করোনা আতঙ্কের মধ্যে গুজবে জেরবার বিরাটিবাসী
সুবল সাহা,
পিন্টু মাইতি,
উত্তর দমদমে কোভিড আক্রান্তের নাম ও পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে বিরক্ত উত্তর দমদম পৌরসভার প্রশাসনিক বোর্ড। গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া মারফত বিরাটি অঞ্চলের বেশ কিছু ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকদের কোভিড আক্রান্তের অসত্য খবর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষ করে বিরাটি স্টেশন সংলগ্ন বাজারের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের নিয়ে কোভিড আক্রান্তে মৃত্যুর ভুয়ো খবরে জল্পনা ও আতঙ্ক দুইই গ্রাস করেছে এলাকাবাসীদের।
মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও বিরাটি অঞ্চলে কয়েকজনের করোনা আক্রান্তের ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্থানীয় প্রশাসন । জনবহুল বাজার এলাকায় করোনা সংক্রমণ প্রশমণে বিরাটি পশ্চিম আঞ্চলিক ব্যবসায়ী সমিতির আবেদনক্রমে তাদের অধীনস্থ সমস্ত দোকান ও মার্কেট আগামী ২৯ জুন সোমবার থেকে ৫ জুলাই রবিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার ব্যাপারে উত্তর দমদম পৌরসভার পক্ষ থেকে অনুমতি মিলেছে বলে জানা গেছে। খবরে প্রকাশ বিরাটি স্টেশন সংলগ্ন এম.বি.রোড বরাবর মঙ্গলা সুইটস অবধি এবং স্বামী বিবেকানন্দ রোডের একাংশ ও গোপাল জিউ মন্দির রোড পার্শ্বস্হ সমস্ত দোকান ও মার্কেট বন্ধ থাকলেও স্যানিটাইজেশন করা হবে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান এই বন্ধের আওতার বাইরে থাকবে। উক্ত ব্যবসায়ী সমিতি ছাড়া পৌর যদুবাবুর বাজার এবং গোপাল জিউ বাজার কমিটি তাদের অধীনস্থ বাজারগুলিতে নিয়মিত স্যানিটাইজেশনের প্রয়োজনে সাময়িক বন্ধ রাখতে রাজি বলে জানিয়েছে । দুই কমিটির সম্পাদক জানান, এ ব্যাপারে পৌরসভার সাহায্য চাওয়া হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতারা যাতে বাজার করতে পারেন, সে বিষয়েও সতর্ক ও সচেতনতার কাজ তারা করবেন। যদিও পুরাতন বাজারের শ্রীগুরু সবজি মার্কেট আপাতত ৩১ জুলাই পর্যন্ত বেলা ১১টা অবধি বাজার খুলে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। স্টেশনের পূর্ব পাড়ের দোকান-বাজার বন্ধের বিষয়ে কোন খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি বিশেষে প্রশাসন জনগণের কথা মাথায় রেখে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
তবে একটি প্রাইভেট নার্সিং হোম-এর পরিচালক ডাক্তার-দম্পতিকে নিয়ে গুজব রটানোয় বিষয়টি আরও বেশি চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে লোকমুখে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি ভেসে বেড়াচ্ছে যে, উক্ত নার্সিংহোমের ডাক্তার দম্পতি কোভিড আক্রান্ত। এমনকি বেশ কিছু ব্যবসায়ীর নাম এর মধ্যে জড়িয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ আরো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
লকডাউনের বিভিন্ন পর্যায়ে কোভিড রোগীদের অনেকেই সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার পর কনটেইনমেন্ট জোনগুলিকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে সাধারণ মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। আতঙ্ক ও আক্রান্তের মধ্যেও চিকিৎসকেরা যখন রোগীদের পরিষেবা দিয়ে চলেছেন, সেই পরিস্থিতিতে গুজব ছড়ানোয় উক্ত ডাক্তার-দম্পতি রীতিমত বিরক্ত। এমনকি উত্তর দমদম পৌরসভার বর্তমান প্রশাসনিক মন্ডলীর প্রধান সুবোধ চক্রবর্তীও সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে চলেছেন।
নার্সিং হোমের চিকিৎসক প্রধান বাধ্য হয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তাঁদের সুস্থতা থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও করোনা আক্রান্তদের সুস্থতায় ফেরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অপপ্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলতে চাইছে, যা গর্হিত অপরাধ। এ বিষয়ে তিনি নিমতা থানার আধিকারিক ও পৌরসভার প্রধানকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেছেন বলে জানান।
সুবোধ চক্রবর্তী বলেন, করোনা আক্রান্তদের নাম ও পরিচয় নিয়ে মিথ্যা প্রচার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সোস্যাল মিডিয়াতে আক্রান্তের নাম ব্যবহার না করে সচেতনতার বার্তা দেওয়ার জন্য তিনি সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন ।