কাকতালীয়,
অপূর্ব চক্রবর্তী,
হার্টের ছোট্ট একটা অপারেশনের জন্য ব্যাঙ্গালোর যেতে হবে,তাই সকালেই এয়ারপোর্টে চলে এলাম। আমার ফ্লাইট নটা পাঁচে, এখনো ঢের সময় বাকি।কাউন্টারে এক কাপ কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছি, হঠাৎ চোখ গেল কিছুটা দূরের একটা চেয়ারে। মিলি না,হ্যাঁ মিলিই তো। বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ডটা ধড়াস করে উঠলো।সেকেন্ডের মধ্যে মনটা চলে গেল পঁয়ত্রিশ বছর আগের সময়ে। মিলির সাথে শেষ দেখা আজ থেকে প্রায় পয়ত্রিশ বছর আগে ।না ওর বিয়ের পর আর দেখা হয়নি আমাদের। অথচ আমরা চার চারটে বছর একে অপরকে ভালোবেসেছি।হঠাৎ একদিন শুনলাম সৌমিলি নাকি কোন এক বড় চাকুরীজীবী ছেলেকে বিয়ে করে চলে গেছে।
পঁয়ত্রিশ বছর আগের প্রত্যেকটা মুহূর্তকে যেন দেখতে পাচ্ছি এক হাই স্পিড ফ্লিমে।আজ আমার উত্তর টা চাইবো।কেন সেদিন…
পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতে দেখলাম, না, মিলি নয়, আঠাশ-ঊনত্রিশ বছরের একটি মেয়ে বসে বসে মোবাইল ঘাঁটছে।আশ্চর্য এত মিল হয়?
কাছে গিয়ে একটু আলাপ করার চেষ্টা করতেই মেয়েটি বললো-
- বসুন না।না,মানে আপনাকে চেনা একজন মানুষ মনে করেছিলাম।
- মেয়েটি এবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।আমার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।তাই জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাবেন?
-আমি দিল্লি যাবো।আপনি?
-আমি ব্যাঙ্গালোর।
-তাই? আপনি আগে গেছেন?
-না। আমি ওখানে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি।এই প্রথম।
-ও, আচ্ছা,একটা কথা বলবো?আপনি কি দিল্লি যাতায়াত করেন?
-না, কেন? আপনাকে আমি দেখেছি মনে হয় আগে। আমরা দিল্লি তে আছি বহুদিন তাই…
-না না, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
-তা হবে, তবু…আচ্ছা আপনি কলকাতাতেই থাকেন?
-না,আমি থাকি বর্ধমান থেকে আরো চল্লিশ কিলোমিটার দূরে। ও আপনিতো আবার বর্ধমান চিনবেন না।
-মেয়েটি হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর বললো। হ্যাঁ আমি জানি।আপনি গুসকরা চেনেন?
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা।নীরবে হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ি। সময় শেষ, এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে এবার প্লেনে ওঠার জন্য যেতে হবে মেয়েটিকে। ও উঠে পড়লো যাওয়ার সময় বললো- - আপনাকে আগে না দেখলেও আমার ধারণা, আপনি সম্ভবত অর্ক ব্যানার্জী।
আমি চমকে ওর দিকে তাকালাম,ও তখন অনেকটা এগিয়ে গেছে সেখান থেকেই চিৎকার করে বললো- - আমার মায়ের নাম সৌমিলি ভট্টাচার্য। মায়ের এলবামে আমি আপনাকে দেখেছি। আমি চট করে উঠে দাঁড়ালাম, মেয়েটি তখন অনেক দূরে চলে গেছে।