ছত্রধর মাহাতোর ৬ এপ্রিল অবধি এনআইএ হেফাজত

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,

দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের আগেই এনআইএর বেড়াজালে ছত্রধর মাহাতো।মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএ এজলাসে পেশ করা হয় ছত্রধর মাহাতো কে।বিচারক সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে ধৃত ছত্রধর মাহাতো কে আগামী ৬ এপ্রিল অবধি এনআইএ হেফাজতের নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, গত রবিবার ভোরে পশ্চিম মেদনীপুরের লালগড়ে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ছত্রধর মাহাতো কে। ওইদিন ছুটির দিন থাকায় সিটি সেশন কোর্টের এনআইএ এজলাস বন্ধ ছিল।তাই ব্যাংকশাল আদালতে স্পেশাল কোর্টে পেশ করা হলে দুদিনের এনআইএ হেফাজত হয়েছিল। ওইদিন ব্যাংকশাল আদালতে ভারপ্রাপ্ত বিচারকের কাছে ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবী অভিযোগ তুলেছিলেন -‘ গ্রেপ্তারের সময় ছত্রধর মাহাতোর উপর মারধোর চলেছে’।বিচারক অবশ্য হুশিয়ারি দিয়ে এজলাসে জানিয়েছিলেন – ছত্রধর মাহাতোর শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলে তার দায় নিতে হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসার কে। অপরদিকে এনআইএ ধৃত ছত্রধর মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে গত দশ বছরের লেনদেনের বিশদ তথ্য চেয়েছে। বেআইনী লেনদেন হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।পাশাপাশি ছত্রধর মাহাতোর ব্যবহারকারী মোবাইল ফোনের কল ডিটেলস চাওয়া হয়েছে মোবাইল কোম্পানির কাছ থেকে । গত ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে ফোনের কথাবার্তার সুত্র খুঁজছে এনআইএ। এই মামলার রাজ্য পুলিশের দুজন ডিএসপি পদমর্যাদা পূর্ণ অফিসার কে বারবার তলব করেও কোন হাজিরা না মেলায় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে সক্রিয় হচ্ছে এনআইএ।সম্প্রতি  কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রীতিমতো ভৎসনার মুখে পড়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। দীর্ঘ তেরো বছর পর ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে ইউপিএ ধারা যুক্ত করার আবেদন টি দেখে হতবাক কলকাতা হাইকোর্ট। এনআইএর ছত্রধর মাহাতো কে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এই দুটি মামলা গ্রহণ  পরবর্তী দশ বছর জেল হেফাজতে থাকার পর  শাসক দল তৃণমূলে যোগদানের পর থেকে পুরাতন মামলায় অতিসক্রিয় হয়ে উঠে কেন্দ্রীয় এজেন্সি বলে অভিযোগ। ওইদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর তদন্তে অসহযোগিতা করার অভিযোগে ছত্রধর মাহাতো কে গ্রেপ্তারের আবেদন টি কে খারিজ করে দিয়েছিল। তার আগে অভিযুক্ত ছত্রধর মাহাতো রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে গেলে তা সিটি সেশন কোর্টের এনআইএ এজলাস থেকে অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে ছত্রধর মাহাতো কে। এই মামলার যাবতীয় নথি তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। গ্রেপ্তারিতে সাময়িক স্বস্তি পাওয়ায় ‘অক্সিজেন’ পেল শাসক শিবির। এই মামলার গত শুনানিতে  পিটিশনকারী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর কাছ থেকে হলফনামা চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ইতিমধ্যেই এই মামলায় তদন্তে সহযোগিতার জন্য শালবনীর কোবরা ক্যাম্পে অভিযুক্ত ছত্রধর মাহাতো দুবার জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয়েছলছিলেন। গতবছর ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টের রায়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতো।এর মধ্যে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক পদ পান ছত্রধর মাহাতো।তারপর থেকেই দুটি পুরাতন মামলায় সক্রিয় হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। গতবছরের ৩০ মার্চ  এই দুটি মামলায় সক্রিয় হয় তারা। সিটি সেশন কোর্টে এই মামলার শুনানি চলছে।তবে ছত্রধর মাহাতো কে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় এনআইএ। মূলত মামলার তদন্তে অসহযোগিতা করার অভিযোগ ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারি চেয়ে গতবছর আগস্ট মাসে তারা এই পিটিশন টি দাখিল করেছিল হাইকোর্টে। বেশ কয়েক টি শুনানির পর গত শুনানিতে প্রধান বিচারপতির এজলাসে এই মামলার শুনানিতে এনআইএর হলফনামা তলব করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএর এজলাসে   ছত্রধর  মামলা চলছে । অভিযোগ, প্রায় একযুগ আগেকার দুটি ফৌজদারি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ  পুন তদন্তের নামে অতিসক্রিয় হয়ে উঠে। ইউএপিএ ( রাস্ট্রদ্রোহিতা)  মামলায় ফের জরুরি তলব করা হয় ছত্রধর মাহাতো কে। করোনা আবহে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে  এনআইএ এর এহেন অতিসক্রিয়তা দেখা যায়। এগারো বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালে বিগত বাম জমানায় শালবনীতে জিন্দালদের কারখানার উদঘাটন পরবর্তীতে উত্তপ্ত হয় জঙ্গলমহল। ধারাবাহিক পুলিশি সন্ত্রাসে এবং তৎকালীন শাসকদলের নেতাদের অত্যাচারে গড়ে উঠে জনসাধারণের কমিটি। সিপিএমের তরফে বারবার এই কমিটি কে মাওবাদীদের প্রকাশ্য মুখ হিসাবে অভিযোগ তোলা হত। সেসময় জঙ্গলমহলে এক বাম নেতা খুনে ছত্রধর মাহাতো সহ ৩০ জনের নাম জড়ায়। এই মামলায় নিম্ন আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়। অপরদিকে সমসাময়িক ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন বাঁশতলা স্টেশনে দিল্লি ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক অপহরণে অভিযোগ উঠে জনসাধারণের কমিটির বিরুদ্ধে। এই ঘটনার মামলাতেও চার্জশিট দাখিল হয় নিম্ন আদালতে। এই দুটি মামলায় প্রথম দিকে জেলা পুলিশ তদন্তকারী হিসাবে থাকলেও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ তদন্তভার নেয়। কেননা রাস্ট্রদ্রোহিতার ( ইউএপিএ)  ধারা রুজু করা হয়। যা এই বাংলায় সর্বপ্রথম কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কার্যকর করা হয় বলে জানা যায়। যদিও ছত্রধরের আইনজীবীরা কলকাতা হাইকোর্টে বিভিন্ন শুনানিতে ইউএপিএ ধারা রুজু করার ক্ষেত্রে যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে তা বেশিরভাগ মানা হয়নি বলে দাবি রেখেছিলেন। টানা দশবছর জেল হেফাজতে থেকে গতবছর কলকাতা হাইকোর্টের রায়দানে মুক্তি পান ছত্রধর মাহাতো সহ অন্যরা। জেলমুক্তির কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ছত্রধর মাহাতোর রাজনৈতিক সক্রিয়তা দেখা যায়। এই রাজ্যের শাসক দলের রাজ্য কমিটিতে তাঁকে রাখা হয়। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – ‘কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি হয়তো ভেবেছিল  হয়  ছত্রধর রাজনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয় থাকবে নতুবা বঙ্গ গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাবে’।  কোনটিই না করে সরাসরি ছত্রধর তৃনমূলের রাজ্য কমিটিতে  আসায় ব্যাকফুটে চলে আসে জঙ্গলমহলের বিজেপি। গতবছর এপ্রিল মাসে শেষ সপ্তাহে ছত্রধর মাহাতো সহ ২২ জন কে পুনতদন্তের জন্যে দ্রুত কলকাতায় তলব করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।এই সমন পেয়েই কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবী দেবাশীষ রায়। সেখানে মূল আবেদন এই মামলা দুটি থেকে নিস্কৃতি পাবার উল্লেখ থাকলেও কলকাতার বদলে শালবনীতে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাবার আবেদন টি ছিল।সেসময় করোনা আবহে সমস্ত গণপরিবহন বিশেষত যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ বলা যায়। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের ভার্চুয়াল শুনানিতে ছত্রধরের মামলায় এনআইএ   কে শালবনীতে পুনতদন্ত  করবার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। এরপরই এই মামলা দুটি পুনরায় চলে আসে কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএর এজলাসে।সিটি সেশন কোর্টে ছত্রধর মাহাতো কে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন গ্রাহ্য না হওয়ায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়। ইতিমধ্যেই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় যাবতীয় তথ্য এনআইএ   এজলাস থেকে তলব করেছিল। সম্প্রতি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রীতিমতো ভৎসনার মুখে পড়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ । দীর্ঘ তেরো বছর পর ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে ইউপিএ ধারা যুক্ত করার আবেদন টি বোধগম্য হয়নি হাইকোর্টের। এনআইএর তদন্তে অসহযোগিতা করার অভিযোগে গ্রেপ্তারের আবেদন টি খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। এই সময়কালে রাজ্যের বাইরে যেতে গেলে ছত্রধর মাহাতো কে নিম্ন আদালত অর্থাৎ সিটি সেশন কোর্টে এনআইএ  এজলাস থেকে অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে বলে জানিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এরেই মধ্যে গত রবিবার ভোরে লালগড়ে ছত্রধর মাহাতো কে তার বাড়ি থেকে পাকরাও করে থাকে এনআইএ । গত রবিবার ছুটির দিন থাকায় সিটি সেশন কোর্টের এনআইএ এজলাস বন্ধ ছিল, তাই ব্যাংকশাল আদালতে স্পেশাল কোর্টে পেশ করা হলে দুদিনের এনআইএ হেফাজত হয়েছিল।   মঙ্গলবার দুপুরে সিটি সেশন কোর্টে এনআইএ   এজলাসে পেশ করা হলে বিচারক সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে ধৃত ছত্রধর মাহাতো কে আগামী ৬ এপ্রিল অবধি এনআইএ হেফাজতের নির্দেশ দেন।                                                                                                                                                                                                         

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *