মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু),
মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি.বি. রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে চিনা মাঞ্জা নিয়ে রায়দান ঘটলো। সেখানে চিনা মাঞ্জা কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পাশাপাশি রাজ্য কে চিনা মাঞ্জা নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারের নির্দেশ দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে অনলাইন শুনানি চলে। সেখানে শুধু চিনা মাঞ্জা নয় ঘুড়ি উড়াবার সুতো, সিন্থটিক সুতো সহ চিনা মাঞ্জার যাবতীয় সরঞ্জাম কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে হাইকোর্টের তরফে। গত ২৫ শে মার্চ রাজ্য সরকারের চিনা মাঞ্জা নিয়ে বিধিনিষেধের বিজ্ঞপ্তি টি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য সরকার কে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি চিনা মাঞ্জার ব্যবহার বন্ধে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে উচ্চ আদালতের পক্ষে। উল্লেখ্য, এই মামলার আবেদনকারী আইনজীবী করুণময়ী ওরফে জয়ন্ত সামন্ত ২০১৭ সালে ২৭ ডিসেম্বর শিশুকন্যা কে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে কলকাতার এক উড়ালপুলে চিনা মাঞ্জায় পথ দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। এই ঘটনায় শিশুকন্যাটি গুরতর আহত হয়। এরপরেই ওই আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাটি দাখিল করেন। ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কলকাতার ‘মা’ উড়ালপুল সহ তিলজলা, প্রগতি ময়দান, তপশিয়া প্রভৃতি এলাকার উড়ালপুল গুলিতে একের পর এক পথ দুর্ঘটনা ঘটে। পাঁচের বেশি আহত হওয়ার পাশাপাশি ইকবালপুরে চিনা মাঞ্জায় একজনের প্রাণহানি ঘটে। চলতি বছরে ১৭ মে এই মৃত্যুর ঘটনাটি কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলায় সংযোজন ঘট৷ আর এতেই মামলার গতি বাড়ে। কখনো মা উড়ালপুল কখনো বা ইকবালপুর। ঘটনাস্থল যাইহোক না কেন, মোটরসাইকেল আরোহীদের হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে চিনা মাঞ্জার সুতোর জন্য । শুধু তাই নয় পাখিরাও এই মানব সভ্যতার ঘুড়ি উড়ানোর খেলায় হারাচ্ছে প্রাণ৷ ২০১৭ সালের পর থেকে চিনা মাঞ্জায় হতাহত ক্রমশ বাড়ছে। এই ঘটনা গুলি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাও হয়েছে। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে ইমেল মারফত পুনরায় এই প্রাণঘাতী চিনা মাঞ্জা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করানো হয়। এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ভিডিও কনফারেন্সে এই মামলার শুনানি চলেছিল। সেখানে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ১৯ জুনের মধ্যে রাজ্য কে চিনা মাঞ্জা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশিকা জারি করে। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছিল – চিনা মাঞ্জা নিয়ে এত কেন দুর্ঘটনা ঘটছে? এই বিষয়ে রাজ্যের তরফে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই বিধ প্রশ্ন গুলির যথাযথ উত্তর চাওয়া হয়েছিল রাজ্যের কাছ থেকে। রাজ্যের তরফে রিপোর্টে জানানো হয়েছে – গত ২৫ শে মার্চ রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের তরফে চিনা মাঞ্জার ব্যবহারে বিধিনিষেধ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ভিডিও কনফারেন্সে এই মামলায় সবপক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে ডিভিশন বেঞ্চ চিনা মাঞ্জা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি টি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য সরকার কে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি চিনা মাঞ্জা বন্ধ করতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাইকোর্টের তরফে।