গভীর বিশ্বাস ও অলৌকিকতা মিশে আছে মঙ্গলকোটের কৃষ্ণপুরের ভট্টাচার্য্য বাড়ির দুর্গাপুজোয়

Spread the love

গভীর বিশ্বাস ও অলৌকিকতা মিশে আছে মঙ্গলকোটের কৃষ্ণপুরের ভট্টাচার্য্য বাড়ির দুর্গাপুজোয়

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, মঙ্গলকোট, পূর্ব বর্ধমান-:

 মঙ্গলকোটের ভট্টাচার্য্য বাড়ির পুজোর সঙ্গে মিশে আছে অনেক কাহিনী। আপাত দৃষ্টিতে এগুলো অলৌকিক বলে মনে হলেও এরসাথে জড়িয়ে আছে গভীর বিশ্বাস। যারা প্রত্যাশিত ‘ফল’ পেয়েছেন তারা বিশ্বাস করেন মায়ের জন্য তাদের এই সুফল। শোনা যায়, নবমীর হোমের কলা খেয়ে অনেক বন্ধ্যা নারী সন্তানবতী হয়েছেন। আজও তাদের পরিবার বংশ পরম্পরায় ঠাকুর তলায় গোবর ছড়া দেয়, কেউ নিয়ে আসে কচুশাক, পদ্মফুল, মুকুট। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে আজও অনেকেই এখানে ছুটে আসেন।

    গ্রামের প্রবীণদের কাছে শোনা যায় যে কোনো একসময় পাশের গ্রামের জনৈক ‘শম্ভু’ সাধু গ্রীষ্মকালে মায়ের মন্দিরে ধ্যান করার জন্য আসেন। তিনি ধ্যান শুরু করার পর মায়ের মন্দিরের টিনের চালে ঢিল পড়ে। সাধু উপেক্ষা করেন। সাধুকে চমকে দিয়ে  হঠাৎ ঝড়ে মায়ের মাথার উপর চালা উড়ে যায়। গ্রীষ্মকালেও সাধুর শরীরের উপর দিয়ে বয়ে যায় শীতের হিমেল হাওয়া। আতঙ্কে  তিনি কাঁপতে থাকেন। সমস্ত ঘটনা ভট্টাচার্য্য পরিবারের সদস্যদের এসে বলেন।মা যাতে কোথায় চলে যেতে না পারেন তাই এখানে মায়ের মূর্তিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। অনেকদিন আগে এধরনের অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল। সকালে উঠে দ্যাখা যায় বেদি আছে কিন্তু মায়ের মূর্তি নাই। এরকম অজস্র কাহিনী চালু আছে এখানকার দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে। কেউ বিশ্বাস করে, কেউ করেনা।

   তারপর দেখতে দেখতে কেটে গ্যাছে ১১ পুরুষ। কিন্তু আজও পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে দুর্গাপুজো হয়ে চলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের কৃষ্ণপুরের জমিদার ভট্টাচার্য্যদের বাড়িতে। ‘মা’ এখানে ‘মহামায়া’ নামে পরিচিত। ঘরোয়া বা ‘গাদি’ পুজো হলেও সমস্ত গ্রামবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুজোয় মেতে ওঠে। শুধু ভট্টাচার্য বাড়ির নয় পাড়ার অন্যান্য বাড়ির বিবাহিতা মেয়েরা এইসময় বাপের বাড়িতে আসবেই। পুজোটা যে ওদের সবার। এইভাবেই সবার মিলিত অংশগ্রহণে প্রথম থেকেই ব্যক্তিগত পুজো হয়ে উঠেছে সর্বজনীন।

 মন্দিরের গায়ে ধরা পড়েছে মায়ের বিভিন্ন রূপ। পাশাপাশি আছে মহাদেব এবং লক্ষী-নারায়ণের মন্দির। সচরাচর এটা দ্যাখা যায়না। সবমিলিয়ে ভক্তদের কাছে এটা আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে। 

  রীতি মেনে মহাষষ্ঠীর দিন গহনা পরিয়ে মা’কে আসনে বসানো হয়। প্রচলিত রীতি মেনে পুজো হয়। দশমীর দিন গ্রামের সমস্ত এয়োতিরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করেন বলে একে ‘দাঁড়া’ সিঁদুর খেলা বলা হয়। সেইসময় ভট্টাচার্য্য বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সবার মাথায় সিঁদুর ছুঁয়ে দেন, হাতে তুলে দেন তেল ও আলতা। বিসর্জনের মধ্যেও আছে অভিনবত্ব। দোলায় চাপিয়ে মন্দিরের চারপাশে তিনপাক ঘুরিয়ে মা’কে আনা হয় কৃষ্ণপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। সেখানে না দাঁড়িয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামে। ভট্টাচার্য্যদের নিজেদের পুকুরে বিসর্জন করা হয়। এইভাবেই নানা বিশ্বাসের উপর ভর করে আজও জাঁকজমক পূর্ণভাবে হয়ে চলেছে ভট্টাচার্য্য বাড়ির পুজো। আন্তরিকতার জন্য একটা ঘরোয়া পুজো কীভাবে সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারে তার নিদর্শন হয়ে থাকবে এই পুজো।

     পরিবারের অন্যতম সদস্য সুশান্ত  ভট্টাচার্য্যের আশা আগামী দিনেও এই রীতি বজায় থাকবে। তিনি বললেন,’জগজ্জননী ‘মা’ আমাদের সবার ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *