খায়রুল আনাম,
আম্ফান আতঙ্কের অভিজ্ঞতা
যশ বিপর্যয় মোকাবিলায় সতর্ক জেলা প্রশাসন
বিগত বছরের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আম্ফান আতঙ্ক এখনও ফিকে হয়ে যায়নি কৃষি প্রধান জেলা বীরভূমের মানুষের মন থেকে। তবে, বিগত বছরে আম্ফান জেলার উপরে আছড়ে না পড়ার ফলে ক্ষতির পরিমাণ তেমন একটা ছিলো না। কিন্ত এবারের প্রাকৃতিক বিপর্যয় যশ কতখানি রুদ্র রূপ নিয়ে জেলার উপরে আছড়ে পড়তে পারে বা আদৌ আছড়ে পড়বে কী না, তা সময়ই বলতে পারবে। তবে, প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের ব্যাপারে সব দিক থেকেই সতর্ক থাকতে জোর তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা ছাড়াও প্রাকৃতিক বিপর্যয় যশ অন্যত্রও আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আর সেই বার্তা পাওয়ার পরই বীরভূমের জেলাশাসক বিধানচন্দ্র রায় জেলা সদর শহর সিউড়ীতে জেলার ১৯ টি ব্লকের বিডিও, পুলিশ, দমকল, বন দফতর, বিদ্যুৎ বিভাগ-সহ অন্যান্য বিভাগের আধিকারিকদের যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে দিলেন। সেইসাথে জেলার জনবহুল এলাকা, ব্যাঙ্ক চত্বর, ডাকঘর, বাজারহাট এলাকায় স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য জনবহুল এলাকায় স্যানেটাইজার স্প্রে করার কথাও বলা হয়েছে। জেলার যে সব এলাকায়, বিশেষ করে নীচু এলাকাগুলিতে যে সব ফ্লাড সেণ্টারগুলি রয়েছে সেগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরকে। অতীতে দেখা গিয়েছে, প্রকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার উপরে গাছ ভেঙে বা উপড়ে পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক ভোগান্তি বেড়েছে। এমন কী, এরফলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় মানুষকে অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। তাই জেলাশাসকের নির্দেশ পাওয়ার পরই বিদ্যুৎ ও দমকল বাহিনী রাস্তা ও বিদ্যুতবাহী তারের উপরে থাকা গাছের ডালপালা কাটতে শুরুও করে দিয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়েে নিরববিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে অব্যাহত রাখা যায়, তার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং এবারের যশ ঘুর্ণিঝড়ের সময়ে যে হেতু জেলার নদ-নদীতে কোনও গভীর জল নেই তাই, জেলার নদ-নদী এলাকায় নৌকা প্রস্তুত রাখার কোনও প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছে জেলা প্রশাসন। জেলায় যারা বোরো ধানের চাষ করেছেন তাদের দ্রুত পাকা ধান কেটে মাঠ থেকে তুলে নিরাপদে রাখার কথা বলা হয়েছে। এবার জেলায় যে ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে, তারমধ্যে অর্ধেকের বেশী পাকা ধান চাষীরা সামলে ফেলেছেন বলে জানা যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় যশ বুধবার ২৬ মে রাজ্যের উপরে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া দফতর। আর তার আগেই সমস্ত রকমের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পন্ন করে ফেলতে চাইছে জেলা প্রশাসন ।।