কয়লা কান্ডে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত ৪,চাঞ্চল্য বাড়ছে খনি অঞ্চলে

Spread the love

কয়লা কান্ডে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত ৪, চাঞ্চল্য  বাড়ছে খনি অঞ্চলে

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

সোমবার সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার হাতে গ্রেপ্তার হলো কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝী ওরফে লালার ঘনিষ্ঠ চারজন।ধৃতদের বাড়ি পশ্চিম বর্ধমান  – বাঁকুড়া জেলা এলাকায়। নারায়ণ নন্দ, গুরপদ মাঝী,নিরোদ মন্ডল এবং জয়দেব মন্ডল  গ্রেপ্তার হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে।উল্লেখ্য,  সম্প্রতি কলকাতার সিবিআই অফিসে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দাখিলকারি কালিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কে তিনদিন ধরে জবানবন্দি নিয়ে এই নাম গুলি পায় সিবিআই। আরও অনেকেই গ্রেপ্তার হতে চলেছে বলে সিবিআই সুত্রে প্রকাশ। সম্প্রতি  নিম্ন আদালতে খারিজ হয়েছিলো অনুপ মাঝী ওরফে লালার আগাম জামিনের আবেদন টি। বাঁকুড়ার মেজিয়া থানায় ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই কালিকাপুর এলাকায় বেআইনিভাবে কয়লা উত্তোলন ও পাচার সংক্রান্ত একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেই অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনজীবী কালিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করার পাশাপাশি পুলিশ সেই ঘটনার তদন্তে নেমে লালা ওরফে অনুপ মাজির নাম পায়। সেই মামলাতেই  চার্জশিট জমা দেয় জেলা পুলিশ। বাঁকুড়া জেলা আদালতে জমা করা হয় কেস ডায়েরিও। এরপরই  লালার আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন  তাঁর আইনজীবী। তবে বাঁকুড়া আদালতের বিচারক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় আবেদন টি খারিজ করে দেন।উল্লেখ্য, লালার বিরুদ্ধে থাকা বেআইনিভাবে কয়লা উত্তোলন সংক্রান্ত একই মামলা গত মাসেই হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যায়। কারণ নিম্ন আদালতেও যে এই সংক্রান্ত আরেকটি মামলা চলছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য উচ্চ আদালতকে জানানো হয়নি। তথ্য গোপনের কারণে আবেদনকারীর আর্জি খারিজ করে দেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। কেন পৃথক মামলার তথ্য গোপন করা হল? আদালতের এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি মামলাকারী। তারপরই অনুপ মাজির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এই মামলা খারিজ করে আদালত।তবে পুনরায় আদেশকপি গুলি নিয়ে মামলা করার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ১৯৯১ সালে বাঁকুড়ার মেজিয়ায় মাটির নিচে কয়লা খনির খোঁজ পাওয়া যায়। তারপর থেকে ইসিএলের মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন শুরু হয় এই খনি এলাকায়। অভিযোগ, এরপরই এলাকায় শুরু হয় বেআইনি কয়লা উত্তোলন। স্থানীয়রা এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেন। বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে অভিযোগও জানান। এরপরই সেখানে বসানো হয় পুলিশ ক্যাম্প। সূত্রের খবর, এরপর কয়লা চুরির ক্ষেত্রে কিছুটা লাগাম দেওয়া গিয়েছিল।তবে ২০১৫ সালে তত্‍কালীন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সেই ক্যাম্প তুলে দেন বলে আদালতে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তারপর থেকে দেদার বেআইনি কয়লা তোলা শুরু হয়। ফলে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাড়ি ঘরে ফাটল ধরতে থাকে। ২০১৭ সালে গ্রামবাসীরা হাইকোর্টে মামলা করেন। সেই মামলায় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি জেলাশাসককে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদতে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর ফের চলতি বছরের অগস্টে মামলা হয় হাইকোর্টে। এলাকায় ফের পুলিশ ক্যাম্প বসানো এবং সিবিআই তদন্ত চাওয়া হয়।সম্প্রতি  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশ বসাকের এজলাসে উঠেছিল কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝী ওরফে লালার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়ে এক মামলা। সেখানে মামলাকারী তথ্য গোপন ( একই বিষয়ে মামলা বিচারধীন)  করার জন্য বিচারপতি এই মামলাটি খারিজ করে দেন।তবে বিস্তারিত তথ্য সহ পুনরায় আবেদন করবার নির্দেশও দিয়েছেন মামলাকারী কে বিচারপতি। প্রসঙ্গত ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে চলছে এক জনস্বার্থ মামলা।সেখানে অনুপ মাঝী ওরফে লালার বিরুদ্ধে যে কয়েকজন আবেদনকারী ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন কালিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারধীন। এই তথ্য টি গোপন রাখার জন্য  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশ বসাক কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝী ওরফে লালার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলাটি খারিজ করে দেন। তবে তার পাশাপাশি বিচারধীন মামলা সংক্রান্ত তথ্য সহ আরও বিশদভাবে তথ্য জমা দিয়ে পুনরায় আবেদন করবার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। মামলাকারীর আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান – ‘ তাড়াতাড়ি ফ্রেস করে পিটিশন দাখিল করা হবে’। ওইদিন রাজ্যের তরফে কোন রিপোর্ট দেওয়া হয় নি। তবে সিবিআই জানিয়েছে – ‘পশ্চিম বর্ধমান সহ বিভিন্ন এলাকার কয়লা পাচার নিয়ে তারা তদন্ত চালাচ্ছে’। উল্লেখ্য,  সামন্তরালভাবে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডিও এই কয়লা পাচার নিয়ে স্বতন্ত্র তদন্ত চালাচ্ছে। দুর্গাপুর সহ বেশ কয়েক জায়গায় তারা অভিযান চালিয়েছে।পাশাপাশি ধরপাকরও করেছে তারা।সম্প্রতি  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে উঠেছিল কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝী ওরফে লালার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলাটি।ওইদিন বিচারপতি এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে শুনানির সময় কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী অতিরিক্ত সলিটর জেনারেল কে থাকতে বলেছিলেন। পাশাপাশি রাজ্য কে তার মতামত জানাবার জন্য দুদিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন বিচারপতি। কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝী ওরফে লালার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল হয়েছিল মামলাটি।  দাখিল পিটিশনে শুধু কয়লা মাফিয়ার বিরুদ্ধে নয়, রয়েছে রাজ্য পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ। অভিযোগ,  গত ২০১৫ সালের পর থেকে হাজার কোটি টাকার কয়লা লুট হয়েছে। ভূগর্ভস্থ কয়লা লুটে ভুক্তভোগী ঘর-বাড়ি, জমি মালিক এই মামলাটি দাখিল করেছেন গত মাসে। বাঁকুড়া জেলার মেজিয়া এলাকার ঘটনা এটি।ইতিমধ্যেই সিবিআই ইসিএলের জায়গায় কয়লা পাচারে তদন্ত চালাচ্ছে।পাশাপাশি আরেক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডিও আর্থিকগত তদন্ত চালাচ্ছে।বাঁকুড়ার এক আইসি পদমর্যাদা পূর্ণ অফিসার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তবে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝী ওরফে লালা শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন। তবে এবার বেআইনীভাবে  কয়লা তোলার ফলে  ক্ষতিগ্রস্ত কোন জমি মালিক সরাসরি লালার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে মামলা দাখিল করেছেন।সেখানে স্থানীয় থেকে রাজ্যস্তরের পুলিশ ও প্রশাসন কে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।তবে সিবিআই একবার চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই মামলাকারীকে তথ্য প্রমাণ দেওয়ার জন্য নিজাম প্যালেসের অফিসে ডেকেছিল।পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাই বাধ্য হয়ে কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার  বিরুদ্ধে তদন্তভার সিবিআই  এর হাতে তুলে দিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাঁকুড়ার মেজিয়ার বাসিন্দা  কালিদাস ব্যানার্জী। মামলাকারীর আইনজীবী বৈদুর্য্য ঘোষাল জানিয়েছেন -” মামলাকারীর বাড়ি বাঁকুড়ার  মেজিয়ার কালিকাপুর অঞ্চলে। তার বাড়ির নিচেই আছে  কয়লাস্তর। যেখান থেকে গত ১৯৯১ সাল  থেকে কয়লা মাফিয়ারা কয়লা তোলা শুরু করে।  ১৯৯৪ সালে রাজ্যসরকার সেখানে এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প বসালেও ২০১৫  সালে  পুলিশ ক্যাম্প তুলে নেওয়া হয়। এরপর অনুপ মাঝি ওরফে লালা ও তার সহযোগী কয়লা মাফিয়াদের দৌরাত্ব  বহুগুণ বেড়ে যায়। তারা ওই এলাকায়  অত্যাধিক ডিনামাইট ব্যবহার  করার জন্য মামলাকারী ও তার আশেপাশের বাড়ি গুলি ও কৃষিজমিতে সম্পূর্ণ ধস নামে ও বাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বারংবার পুলিশে জানানোর পরেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে বলে অভিযোগ ও পুলিশের উপস্থিতিতেই কিছু রাজনৈতিক নেতাদের মদতে অনুপ মাঝি ওরফে  লালা ও তার সহযোগীরা কয়লা পাচার চালাতে থাকে।  দৈনিক প্রায় কয়েকশো কোটি টাকার কয়লা চোরাচালান কারীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যায়”। মামলাকারীর আইনজীবী বৈদুর্য্য ঘোষাল  আরও  জানান  -“হাইকোর্ট ও নিম্নকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বারবার রাজ্যসরকারের সমস্ত পুলিশ  মহলের দ্বারস্থ হয়ে কোনো সুরাহা না পেয়ে অবশেষে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে কয়লা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দাখিল করেছিলেন “। কয়লা লুট আটকাতে মেজিয়ার এই পুলিশ পিকেট কেন সরালো রাজ্য পুলিশের কর্তারা, তা জানতে চেয়েছিলেন মামলাকারী। বাঁকুড়ার মেজিয়া এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানীগঞ্জ এলাকায় এই কয়লা সিন্ডিকেট নিয়ে ফের চাঞ্চল তৈরি হয়েছে পৃথক অভিযোগে সিবিআই তদন্ত চেয়ে। সম্প্রতি  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে উঠেছিল এই মামলাটি।সেখানে কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিটর জেনারেল কে থাকতে বলা হয়েছিল। পাশাপাশি রাজ্য কে তাদের অবস্থান লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছিল কয়লা মাফিয়া সংক্রান্ত মামলাটি বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে শুনানির জন্য উঠেছিল। গত শুনানিতে মামলা শুনানি কালে সব পক্ষই এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে আইনজীবী উপস্থিত থাকলেও বিচারপতি অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কে সিবিআই এর হয়ে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছিলেন। সেই মোতাবেক অতিরিক্ত সলিটর জেনারেল কে মামলার কপি দেওয়া হয়েছিল।  কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশ বসাক এর এজলাসে এই মামলার শুনানি তে মামলাকারীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন ( এই বিষয়ে মামলা বিবেচনাধীন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে) রাখার জন্য মামলা টি খারিজ করে দেন বিচারপতি। তবে বিচারধীন মামলার সমস্ত তথ্য সহ বিস্তারিত আবেদন করার জন্য মামলাকারীকে লিবার্টি দেন বিচারপতি। আগামী মাসে নুতন করে বিস্তারিত তথ্য সমেত পিটিশন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলাকারীর আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল।ঠিক।এইরকম পরিস্থিতিতে  এই অভিযোগের মামলায় বাঁকুড়া জেলা আদালতে কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝী ওরফে লালার আগাম জামিন খারিজ হয়েছে। এরপর সিবিআইয়ের তরফে অভিযোগকারী কালিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিয়ে ৩ দিন ধরে ১৬১ ধারায়  জবানবন্দি নেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।সোমবার এই সুত্র ধরেই গ্রেপ্তার হলো কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝী ওরফে লালার ঘনিষ্ঠ চারজন।  এতে চাঞ্চল পড়ে গেছে আসানসোল,  দুর্গাপুর, বাঁকুড়া এলাকায়। পুলিশের অনেক কর্তায় তটস্থ রয়েছেন সিবিআই আতঙ্কে বলে জানা গেছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *