মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু ) ,
দীর্ঘদিন পর মঙ্গলকোটের রাজনীতিতে সচল হতে দেখা গেল এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে। শুধু সচল থাকায় নয়, একাধারে শীতে জুবুথুবু এলাকাবাসীদের কে কম্বল বিতরণ। অপরদিকে গাঁজা মামলায় টানা দু বছর জেলবন্দি থাকা সেখ শফিকুল রহমান ওরফে সোনার বাড়িতে হাজির হন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। শয়ে শয়ে এলাকাবাসী ভীড় করেন এলাকার বিধায়ক কে দেখতে। এহেন জনপ্রিয়তা দেখে আপ্লূত সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন – ” এলাকাবাসী উন্নয়ন দেখতে চান, সন্ত্রাস নয়”। উল্লেখ্য চলতি সপ্তাহে পূর্ব বর্ধমান জেলার সদর শহর বর্ধমানে মঙ্গলকোটের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত অনুগামীদের জেলমুক্তি চেয়েছিলেন। পুলিশের বড় অংশের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলের অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়, তবে খোদ রাজ্যের মন্ত্রী এবার মিথ্যা গাঁজা মামলার অভিযোগ তুলেছিলেন পুুুুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে। শুধু অভিযোগ তোলা নয়, জেলার পুলিশসুপারের সাথে দেখা করে ৯ জনের তালিকা দিয়ে পুলিশের উপর চাপ বাড়িয়েছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ । যদিও মন্ত্রীর দাবি, তিনি বিষয়টি আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন।আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সংখ্যালঘুদের হেভিওয়েট নেতা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর এহেন বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে সরগরম হয় রাজ্য রাজনীতি। মঙ্গলকোটে মিথ্যা গাঁজা মামলার অভিযোগ শুধু নয়, অজয় নদের যততত্র বালিঘাট ঘিরে মাফিয়ারাজের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন রাজ্যর তিনটি দপ্তরের মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তাঁর মূল অভিযোগ দক্ষীনবঙ্গের পিঞ্চ হিটার নেতা হিসাবে পরিচিত অনুব্রত মন্ডল ওরফে কেস্ট মোড়লের বিরুদ্ধে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সিদ্দিকুল্লাহর চৌধুরীর এহেন রাজনৈতিক কৌশল শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব কে চাপে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিমের দৌরাত্ম রুখতে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর দাবি কে যথেষ্ট গুরত্ব দেওয়া না হলে সংখ্যালঘুদের বড় অংশে শাসক বিরোধী মানসিকতা ক্রমশ বাড়তে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।গত মঙ্গলবারই পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তাঁর নির্বাচনী ক্ষেত্র মঙ্গলকোটের ৯ জনের তালিকা নিয়ে মিথ্যা গাঁজা মামলার অভিযোগ টি জানিয়েছিলেন তিনি।যদিও এই সংখ্যা টি ২০ এর বেশি বলে এলাকায় জানা যায়। গত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মঙ্গলকোট সহ আউশগ্রামে মিথ্যা গাঁজা মামলার অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়। গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের বিক্ষুব্ধ গোস্টিদের কে টাইট দেওয়ার জন্য মিথ্যা গাঁজা সহ তরল মাদক মামলা গুলি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অজয় নদের বালিঘাটের কোটি কোটি টাকার বখড়া পেতে পুলিশের একাংশ এইসব ঘটিয়েছে বলে দাবি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব বর্ধমান জেলায় এসে বালিঘাট ঘিরে পুলিশের দুর্নীতি রুখতে ভিজিল্যান্স তদন্তের হুশিয়ারিও দিয়েছিলেন। তবে কোন ভিজিল্যান্স তদন্ত বালিঘাট নিয়ে হয়নি।শুধমাত্র সিআইডি পূর্ব বর্ধমান জেলার বালিঘাট নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে। তর্ক বিতর্কর মাঝেই মঙ্গলকোটের অজয় নদের বালিঘাটে ভূমি সংস্কার দপ্তরের স্লিপ (চালান) নিয়ে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। মঙ্গলকোটের কৈচর ভূমি দপ্তরের একাংশ কর্মমী দীর্ঘদিন ধরে থেকে এই সিন্ডিকেট টি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। তৃনমূলের ব্লক অফিস লাগোয়া ভূমি দপ্তরের এই অসাধু কারবারে জেরবার প্রকৃত বালিঘাট মালিকরা। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নিজ অনুগামীদের জেলমুক্তি ঘটাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা পুলিশ দপ্তরের একাংশের বিরুদ্ধে একপ্রকার বাধ্য হয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। ইতিমধ্যেই গত সপ্তাহে পূর্ব বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে বিচারধীন মঙ্গলকোটের জনপ্রিয় তৃণমূল নেতা বিকাশ চৌধুরীর মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী। দলীয় অঞ্চল সভাপতি ডালিম সেখ খুনের মামলায় অভিযুক্ত বিকাশ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে জেলে রয়েছেন। এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া একপ্রকার থমকে রয়েছে। দ্রুত বিচার পর্ব চালু করে এই হেভিওয়েট খুনের মামলার রায়দানের উপর তাকিয়ে গোটা মঙ্গলকোট। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যতগুলি গাঁজা মামলা মঙ্গলকোটে রেজিস্টার্ড হয়েছে। সেখানে সমস্ত গাঁজা মামলার উদ্ধারকৃত গাঁজার সন্ধান পাওয়া মুস্কিল বলে বিশেষ সুত্রে প্রকাশ । মঙ্গলকোটে ওসি পদে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন – ‘ মামলা গুলি উচ্চ আদালতে গেলে পুলিশেরই মুখ পুড়বে,এত গাঁজা মঙ্গলকোটে উদ্ধার করানো দেখানোটাও পুলিশের একপ্রকার ব্যর্থতা’। চলতি বছরে একুশে জুলাই পরবর্তী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় সংগঠনে পর্যবেক্ষক পদ টি তুলে দেন। তার পরিবর্তে কো অডিনেটর পদ আনেন। যে দলীয় পর্যবেক্ষক তুলে নেওয়া নিয়ে রাজ্যের গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সাথে তৃণমূলের অন্দরে চাপানউতোর। সেই দলীয় পর্যবেক্ষক ( খাতা-কলমে না থাকা) হিসাবে বীরভূম জেলা তৃনমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডল পূর্ব বর্ধমান জেলার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র সামলাছেন। সম্প্রতি তিনি মঙ্গলকোটেও বুথ কমিটির সম্মেলন করে যান অনুব্রত৷ এই বিধান সভা কেন্দ্রের কো অডিনেটার পদে আছেন ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মন্ডল। তবে তিনি অবশ্য মঙ্গলকোট নিয়ে কোন মাথা ঘামাননি অনুব্রত মন্ডলের রোশানলে পড়বার আশংকায়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে মঙ্গলকোটে রাজনৈতিক রাশ কোনভাবে না পাওয়ায় স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী মিথ্যা গাঁজা মামলা সহ অজয় নদের বালিঘাট নিয়ে সিন্ডিকেটরাজ নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন।তিনি তাঁর অনুগামী হিসাবে পরিচিত সেখ শফিকুল রহমান ওরফে সোনাদের মত ৯ জনের তালিকা নিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলার পুলিশ সুপারের সাথে বৈঠক করে মিথ্যা গাঁজা মামলার অভিযুক্তদের মুক্তি চেয়েছিলেন। এখন দেখার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মঙ্গলকোটে স্থানীয় বিধায়ক কে কতটা মান্যতা দেন পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তবে এরই মাঝে রবিবার মঙ্গলকোটে আসেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তিনি গাঁজা মামলায় জেলবন্দি শেখ শফিকুল রহমান ওরফে সোনার বাড়িতে যান। পরিবারের সদস্যদের বিধায়ক আশ্বাস দেন – মিথ্যা মামলায় ( গাঁজা) জেলবন্দি সোনা দ্রুত মুক্তি পাবে। পাশাপাশি শতাধিক এলাকাবাসীদের কম্বল তুলে দেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী।