যায়ন সহ প্রতিটি বিষয়ে হাত লাগায়।

সারাবছর পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকলেও পুজোর সময় বাচ্চাদের আনন্দ দেখলে মনে হবে তারা যেন নিজের গ্রামের বাড়িতে আছে। মণ্ডপসজ্জা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ, গান - প্রতিটিতেই ওরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। কচিকাচা, প্রবীণ থেকে নবীন, পুরুষ থেকে মহিলা প্রত্যেকে একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে। বাজনার তালে তাদের ট্রাডিশনাল বাঙালি নৃত্য দেখার মত। মুহূর্তের মধ্যে দূর হয়ে যায় কর্মক্ষেত্রের পদমর্যাদা। পুজোয় এবার প্রায় ৮০০ জন প্রবাসী বাঙালি পুজোর দু'টো দিন অংশগ্রহণ করে।

তবে প্রথম দিনের অন্যতম আকর্ষণ থাকে ওখানে বসবাসরত বাঙালির তিন বেলা একসঙ্গে ভোজন। কার্যত প্রতিবছর একই মেন্যু। 


প্রবাসী শিল্পী দেবী বললেন - দেশের চেনাজানা বৃহৎ পরিবেশে পরিচিত জনদের মধ্যে আনন্দের ফ্লেভারটা এখানে থাকেনা ঠিকই কিন্তু আমরা সবাই খুবই আনন্দ করি। সুদূর প্রবাসেও পুজোর জন্য আমরা দিন গুনতে থাকি। দেশ থেকে আত্মীয় স্বজনদের পাঠানো নতুন পোশাকের জন্য অপেক্ষা করি। পুজো শেষ, তাই মন খারাপ! আবার অপেক্ষার দিন গোনা শুরু।

পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা গবেষণারত বৈজ্ঞানিক তথা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বরূপ ঘোষ বললেন- বিদেশে পুজোর আয়োজন করা কিছুটা সমস্যার হলেও আমরা যতটা সম্ভব রীতি মেনেই পুজো করি। কর্মব্যস্ত জীবনে দুর্গাপুজোর আয়োজন আমাদের কাছে এক অন্য অনুভূতি বয়ে আনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *