কোভিডে নিহতের অঙ্গ চুরি মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
এ যেন মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘রাবণরাজ’ সিনেমার বাস্তব চিত্র? যেখানে মানব অঙ্গ চুরিতে চিকিৎসকদের একাংশ জড়িত ছিল।সিনেমায় ষড়যন্ত্রকারী সাজা পেলেও বাস্তবে ফারাক অনেকটাই।তবে আদালতের প্রতি আস্থা হারাইনি সাধারণ মানুষ। তাইতো আদালত ছুটেন বিচারপ্রার্থীরা।আর সেখানে আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টপাধ্যায় এর মত ‘মানবিক’ ব্যক্তি থাকেন। সেখানে আইনী লড়াইটা জমজমাট থাকে। গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে উঠেছিল কোভিডে নিহতের অঙ্গ চুরি মামলা।ওইদিন বিচারপতি নিহতের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। গত দেড় বছর ধরে মারণ ভাইরাস করোনা আবহে হাজার হাজার ব্যক্তি মারা গেছেন এই রোগের সংক্রমণের শিকার হয়ে। সেখানে প্রায় কানাঘুঁষা শোনা যেত, একশ্রেণির চিকিৎসকদের মদতে কোভিড দেহ থেকে গুরত্বপূর্ণ দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলি চুরি হয়ে চড়া দামে বিক্রি চলছে সারা দেশে । এ যেন মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘রাবণরাজ’ সিনেমার বাস্তবতা! তবে এবার এই অভিযোগ নিয়ে মামলা দাখিল হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।স্থানীয় থানার পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এই মামলা।এর আগের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এর এজলাসে উঠে কোভিড দেহে অঙ্গ চুরি করার মামলা। সেখানে বিচারপতি রাজশেখর মান্থার তিন সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা সহ ভিসেরা রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতে মামলাকারীর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টপাধ্যায় মানবতার লড়াইয়ে অনেকখানি সফল যোদ্ধা ।কেননা এই অসাধু এবং অমানবিক লড়াই করার প্রাথমিক জয় এটি।উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘড়িয়ার বাসিন্দা কাকলি সরকার চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল রাতে মারা যান এক বেসরকারি হাসপাতালে। মৃতার ভাই জয়দীপ দাস এই বিষয়ে বেলঘড়িয়া থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও সুবিচার পাইনি।কেননা মৃত্যুর আগে দিদি তার ভাইকে এই হাসপাতালে মৃতদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি নিয়ে তথ্য ও সূত্র জানিয়েছিলেন। রোগীর শরীরে এমন কিছু চিহ্ন মিলেছে যার থেকে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। পরিবারের তরফে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। এই মামলার আগের শুনানিতে রোগীর দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে মৃতের পরিবারের তরফ থেকে সওয়াল করেন স্বনামধন্য আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে ছিল এই মামলার শুনানি। আইনজীবী আদালতকে জানান -‘গত বছর ২২ এপ্রিল করোনা সংক্রমণ নিয়ে মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন কাকলি সরকার। ২৫ তারিখ তাঁর মৃত্যু হয়’। হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সদের গাফিলতিতেই রোগীর মৃত্যুর হয় বলে আদালতকে জানান তিনি। আইনজীবীর আরও বক্তব্য, নার্সিংহোমে ভর্তি থাকার সময় একদিন কাকলিদেবীর ভাইকে ফোন করে বলা হয়, তাঁর দিদির অবস্থা গুরুতর। সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। দেখেন, কাকলিদেবীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তিনি আইসিইউতে ঢুকলে কাকলিদেবী তাঁর ভাইকে বলেন, হাসপাতালে একটি র্যাকেট চলছে। সমস্ত মৃত রোগীদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কাকলিদেবী যখন তাঁর ভাইকে এসব কথা বলছিলেন তখন একজন নার্স এসে তাঁকে ইঞ্জেকশন দেন। অভিযোগ, এর পরেই মৃত্যু হয় রোগীর। পরিবার ময়নাতদন্তের দাবি জানায়। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণবাবু বলেন, -‘ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় মুখে গ্যাঁজলা উঠে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এমনকি রোগীর শরীরে এমনকিছু ক্ষত চিহ্ন ও সেলাইয়ের দাগ পাওয়া গেছে যা করোনায় মৃত রোগীর শরীরে থাকা সম্ভব নয়। এরপরেই সন্দেহ হয় পরিবারের। করোনায় মৃত্যু হলে কী ধরনের অস্ত্রোপচার করে সেলাই করা হয়েছে তা জানতে চায় মৃতের পরিবার’। মিডল্যান্ডের নামে অভিযোগ করে স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয় পরিবার। ঘটনাকে ঘিরে হইচই শুরু হয়। মৃত রোগীর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচার করে দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ ওঠে। আদালতে আইনজীবী জানিয়েছেন, গত বছর ২৩ ডিসেম্বর মিডল্যান্ড নার্সিংহোমের লাইসেন্স শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এর পরেও ওই নার্সিংহোমে রোগী ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য কমিশনে রিপোর্ট করলে কমিশনের তরফে হাসপাতালকে কড়া নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, আর কোনও রোগী ভর্তি নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে নির্দেশ দেয়। কাকলিদেবীর দেহ এখন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। মৃতার পরিবারের বক্তব্য, ওই দেহ আদৌ কাকলিদেবীর কিনা তা জানতে ফের ময়নাতদন্ত করা হোক। হাইকোর্টে এই মর্মে মামলাও দায়ের হয়েছে। পিটিশনে বলা হয়েছে, ৩০২ ধারায় মামলার তদন্ত হোক। বেলঘড়িয়া থানা নয় বরং সিআইডি বা অন্য কোনও তদন্ত সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক।মামলার আগের শুনানিতে বিচারপতি রাজশেখর মান্থার বেঞ্চ জানিয়েছিল, -‘দ্বিতীয়বার রোগীর দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে’। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের তিনজন অভিজ্ঞ ডাক্তারকে দিয়ে ময়নাতদন্ত করিয়ে রিপোর্ট আদালতে জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিন সপ্তাহ পরে এই মামলার শুনানিতে গত মঙ্গলবার দ কলকাতা হাইকোর্টের তরফে নিহতের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই দেহ আদৌও আসল কিনা,তা উঠে আসবে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে।