শেষ পযর্ন্ত সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে সদলবলে ভরা বর্ষায় চলে এসেছি পাহাড়ে। আসবো কি আসবো না এই দোলাচালের মধ্যেও ট্রেনের টিকিট কাটা থেকে শুরু করে হোটেল বুকিং ইত্যাদির পাশাপাশি প্রতিদিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের খবর রাখার কাজগুলোও চলছিল। প্রবল বৃষ্টিতে তিস্তা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।একেকবার মনে হচ্ছে এই বর্ষায় পাহাড়ে না যাওয়াই হয়ত বা ভালো। আবার ভাবছি হাতে তো কিছুটা সময় আছেই। দেখা যাক না পরিস্থিতি কোন দিকে যায়!
আসলে শিলিগুড়ি থেকে দু ঘন্টা দূরত্বের কালিম্পঙ জেলার সাম্থার গ্রীনারি হোমস্টের আকর্ষণ এড়াতে পারছিলাম না। গতমাসেও এসেছিলাম। পাহাড়ের মাথায় এই হোমস্টের উত্তরে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ। দক্ষিণে এঁকেবেঁকে চলেছে তিস্তা নদী। অদ্ভুত শান্তির এই পরিবেশের মধ্যে আবার কয়েকটি দিন কাটানোর ইচ্ছেই জয়ী হল।
হোমস্টের কর্ণধার তন্ময় বাবু সংস্কৃতিমনস্ক রুচিশীল মানুষ। আতিথেওতায় কোনো ত্রুটি রাখেন না। ম্যানেজার প্রদীপ বাবু থেকে শুরু করে রান্না করছে দীপা তাদের ব্যবহারের কোনো তুলনা হয় না। প্রয়োজনে তন্ময় বাবুসহ তাঁর সহধর্মিনীও রন্ধনকার্যে হাত লাগাচ্ছেন। অমায়িক এই দম্পতি কে দেখে বোঝার উপায় নেই কত ধরনের ব্যবসা যে তাঁদের আছে। এখানে এসেছি এমাসের 20 তারিখে। আগামীকাল কলকাতার উদ্দেশ্য রওনা দেব। তন্ময় বাবুর ইচ্ছে আজ বিকেলের দিকে সবাই মিলে একটু গানবাজনার আসর বসাই। তন্ময় বাবু খুব সুন্দর আবৃত্তি করেন। ওনার স্ত্রী দারুণ গান গাইতে পারেন। দুজনে মিলে বেশকিছু ভিডিও করেছেন।
আজ সকালবেলায় ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ তন্ময় বাবুব উত্তেজিত কন্ঠস্বর। গৌতম বাবু বাইরে আসুন। কাঞ্চনজঙ্ঘার একটা পীক দেখা যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে ব্যালকনিতে এলাম। অপ্রত্যাশিত এবং অসাধারণ দৃশ্য। কাল প্রায় সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় দৃশ্যমানতা প্রায় নেই বললেই চলে। এরমধ্যে হঠাৎ করে সমস্ত কুয়াশা উধাও। টুকরো টুকরো সূর্যের আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘার দুটো তিনটে চূড়া দেখা যাচ্ছে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। প্রবল উত্তজনায় সদ্য কেনা মোবাইল ফোনে যতটুকু পারলাম কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ধরার চেষ্টা করলাম। এই মোবাইলে ছবি তোলায় এখনো সড়গড় হইনি। তবুও সেই ছবিই সবার সঙ্গে শেয়ার করলাম। আবার বলছি পাহাড়ের এই ভরা বর্ষায় এক টুকরো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অভিজ্ঞতা সারাজীবন মনে থাকবে।
( তন্ময় বাবুর ফোন নাম্বারটা দিয়ে দিলাম। কেউ মনে করলে এখান থেকে একবার ঘুরে যেতেই পারেন। সত্যি বলছি। খুব ভালো লাগবে। 9830067140)