চিঠি

Spread the love

চিঠি

নার্গিস পারভিন (বাজেপ্রতাপপুর, পূর্ব বর্ধমান)

প্রিয়, 
      অনেকদিন পর হাতে কলম নিলাম। কেমন আছো জানিনা। অবশ্য জানার চেষ্টাও করিনি কোনদিন। না চিঠিতে না প্রযুক্তিতে। আগে যেভাবে ব্রাত্য ছিলে বোধহয় মনের অগোচরে আজও তেমনি ব্রাত্য ই আছো। তবু কেন যেন মনে পড়ে সেদিনের সব কথা। আজ একটু বেশিই মনে পড়ছে। আর আজ চিঠি দিবস। উপলক্ষ হিসাবে বলতে পারো তোমাকেই লিখলাম। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হয়তো আমাদের সম্বোধন বদলে গেছে। কিন্তু প্রিয়তা অমলিন নয়–আজও, বলতে পারো আরো একটু বেশিরকম। হয়তো দূরত্বই এর কারণ। জানিনা কেন সেদিনের রঙিন দিনগুলো আবারো ময়ুরের মত পেখম তুলে নেচে উঠলো। রংবেরঙের কারুকার্য যেন বয়ে যাওয়া সময়ের  প্রতিটা অঙ্গে প্রত্যঙ্গে শোভিত। আচ্ছা, মনে পড়ে সেই প্রথম দিনের কথা? যেদিন তুমি একটা চিঠি লিখেছিলে কাঁচা হাতে। যার সম্বোধন ছিল আমার নামে, আর তুলনায় ছিল তখনকার সুপারস্টার এক চিত্রনায়িকা। তারপরের কথা তারপরেই জানে। তুমি লজ্জায় এক হিসেবে ক্লাস করাই বন্ধ করে দিলে। ব্যাগে মুখ গুঁজে ঘুমের ভান করে বসে থাকতে। তার জন্য শিক্ষক মহাশয় এর তিরস্কার কম জোটেনি তোমার, একবার তো ডাস্টার সোজা তোমার মাথায় পড়লো। আমাদের অংকের স্যার, রশিদ স্যার সেদিন ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তোমার ওপর। তখন আমি খুশি হয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু এখন আমি অনেকখানি অপরাধবোধে ভুগি। সেদিন জানতাম না সেই অসমান আঁকাবাঁকা ছেঁড়া কাগজের চিঠিটি হবে আমার প্রাপ্তির স্মৃতিময় একটা দলিল। তার উত্তরে আমি যা লিখেছিলাম তুমি বোধহয় আজো ভুলতে পারোনি। কেন লিখেছিলাম জানি না। তবে বান্ধবীদের হাসাহাসিতে বোধহয় সব রাগ তোমার ওপর যেয়ে পড়েছিল। কারণ তুমি ওদের হাতেই ওটা দিয়েছিলে আমার উদ্দেশ্যে। এখন মনে হয় অমন গালি না দিলেই ভালো করতাম। যাইহোক তুমি জানিয়েছিলে ওই গালি দেওয়া পত্র খানি তুমি চিরদিন খুব যত্ন করে তুলে রাখবে। হয়তো রেখেছো–রাখতেই পারো। আজও মনে পড়ে স্পষ্ট সেদিনের কথা গুলো। 

     জানিনা এখন কেমন আছো। সংসারী হয়েছো কিনা তাও সঠিক জানিনা। তবে এক পরিচিতর কাছ থেকে ইদানিং জানলাম বছর দুই আগে সবেমাত্র সংসার জীবন শুরু করেছো। শুনে খুব খুশি হয়েছি। কারণ কোন অধ্যায় অপূর্ণ রেখে জীবন সম্পূর্ণ হয় না।  কখনো কখনো ইচ্ছার বিরুদ্ধেও জীবনের প্রতিটা অধ্যায়ে নাম লেখাতে হয়। আমার ক্ষেত্রটা অবশ্য আলাদা। কারণ তোমাকে অপমান ছাড়া জীবনে আর কিছুই আমি দিতে পারিনি আমি। সবশেষে দিয়েছি স্বার্থপরতা। সে কথা অকপটে স্বীকার করতে কোন লজ্জা নেই আজ। তোমার ফেল করাটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় অপছন্দের ছিল আমার কাছে। ক্লাসে অনুত্তীর্ণ কেউ আমার কেউ হবে ভাবতেই কেমন যেন লাগতো তখন। আসলে সেই বয়সে পাশ ফেলের পার্থক্যটা বোঝার ক্ষমতা যেটুকু ছিল সেটুকু দিয়েই তোমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। কিন্তু এর পিছনের কারণ জানার মত বুদ্ধিমত্তা সেদিন ছিল না। সব শেষে ভালো আছো ধরে নিয়েই বলছি–খুব ভালো থেকো। হয়তো এটাই শেষ চিঠি হবে। কারণ প্রযুক্তির যুগে চিঠি যেন হারিয়ে যাওয়া এক হস্তশিল্প। তবু হয়তো লিখব মনের টানে। ভালো থেকো তুমি–
                  ইতি 
                       তারা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *