এসএসসির ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগে বৈধতা দিয়ে মামলাকারীদের পিটিশন খারিজ
মোল্লা জসিমউদ্দিন
তৃনমূল আমলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে মামলার পাহাড় গড়ে উঠেছিল, তা তাসের ঘরের মতন ভেঙ্গে পড়লো এদিন। উচ্চ প্রাথমিকে ( টেট) দীর্ঘ আইনী জটিলতা থাকলেও এসএসসির শিক্ষক নিয়োগে শিলমোহর দিলো কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গেল বেঞ্চ। বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে এসএসসির ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ কে বৈধতা জানিয়ে হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীদের মামলা খারিজ করলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। ইতিপূর্বে দাখিল হওয়া হলফনামায় এসএসসি ‘কম্বাইন্ড মেরিট লিস্ট’ নিয়ে যে যুক্তি দেখিয়েছিল অর্থাৎ এই মেরিট লিস্ট চুড়ান্ত নিয়োগের তালিকা নয়।তা মেনে নিলো কলকাতা হাইকোর্ট। সেইসাথে এদিনের আদেশনামায় যে গুরত্বপূর্ণ নির্দেশ টি দেওয়া হয়েছে সেটি হলো – ২০১৩ সালের পর এসএসসি ৩০ হাজার মত শিক্ষক নিয়োগ করেছে। তা আইনীভাবে বৈধ বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মামলাকারীদের পক্ষে ক্যাগের যে কিছুটা অস্বচ্ছতার রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছিল তা খারিজ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। যদিও মামলাকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় – শামীম আহমেদরা জানিয়েছেন – ” কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে দ্রুত আপিল করা হবে “। উল্লেখ্য, এই হাজারের বেশি মামলা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পুনরায় কলকাতা হাইকোর্টে শুনানির জন্য এসেছিল। দীর্ঘ ৭ বছর পর এসএসসির এহেন নিয়োগে হাজারের বেশি মামলায় বেকায়দায় ছিল রাজ্য সরকার। তৃনমুল সরকারের আমলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া একপ্রকার থমকে ছিল।একাধারে টেট পরীক্ষার্থীরা, অন্যদিকে মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষার্থীরা, তাদের নিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন বা আছেন অনেকেই। তবে এসএসসির ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগে বৈধতা জানিয়ে হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীদের মামলা খারিজ করার হাইকোর্টের নির্দেশ অনেকখানি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি বাড়ালো বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আদালত সুত্রে প্রকাশ, ২০১১ সালে ২৯ ডিসেম্বর ‘১২ তম রিজিওনাল লেভেল সিলেকশন টেস্ট ‘ পরীক্ষার নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারী হয়ে থাকে। ২০১২ সালে ২৯ জুলাই লিখিত পরীক্ষা ঘটে রাজ্য জুড়ে। ২০১৩ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর এসএসসির পক্ষে ৩৬,১৪০ জনের কম্বাইন্ড মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হয়। ৩০ হাজার এদের মধ্যে নিয়োগ হয়৷ বাকি ৬,১৪০ জন দ্রুত নিয়োগের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দাখিল হয়। প্রথম প্রথম মামলার সংখ্যা দশক শতক হলেও পরে সেটি হাজারের গন্ডি অতিক্রম করে থাকে। বিকাশ ভবন থেকে এসএসসি ভবন প্রতিটি জায়গায় এই নিয়োগে দুর্নীতি অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ – মিছিল সংগঠিত হয়৷ সিপিএম এবং জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের দেখা যায় এইবিধ আন্দোলনে।মামলাকারীদের দাবি – কম্বাইন্ড মেরিট লিস্ট তে থাকা বাকিদের প্রত্যেকেরই চাকরি দিতে হবে। পাপাশাপাশি তারা ক্যাগের রিপোর্ট কে নিজেদের দাবির সমর্থনে আদালতে পেশ করে। তখন এসএসসি কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালত কে জানায় – ‘ কম্বাইন্ড মেরিট লিস্ট চুড়ান্ত নিয়োগের তালিকা নয় ‘। বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গেল বেঞ্চে এসএসসির এই পেশ হওয়া হলফনামা কে বৈধতা জানিয়ে হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীদের দায়ের করা মামলা খারিজ করলো৷ পাশাপাশি এসএসসি মামলা চলাকালীন যে ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করেছিল। তাও বৈধতা দিলো কলকাতা হাইকোর্টের এই সিঙ্গেল বেঞ্চ। এসএসসি কলকাতা হাইকোর্টের এহেন নির্দেশে দ্রুত নিয়োগের বাকি প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় বলে জানা গেছে। যদিও মামলাকারীদের আইনজীবীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।