কোজাগরী

Spread the love

কোজাগরী

কাকলী পাল (ভিতরকামতা, দিনহাটা)

শিশির ভেজা ঘাসের উপর আলতো পায়ে দাঁড়িয়ে তিথি,
সকাল থেকে সকলে ব্যস্ত মায়ের আগমনের প্রতীক্ষায়,
আজ যে কোজাগরী লক্ষী পূর্ণিমা!

গত বছর ঠিক এই দিনটা তার মনে পড়ছে ,
আর বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথাটা বাড়ছে।

তার গর্ভের লক্ষী যে পরিস্ফুটিত হবার আগেই রাস্তার ডাস্টবিনে পরিত্যক্তা হয়েছে।
দু’চোখ বেয়ে নামল অসময়ের শ্রাবণ ধারা…

পাশ থেকে শ্বশ্রুদেবীর তীব্র কটাক্ষ,
আদিখ্যেতা যত্তসব!
ছেলেকে ডেকে বললেন ওকে শুভ দিনে ন্যাকামি করতে মানা কর।
সেই মুহূর্তে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিলো,
ঘরের লক্ষীর অনাদরে করছো মাটির লক্ষীর সমাদর!

কী অদ্ভুত বৈপ্যরীত্য! নিষ্ঠুর সমাজ!
বনগাঁ লোকাল ট্রেনে চুড়ি, টিপ,আলতা,চুলের ক্লিপ বেচছে এক হত দরিদ্র মা,,,,,
সাথে বছর আটের একটা মেয়ে,
ভারী সারল্য মাখা মুখটা,
নামটা তার লক্ষী,, কিন্তু লক্ষী আজ পায় মা এক মুঠো অন্ন,,
কন্যার জন্ম দিয়ে লক্ষী সহ পরিত্যক্তা পথেই তার ঘর।

বাবু,, এই বাবু, দ্যাখ তোর বৌয়ের স্বভাব,
বাপের বাড়ি থেকে কিছুই শিখে আসে নি,
রান্নাটাও ঠিক করে শিখল না এখনও।
সাথে সাথেই একটা পুরুষালি হাতের থাপ্পর
পান থেকে চুন খসলেই অকথ্য নির্যাতন।
অথচ বধূবরণের সময় কত সুন্দর করে বলেছিলো…
তুমি তো আমারি মেয়ে আমার ঘরের লক্ষী।

আজ পূজোর দিনে নাতি একটা প্রতিমা কিনে এনেছে,,
মূর্তির গালে ছোট্ট হাতের পাঁচটা আঙুলের ছাপ!
জানতে চাইলে বললে পটুয়ার ছেলে করেছে ঠাম্মা,

তার মায়ের গায়েও এমনি ছাপ দেখেই সেও করেছে,
তবে এই মূর্তি আমাদের পরিবারের জন্য সঠিক,
তোমার ঘরের লক্ষীর মতো ই পারফেক্ট,,

খুশির ঝাঁপি উপুর করে মা আসছে ঘরে
আলপনা আঁকা পথে আলতা রাঙা পায়ে
মঙ্গল ঘটে আম্র পল্লব ধান দুব্বো দিয়ে করছে তারই আবাহন।

সুখ সমৃদ্ধি দুহাত ভরে বিলাবে মা নিজে
প্রার্থনা করি শুচি হোক সকল অন্তর।
শ্বেত শুভ্র পেঁচকের পিঠে ধানের শীষ আর গাছকৌটো হাতে,,,

“কে জেগে আছো”??
নির্মল চন্দ্রালোকে ঝড়ছে দেখো মায়ের মুক্তো হাসি,
ঘরের লক্ষীর অনাদরে পাবে কি আমাকে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *