একদা ‘রক্তক্ষয়ী’ মঙ্গলকোটে শান্তি ফিরছে আইসি – বিধায়কের যুগলবন্দীতে

Spread the love

একদা ‘রক্তক্ষয়ী’ মঙ্গলকোটে শান্তি ফিরছে আইসি – বিধায়কের যুগলবন্দীতে

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক ইতিহাস কমবেশি সবাই জানেন।একদা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রয়াত অজিত পাঁজার যেমন পৈতৃক ভিটা এখানে।ঠিক তেমনি সাংসদ হিসাবে দাপুটে বাম নেতা প্রয়াত নিখিলানন্দ সরের বাড়িও এখানে। এই মঙ্গলকোট নকশাল আন্দোলনে একসময় রণক্ষেত্র ছিল।প্রয়াত মাওবাদী নেতা কিষেনজীর গলাতেও উঠেছিল লালগড়ের পাশাপাশি  মঙ্গলকোটের নাম।তারপর বাম আমলেও একের পর এক নৃশংস খুন ঘটে অজয় নদের উপকূলে থাকা এই মঙ্গলকোটে। বসন্ত দত্ত,শিশির চ্যাটার্জি, গোপেশ্বর পাল, হরপ্রসাদ গোস্বামী, শিশির ঘোষ,ফাল্গুনী মুখার্জিদের মত হেভিওয়েট তৎকালীন শাসকদলের নেতা – পদাধিকারীরাও খুন হয়েছেন। আবার তৃণমূল আমলেও আজাদ মুন্সি – ডালিম সেখ- অসীম দাসরা খুন হয়েছেন। খুনের পর খুন ঘটতে থাকায় বরাবরই চোরা আতঙ্কে থাকতেন এলাকাবাসী । বোমাবাজি  থেকে গোলাগুলি ঘটতো অবিরত।সন্ধে নামলেই বিভিন্ন সড়কপথ হয়ে উঠতো জনশূন্য।  ভোট এলে তো আরও উত্তেজনাময় হয়ে উঠতো মঙ্গলকোট। বিশেষত পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী দলের লোকজনদের মারধর, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ, আর্থিক জরিমানা আদায় চলতো প্রকাশ্যে।অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ ‘ঠুটোঁ জগন্নাথ’ হয়ে থাকতো বলে অভিযোগ বিরোধীদের।তবে এবার মঙ্গলকোটবাসী  ‘অন্যরকম’ পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখলো।তারা দেখলো শাসকদলের বিধায়ক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ব্লক অফিসে আগ্রহী বিরোধী  দলের প্রার্থীদের মনোনয়নে ‘ভরসা’ যোগাচ্ছেন। আবার বিরোধী দলের কেউ আক্রান্ত হলে পুলিশ অত্যন্ত দ্রুততায় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।শাসক দলের বিক্ষুব্ধদের উপর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর লোকজন চড়াও হলে স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী যেমন দলগত কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন,ঠিক তেমনি হুমকিদাতাদের থানায় তলব করে ‘বাড়াবাড়ি’ করলে লকআপে রাখার হুশিয়ারি দিতে দেখা গেছে মঙ্গলকোট থানার আইসি পিন্টু মুখার্জি  কে।তা না হলে যে পরিস্থিতি এবার বিশেষত সদর মঙ্গলকোট অঞ্চলে ছিল তাতে খুন পাল্টা খুনের  সম্ভাবনা প্রবল ছিল। চায়ের মজলিসে বদলার হুশিয়ারি দিতে দেখা যেত অনেককেই। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে (২০১৮) বিরোধী দল তো দূর অস্ত শাসক দলের তৎকালীন বিধায়ক তথা রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী নিজ অনুগামীদের একটিও মনোনয়ন পেশ করাতে পারেননি। সেখানে এবার একতৃতীয়াংশ আসনে মনোনয়ন দাখিল করে বিজেপি – সিপিএম – জাতীয় কংগ্রেস সহ নির্দলরা।১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে লড়াই হয়।অর্ধেকের একটু কম পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ভোট হয়।জেলা পরিষদের ৩ টি আসনেই ভোট হয়।যেটা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘বিরোধীশুন্য’ ছিল মঙ্গলকোট। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পেশ, ভোটের দিন, ভোটের ফলাফল প্রকাশ পরবর্তীতে বড় ধরনের কোন হিংসার ঘটনা ঘটেনি।যেটা একদা ‘রক্তক্ষয়ী ‘ মঙ্গলকোটের শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসীর কাছে বাড়তি পাওনা। পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা নেই বললেই চলে।মঙ্গলকোট থানার পুলিশ যেমন নিজস্ব নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে হিংসাপ্রবণ এলাকায় টহলদারী বজায় রেখেছে। ঠিক তেমনি স্থানীয় বিধায়ক দলীয় অফিসে অঞ্চলের নেতাদের হিংসা রুখতে কড়া দাওয়াই দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এবার বিরোধী দলের অপেক্ষা শাসক দলের আভ্যন্তরীণ বিবাদ নিয়ে উত্তপ্তর সম্ভাবনা ছিল।বিশেষত সদর মঙ্গলকোট এবং কৈচর ২ নং অঞ্চলে যাঁরা ক্ষমতাসীন ছিলেন পঞ্চায়েতে।তাঁরা এবার দলীয় প্রতীক পাননি নির্বাচনে। তাঁদের জেলার এক কর্মকর্তার প্রতি ‘বাড়তি’ আস্থা ছিল।আস্থা এমন ছিল,শুধু নিজের অঞ্চল নয় মঙ্গলকোটের অন্যান্য অঞ্চলেও তাঁদের দলীয় প্রতীক বিলিতে হাত থাকবে বলে মনে করছিল কেউ কেউ ।তবে পরিস্থিতি ঘটলো আলাদা।তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আস্থা রাখলেন স্থানীয় বিধায়ক – ব্লক সভাপতির উপরেই।দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হলো শেষ মুহূর্তে। তা না হলে হয়তো বিক্ষুব্ধরা বিকল্প কিছু ভাবতেন!  মনোনয়ন পেশের শেষ দিন থেকেই শুরু হলো চোরা হুমকির পরিস্থিতি।  মঙ্গলকোটের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়লো বদলা – আর্থিক জরিমানা আদায়ের পরিস্থিতি। একের পর এক দলীয় অফিসে ‘রাশ’ হারাতে লাগলো বিক্ষুব্ধরা।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী দুপক্ষদের ডেকে অশান্তি রুখতে কড়া হুশিয়ারি দিলেন।এমনকি দলের শৃঙ্খলা না মানলে বহিষ্কার পর্যন্ত করার নির্দেশ তিনি দেন বলে দলীয় সুত্রে প্রকাশ। অপরদিকে যারা নিজেদের উদ্যোগে দলবল নিয়ে অন্যদের উপর চড়াও হচ্ছে।তাদের কে দ্রুত থানায় তুলে এনে ‘বাড়াবাড়ি’ করলে লকআপে রাখার হুশিয়ারি দিতে দেখা যায় আইসি পিন্টু মুখার্জি কে।এইরকম নানান তথ্য উঠে আসে বিভিন্ন সুত্রে।  একাধারে দলীয়ভাবে স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী যদি কড়া নির্দেশ না দিতেন, অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে মঙ্গলকোট থানার আইসি পিন্টু মুখার্জি হুমকিদাতাদের ধরপাকড় করে হুশিয়ারি যদি না দিতেন।তাহলে নিশ্চিত ভাবে মঙ্গলকোট ফিরতো সেই হানাহানিতেই।এবার কোন বোমার আওয়াজ নেই, নেই গোলাগুলি। চোরা হুমকির স্রোত অনেকটাই থমকে।আগস্ট মাসেই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন। বোর্ড গঠন পরবর্তীতে গন্ডগোলের আশংকা করছেন কেউ কেউ। তবে মঙ্গলকোট আইসি পিন্টু মুখার্জি জানান -”  আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং হবে”। স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বলেন -” এলাকার প্রায় বাসিন্দা আমাদের উপর আস্থা রাখেন, তাই তাদের মঙ্গলে আমরা অমঙ্গল রুখবই”। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *