খায়রুল আনাম, ২৮ মে,
ত্রাণ শিবির থেকে বাড়ি ফেরা
উত্তর–পূর্বে না ঝুঁঁকে বীরভূমকে বাঁচিয়ে দিলো ইয়াস
রোদ ঝলমলে শুক্রবারের সকাল। সারাদিন ধরে দেখতে হয়নি কালো ধোঁয়ার মতো আকাশ। আর তাতেই স্বস্তি আর এবং প্রসন্ন ভাব বীরভূম জেলার মানুষের মনে। কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে জেলা প্রশাসনও। ওড়িশার ধামারায় আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া শেষ করে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করে যে ধ্বংস–তাণ্ডব চালাবে তাতে বীরভূম জেলাও ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে না বলেই আশঙ্কা করা হয়েছিলো। কিন্তু ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার পথে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সামান্য উত্তর–পূর্বে ঝুঁঁকে না পড়ে জেলাকে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিলো বলে মনে করছে আবহাওয়া দফতর ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। বুধ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাতও হয়েছে খুবই কম। মাত্র ৩৫ মিলিমিটার। আর তারফলে জেলার নদ–নদীতে জলস্ফীতিও দেখা দেয়নি। বৃহস্পতিবার জেলার কিছু অংশে হাল্কা বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া বইলেও তার তেমন একটা প্রভাব জেলার জনজীবনে পড়েনি। ব্যতিক্রম ঘটেছে একমাত্র মুরারইয়ের পাইকর ও কুশমোড় গ্রাম এলাকায়। অন্যান্য জায়গার মতো ইয়াস আতঙ্কে বিগত কয়েক দিন থেকেই সিঁঁটিয়ে থেকেছে জেলার মানুষ। আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় তটস্থ থেকেছে জেলা প্রশাসন। ২৭ মে এবং পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী আরও দু-একদিন ইয়াস আতঙ্ক নিয়ে সতর্ক থাকার প্রস্তুতি নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু শুক্রবার ২৮ মে সকাল থেকেই রোদ ঝলমলে আকাশ দেখে স্বস্তিবোধ করে জেলা প্রশাসন। জেলার ত্রাণ শিবিরগুলিতে যে ৫৬ হাজার মানুষকে নিয়ে এসে রাখা হয়েছিলো তাঁদের অনেকেই শুক্রবার সকাল থেকে রোদ ঝলমলে আকাশ দেখে ত্রাণ শিবির ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ানোয় তাঁদের আর আটকানো হচ্ছে না প্রশাসনের পক্ষ থেকে। অনেকেই আগের রাত থেকেই ত্রাণ শিবির ছেড়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের একটা অংশ স্বীকারও করছে যে, পরিস্থিতি অনুকূল মনে হওয়ায়, যে মানুষরা ত্রাণ শিবির ছেড়ে বাড়ির পথে পা বাড়াচ্ছেন, তাঁদের আর কী করে আটকে রাখা যায় ? আর করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে ত্রাণ শিবিরে শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে মানুষকে রাখার কথা বলা হলেও, তা মানা কোনওভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না। তাই যাঁরা বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন, তাঁদের সামনে প্রতিবন্ধকতার দেওয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে না প্রশাসন। তবে এরই মধ্যে কয়েক সেকেণ্ডের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে মুরারই-২ ব্লকের পাইকর ও কুশমোড় গ্রামের শ’দুয়েক বাড়ি। গ্রামগুলিতে যে সব খড় ও টিনের চালের ছাউনির বাড়ি ছিলো, সেইসব বাড়িরই চাল উড়ে গিয়েছে। এলাকার মানুষজন বলছেন, তাঁরা ইয়াসের আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। তারই মধ্যে পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসা টর্নেডো আছড়ে পড়ে গ্রামগুলিতে। খড় এবং টিনের চালের সব বাড়িরই চাল উড়ে যায়। উপড়ে পড়ে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। অনেকেই বলছেন, উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের টর্নেডোর সাথে এখানকার ঝড়ের সাদৃশ্য রয়েছে। খবর পেয়েই প্রশাসনিক আধিকারিকরা গ্রামগুলিতে গিয়ে ত্রাণের কাজে হাত লাগান। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষের ঘড় ভেঙে তাঁরা নিরাশ্রয় হলেও, তাল গাছের মাথায় দিব্বি রয়ে গিয়েছে শিল্পী পাখি বাবুই পাখির নিজ হাতে গড়া খাসা বাসাগুলি।।
ছবি : অক্ষত তালগাছে বাবুই পাখির বাসা।