মোল্লা জসিমউদ্দিন,
গত শুক্রবার বর্ধমান জেলা আদালতে এসিজেম এজলাসে জেল হেফাজত থেকে পেশ করা হয় তৃণমূলের বিতর্কিত নেতা নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় মহাশয় কে। এই মামলায় পুলিশের আবেদনের ভিক্তিতে ধৃতের চারদিনের পুলিশি হেফাজত হয়। তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশি হেফাজত প্রয়োজন বলে আদালত কে জানিয়েছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। তবে তা গ্রেপ্তারের পরবর্তী প্রথম শুনানিতে পুলিশ কেন করেনি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধৃতের আইনজীবী কমল দত্ত মহাশ। উল্লেখ্য গত বুধবার আউশগ্রাম থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল গুসকারা পুরসভার প্রাক্তন তৃনমূল কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় ওরফে নিতাই বাবু কে। কে এই নিতাই? যার অডিও এবং ভিডিও নিয়ে তোলপাড় গোটা বীরভূম – পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ রাজ্যরাজনীতি! ১৯৯৮ সালে তৃনমূল দল গঠনের সময় পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দলীয় রাজ্য সভাপতি । সেসময় সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বীরভূমের দায়িত্বে৷ সুশোভন বাবুর শারীরিক অসুস্থতায় বীরভূমের বোলপুর মহকুমার সাময়িক দায়িত্ব পেয়েছিলেন গুসকারা পুরসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেতা নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় ওরফে নিতাই বাবু৷ অনুব্রত মন্ডল তখন কেস্টদা হয়ে উঠেননি৷ একজন সাধারণ দলীয় কর্মীর মতনই ছিলেন বীরভূমের রাজনীতিতে। তাই দলীয় পর্যবেক্ষক নিতাই তখন অনুব্রতের গুরুদেব তুল্য৷ ২০০০ সালের পর নানুরের সুচপুরে গনহত্যা ঘটনায় রাজনৈতিক মাইলেজ পেয়ে যান অনুব্রত মন্ডল। এই ছিল অনুব্রত মন্ডল এবং নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়ের সেসময়কার রাজনৈতিক অবস্থান। সময়ের ব্যবধানে নানুরের হাটসেরিন্ডির বাসিন্দা অনুব্রত মন্ডল এখন রাজ্য রাজনীতিতে হেভিওয়েট ‘পিঞ্চহিটার’ নেতা। তর্কবিতর্কে সংবাদ শিরোনামে সর্বদা থাকেন তিনি। অপরদিকে আউশগ্রামের ব্যবসায়ী নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক পরিমন্ডল পুরসভা কেন্দ্রিকেই আটকে থাকেন। সম্প্রতি বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় তৃণমূল নেতা নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় বয়সজনিত কারণ দেখিয়ে দলত্যাগের ঘোষণা করেন। তবে এটি ছিল ভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্ক। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চারবারের তৃনমূল কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। তবে কখনোই পুরপ্রধান কিংবা সহকারী পুর প্রধান হওয়ার সুযোগ ঘটেনি। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গুসকারা পুরসভার যাবতীয় টেন্ডারের কাজে অলিখিতভাবে দেখতো ‘রায় – চ্যাটার্জি’ জুটি। বাৎসরিক কুড়ি কোটি টাকার বেশি টেন্ডার চলে থাকে এই পুরসভায় । যে পুরপ্রধান এই পুরসভার দায়িত্ব নেওয়ার আগে এক আলুর আড়তে হিসেবরক্ষকের কাজ করে মাসিক ৩ হাজার মাইনে পেত। সেই পুরপ্রধান রাজপ্রসাদ তুল্য বাড়ি গড়ে নদীয়ায় বেশ কয়েকটি ফ্লাট নিয়েছেন বলে এলাকায় দাবি।পুরসভার সংশ্লিষ্ট ঠিকেদারদের একাংশের দাবি – ‘রায় – চ্যাটার্জি জুটি কে ১৫% কাটমানি না দিলে কাজের বরাত মিলতো না ‘৷ এই কাটমানির টাকা বোলপুরের এক জাঁদরেল নেতার বাড়িতে পৌঁছে দিতে হত। তা নাহলে দলীয় পদ কিংবা প্রশাসনিক পদ থেকে সরতে বেশি সময় লাগতো না বলে বিশেষ সুত্রে প্রকাশ । যেমন অতি সম্প্রতি গুসকারা পুরসভার প্রশাসক মন্ডলী থেকে বাদ পড়েছেন খোদ প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান। কলকাতা থেকে কাটোয়া সবজায়গায় পুর প্রশাসক মন্ডলীর শীর্ষে রয়েছেন প্রাক্তন মেয়র / চেয়ারম্যানরা। ২০১৮ সালের পর থেকে পুরভোট না হওয়ায় এই পুরসভাটি প্রশাসনিক আধিকারিকরা চালাতেন। গত সপ্তাহে দলের প্রাক্তন তিন কাউন্সিলরদের গুসকারা পুরসভার প্রশাসক মন্ডলীতে বসানো হয়। এরপরই ঘটে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্ফোরণ! ফেসবুকে পোস্ট করা এক অডিও ক্লিপিংসে নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় নাকি অনুব্রত মন্ডল কে গুলি করে খুন করার হুমকি দেন। কেন এই হুমকি? নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়ের দাবি – ‘অনুব্রত মন্ডলের স্ত্রীর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য তিনি নগদ কুড়ি লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন’। সেই টাকার তাগাদায় গেলে সেই টাকা নাকি অনুব্রত বাবু দিতে অস্বীকার করেন। টাকা লেনদেনের সমস্ত তথ্য প্রমাণ নাকি নিতাই বাবুর কাছে আছে? তবে বিতর্ক যতই ঘটুক স্থানীয় রাজনীতি মহল জানাচ্ছে – ‘একাধারে গুসকারা পুরসভার প্রশাসক মন্ডলীতে স্থান না পাওয়ার জন্য এহেন ব্লাকমেলিং করছেন নিতাই বাবু’। আরেক মহল জানাচ্ছে – ‘ দক্ষিণবঙ্গের হেভিওয়েট শাসক দলের নেতা কে অডিও হুমকি পোস্ট করে বিজেপির আশীর্বাদ চাইছেন নিতাই। যাতে আগামী বিধান সভার ভোটে আউশগ্রাম কিংবা মঙ্গলকোটে গেরুয়া প্রার্থীপদ পাওয়া যায়’। অঙ্ক যেমনই হোক না কেন নিতাই বাবুর বিরুদ্ধে লুটের টাকা রাখার অভিযোগ থেকে দলীয় প্রতীক জালিয়াতি সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়। এমনকি জেল হেফাজতে থাকতেও হয়েছে। গত বুধবার বর্ধমান জেলা আদালতে এসিজেম এজলাসে পেশ করা হয়েছিল এই বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতা কে। তিনদনের জেল হেফাজত হয়েছে। শুক্রবার পুনরায় পেশ করা হয় এই নেতা কে। যেখানে চারদিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে। নগদ কুড়ি লক্ষ টাকা কোথায় পেলেন নিতাই বাবু? কিভাবে বোলপুরের জাঁদরেল নেতার বাড়িতে পৌছালেন তিনি। অডিও গুলি আসল কিনা তার জন্য কন্ঠস্বর পরীক্ষা, দুই নেতার মোবাইল কললিস্ট থেকে লোকেশন ট্র্যাকিং, প্রভৃতি বিষয় গুলি খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বলে জানা গেছে।