কালী রূপেন

Spread the love

কালী রূপেন

নার্গিস পারভীন (বর্ধমান)

ছেলেটা বেশ জোরেই আর্তনাদ করে বলে উঠেছিল
আমার হৃদয়টা এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় কেন জানো
—যখন দেখি কবিতার চোখে জল
দুর্বলতায় হাওয়ার সাথে দোলে ওর শীর্ণ দেহটা,
আমার হৃদয়টা ভেঙে টুকরো হয়ে যায়–”
হতবাক হয়ে শুনছিলাম ওর গোঙানি মিশ্রিত কথাগুলো,
তখনো থেমে যায়নি ছেলেটা
শুধু সেকেন্ডের অবসর নিয়ে বলে চলেছিল
—ওর শরীরের ক্ষয়
ওর ভাঙ্গা মনের ক্লান্তি
ওর দৃঢ় না হওয়ার অপারগতা
আমাদের দেওয়া তর্জনী উত্তোলনের সাইরেন
আমাদের দেওয়া অপথ্য
থেমে যাওয়ার কাঁটাতার, বিভাজনের বৈভব
পারলৌকিক স্থিতিশীল নৈতিকতা…..”

শুনছিলাম ছেলেটির কথাগুলো বিষ্ময়ে
ও বলেই চলেছিল
—”কবিতার পায়ে পরানো শৃংখলে
কবিতা যেন পরম সংসারী– প্রতিব্রতা
হিতাকাঙ্খী তেমন নেই বললেই চলে,
দাবিয়ে রাখার অসংযমে
কবিতা পাইন গাছের নীরবতার মতোই নিয়েছে মৌনব্রত
ধুঁকে ধুঁকে শ্বাস তার বেঁচে থাকার উপমায়।
অথচ কবিতা, হৃদয়ে সরগরম প্রেম নিয়ে
উথাল-পাথাল ঢেউ নিয়ে
আছড়ে পড়ার গর্জন নিয়ে
লোকালয় ভাসিয়ে দেবার স্পর্ধা রাখে,
হাজার অনিয়মের অভিশাপ দিয়ে, পারে
নিমিষে সব ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে,
কবিতা চাইলে পারে পুরুষত্ব ছিনিয়ে নিতে হাজারের,
কোন বাকবিতণ্ডা ছাড়াই
প্রতিহিংসা ছাড়াই
সহজাত প্রবৃত্তি পরিহার করে।
চাইলেই কুণ্ডলী বানাতে পারে
সংখ্যাতীত মেরুদন্ড,
চাইলে দৃষ্টির আগুনে ঝলসে দিতে পারে
সভ্যতার বর্বরতা, অনিয়ম, যন্ত্রনা,
তবু কবিতা এখনো নিশ্চুপ
অবিমৃষ্য হয়ে ওঠেনি এখনো তার ধৈর্য
ভাঙেনি তাৎক্ষণিক উদ্যোগী বীর্য!
শাসন বাঁধন আর বর্ধিত তিরস্কারে
অনেক করেছে যারা
আর কতটা করবে ভন্ডামি?”

ভিতরে ভিতরে চলকে উঠছিল রক্ত আমার,
বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছিল শিরা থেকে উপশিরা উপশিরা থেকে স্নায়ুতন্ত্র
আনতমুখে শুনে যাচ্ছিলাম ওর কথাগুলো
সত্যিই তো–
ছেলেটির কণ্ঠস্বর এবার বেশ ভারী এবং আশ্বাসের হয়ে উঠলো
— “দেখো, কবিতা আবার উঠে দাঁড়াবে
ছিন্নমস্তা কালী রূপে নিয়মের খড়্গ হাতে,
চোখে জ্বলবে তেজোদীপ্ত আগুন
পায়ে বাজবে সর্বত্রাসী ঘুঙুর,
ধারণ করবে নীলাভ কালো রং,
সীমিত লজ্জা বস্ত্রে– কর্কশ কণ্ঠে পাঠ করবে
অসুর নিধনের ধারণাতীত মন্ত্র;
কাপুরুষের মুন্ডচ্ছেদ করতে করতে
প্রকৃতির বুকে দাঁড়িয়ে ওড়াবে বিজয়ের উত্তরীয়, নিশান
কবিতা আসবে এভাবেই রণ চন্ডী রূপে
অবহেলা আর অনাদরের মুন্ডচ্ছেদ করতে করতে
ছিন্নমস্তা অসুর বিনাশী কালী রূপে
আর আকাশে বাতাসে উচ্চারিত হতে থাকবে
প্রণাম মন্ত্র–
“জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রা কালী কপালিনী দুর্গা শিবা সমাধ্যাতীসাহা সুধা নমস্তুতে”–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *