পিছিয়ে থেকে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে খোঁচা সাংসদ শতাব্দীর
খায়রুল আনাম
বোলপুর, ৭ জানুয়ারি–এই মুহূর্তে রাজ্য-রাজনীতি থেকে শুরু করে সর্বভারতীয় রাজনীতির চর্চ্চায় চলে এসেছে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তদন্তে গিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরে হামলার বিষয়টি। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনেরা তাদের মতামতও ব্যক্ত করেছেন। আর এই হামলার ঘটনাকে বোকামি এবং এরসঙ্গে দলের কোনও দায় নেই বলে মন্তব্য করলেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসের শতাব্দী রায়। নিজের নির্বাচন ক্ষেত্র রামপুরহাটের বনহাট অঞ্চলের হরিনাথপুর গ্রামে দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে সাংসদ শতাব্দী রায় গেলে সেখানে তাঁকে সন্দেশখালি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা বোকামি। আর এই বোকামিতে খারাপই হচ্ছে। এ বিষয়ে সাংসদ নিজের অনুভূতির দিক থেকে বলেন, এরফলে বিরোধীরা যেমন বলতে সুযোগ পাচ্ছে তেমনি, সংবাদমাধ্যমও প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছে। সেইসাথে সাংসদ শতাব্দী রায় সন্দেশখালির ঘটনার দায় তৃণমূল কংগ্রেসের নয় বলে দাবি করে বলেন, আমি কোনওভাবেই আঘাত করা সমর্থন করি না এবং দলও নিশ্চয় সেটাকে সমর্থন করে না। দল ওই লোকগুলোকে এটা করতে বলেনি। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে এটা করে থাকেন তাহলে, সে দায়িত্ব তাঁরই। এতে দলের কোনও দায়িত্ব নেই। সেইসাথে তিনি বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছে এবং মানুষ এতে বিরক্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন। বিজেপি সন্দেশখালির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের যে দাবি তুলেছে তাকে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে প্রশ্ন তোলেন যে, রাজ্যে বিগত দিনে একশোটা জায়গায় ইডি হানা দিয়েছে। তাতে একটা জায়গায় এরকম প্রতিক্রিয়া হলে তাতে পুরো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, পুরো ব্যবস্থাটা খারাপ এটা কী বলা যায় ?
সেইসাথে শনিবার ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সাংসদ শতাব্দী রায় তাঁর নির্বাচনক্ষেত্র দুবরাজপুর পৌরসভা এলাকায় একটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রেরও উদ্বোধন করেন। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিকাঠামো নিয়ে গড়ে তোলা এই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি তৈরীতে ব্যায় হয়েছে তেত্রিশ লক্ষ টাকা। এদিন এখানকার রবীন্দ্র সদনে সাংসদ শতাব্দী রায়কে সম্মাননাও জ্ঞাপন করা হয়। আর সেখানেই তিনি দলীয় কর্মীদের তীব্র সমালোচনাও করেন। তাঁর লোকসভা নির্বাচন ক্ষেত্রের মধ্যে বিগত বিধানসভা ভোটে দুবরাজপুর আসন থেকে বিজেপি প্রার্থীর জিতে যাওয়া এবং এখান থেকে লোকসভা ভোটে তিনি বিজেপির থেকে পিছিয়ে যাওয়া নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে বলেন, জেলার মধ্যে একমাত্র দুবরাজপুর বিধানসভা আসনটি শাসক দলের দখলে নেই। গত লোকসভা ভোটেও এই এলাকা থেকে অনেকটা পিছিয়ে থেকেছি। আবার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট ও পৌরসভা ভোটে শাসক দলই জয়ী হয়েছে। কেন এমনটা হবে, সেই প্রশ্ন তুলে খোঁচা দিয়ে শতাব্দী রায় বলেন, আমি প্রতিটি ভোটে এসেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে বৈঠক করেছি। তাই পৌরসভার সমস্ত কাউন্সিলারদের কাছে আমার প্রশ্ন, যদি আপনারা জিততে পারেন তাহলে ওয়ার্ডগুলোতে আমি হারি কেন ? আর তারপরই শতাব্দী রায় চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমনাত্মক হয়ে বলেন, ভোটে যখন আপনার স্ত্রী বা ভাই দাঁড়াচ্ছেন তখন যে গুরুত্ব দিয়ে ভোট করছেন, তখন সেটা আমার বেলায় হচ্ছে না কেন ? সেটা যে হচ্ছে না, সেটা তো তথ্যই বলছে। দলীয় কাউন্সিলাররা ছাড়াও এখানে বহু সংখ্যক সাধারণ মানুষ এবং প্রচুর সংখ্যায় মহিলারা ছিলেন। সেখানেই সাংসদ শতাব্দী রায় অতীতের মতো এদিনও দাবি করেন যে, এখান থেকে যে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়, সেগুলি তাঁর ক্ষমতার মধ্যে থাকলে সাংসদ তহবিলের টাকা থেকে করে দি। তাই তিনি যখন একশো শতাংশ দিচ্ছেন তখন তিনি কেন ভোটের আশা করবেন না ? বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তিনবারের সাংসদ শতাব্দী রায় আসন্ন লোকসভা ভোটে চতুর্থবারের জন্য যখন প্রার্থী হতে যাচ্ছেন তখন তাঁর দলীয় কর্মীদের এই খোঁচা কোন সমীকরণ তৈরী করবে, সেটার ফলাফল দেখার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে ।।