গান শুনিয়ে, নাচও নাটক দেখিয়ে
শুভেচ্ছা পত্র দিয়ে ব্যাঙ বাঁচানোর অনুরোধ
নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া :: গান শুনিয়ে, নাচ ও নাটক দেখিয়ে,ব্যাজ পরিয়ে ও শুভেচ্ছা পত্র দিয়ে ব্যাঙ বাঁচানোর অনুরোধ পরিবেশ সুরক্ষা বাদী শিল্পীদের। ব্যাঙ বাঁচানোর আবেদন জানাতে বৃহস্পতিবার বিশ্ব ব্যাঙ দিবসে পথে নামল পরিবেশবাদী শিল্পীরা। ” শোন বন্ধু, শোন /পরম বন্ধু ব্যাঙের কথা শোন / আজ তারা বিপন্ন /আমাদেরই জন্য” বা ” ব্যাঙ তোমরা মেরো না / ব্যাঙের মর্ম বোঝ না/ ব্যাঙ আমাদের পরম বন্ধু ভুলে যেও না ” গানে গানে আবার কোথাও ” ব্যাঙের বিয়ে” নাটকে আবার কোথাও ব্যাঙ আঁকার শিবির আয়োজন করে ব্যাঙ বাঁচানোর আহ্বান জানাতে দেখা যায়।মাকুড়গ্রাম, বেলিয়াতোড়, আশুড়িয়া, পখন্না ও রাঙ্গামাটি ইত্যাদি বিস্তীর্ন এলাকার গ্রামগুলিতে এই প্রচার চালানো হয়।মাই ডিয়ার ট্রিজ এন্ড ওয়াইল্ডস উদ্যোগে ও কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক সহযোগিতায় আয়োজিত এনভায়রনমেন্টাল মিউজিক ফেস্টিভ্যালের শিল্পীদের এই প্রচার অভিনব ও নজির বিহীন। এরাজ্যে সম্ভবতঃ সারা দেশেই ব্যাঙ ব্যাঁচানোর এই উদ্যোগ প্রথম।
সংস্থার পক্ষে আবেদন জানানো হচ্ছে যে লোকালয় বেড়ে চলার ফলে খোলা জমি. জলাশয় ও সবুজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কংক্রিটের আস্তরণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে প্রকৃতি । ব্যাঙের টিকে থাকার জন্য জল ও স্থল দুটোই প্রয়োজন।এই দুটোই দ্রুত কমছে। ব্যাঙের বেঁচে থাকা ও বংশ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন জলাশয়। কিন্তু ভরাট হয়ে চলেছে জলাশয় । যেসব জলাশয় এখনও অবশিষ্ট রয়েছে সেগুলি রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে মজে গিয়ে অস্থায়ী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষায় জল থাকলেও গরমের সময় সেগুলি শুকিয়ে যায়। এতে বিঘ্নিত হয় ব্যাঙের বসবাস, খাবারের যোগান ও প্রজনন।এতে বিলুপ্ত হচ্ছে ব্যাঙ। জলজ পরিবেশ নষ্ট হওয়া, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বেড়ে চলার ফলে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ঘটিত রোগের শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে অনেক ব্যাঙ। জমিতে অতিরিক্ত কীট নাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ন্যাড়া পোড়ানো,গাছ ও লতাপাতা পুড়িয়ে ফেলা, রাস্তায় অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের ফলে দুর্ঘটনায় ব্যাঙের মৃত্যু, অবৈধভাবে ব্যাঙ শিকার ইত্যাদি কারণে ব্যাঙের সংখ্যা কমেছে। হাতে কলমে শিক্ষা দান ও গবেষনার জন্য ব্যাঙ কেটে পরীক্ষা চালানো হয়। প্রচুর ব্যাঙ এভাবে মারা যায়।এসব কিছু হচ্ছে আমাদের জন্য।
অথচ কৃষিতে ব্যাঙের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।ব্যাঙ প্রচুর পরিমাণে পোকা মাকড় খেয়ে থাকে।এসব পোকামাকড় ফসলের ক্ষতি করে।ব্যাঙ থাকলে অতি মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। এতে ফসল ও মাটির গুনাগুণ ঠিক থাকে।মাটি, জল ও বায়ু দূষিত হয় না।প্রকৃতির ভারসাম্যও ঠিক থাকে। ব্যাঙের মূত্রে ইউরিয়া জাতীয় পদার্থ থাকে, যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং ফসলের উৎপাদন বাড়ায়।অতি মাত্রায় রাসায়নিক সার না ছড়ালেও চলে।ফলে ফসল, জল ও পরিবেশে রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা যায়। ব্যাঙের প্রধান খাদ্য মশা সহ বিরক্তিকর ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ। এমনকি ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া সহ বিভিন্ন রোগের বাহক মশার লার্ভা খায় ব্যাঙাচিরাও । এটা মশা দমনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে কমছে ব্যাঙ, বাড়ছে পতঙ্গের সংখ্যা। প্রকৃতি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানবজাতি। মাই ডিয়ার ট্রিজ এন্ড ওয়াইল্ডসের সম্পাদক ঝর্না গঙ্গোপাধ্যায় ও সভাপতি সংগীতা বিশ্বাস জানান যে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া সহ সারা রাজ্যে তারা ব্যাঙ সংরক্ষনে প্রচারে নেমেছে।পরিবেশ সুরক্ষার গান, নাচ ও নাটকে ছড়িয়ে দিতে চায় তারা। পরিবেশ সুরক্ষায় শিল্পীরা আরও বেশি করে গান করুন, তুলি ধরুন, নাটক করুন, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকেরা কলম ধরুন এটা তারা চান।