জেলাজুড়ে তাপমাত্রা বাড়ছে: জনজীবন চরম ব্যাহত, বিশেষ সতর্কতা জারি
সেখ রিয়াজুদ্দিন বীরভূম:- দীর্ঘদিন যাবৎ বৃষ্টি নেই। জলের অভাবে মাঠঘাট থেকে শুরু করে পুকুর নদী খালবিল সব শুকিয়ে কাঠ।যেহারে তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে বেলা দশটার পর থেকে বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারছে না। ভরদুপুরে গরম বাতাস বা লু বইছে।রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে।পরিবেশবিদরা মনে করছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং পশ্চিমি ঝঞ্জাটের প্রভাবেই গরমের ভয়াবহতা। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম থেকেই যে হারে তাপমাত্রা বেড়েছে ,তাতে এই তীব্র গরমে জেলাবাসীর হাঁসফাঁস অবস্থা ।শ্রীনিকেতন আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে যে, জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কমছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। ফলে জেলাজুড়ে গরম বাতাস বইছে। ইতিমধ্যে জারি করা হয়েছে তাপপ্রবাহ জনিত সর্তকবার্তা । এই গরমের সময় দিনের বেলায় দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে।গরমে জেলাবাসীকে শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রচন্ড দাবদাহের জন্য বিশেষ জরুরী কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।প্রখর রোদকে আটকাতে মাথায় টুপি, ছাতা ও চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে বেলা বাড়তেই রোদের তাপে জনশূন্য হয়ে পড়ছে রাস্তাঘাট হাটবাজার ও খেতখামার। পথচলতি অধিকাংশই মানুষজনরা ভিড় জমাচ্ছে — শরবত,লস্যি বা শীতল পানীয় জলের দোকানে।প্রখর রোদের তাপে মাঠে ঘাস শুকিয়ে যাওয়ায় পশু খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।পুকুরে জল কমতে থাকায় মাছ চাষেও চরম ব্যাহত হচ্ছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ গ্রামে কূয়ো বা নলকূপে জল উঠেছে না।যারফলে পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে অসেচ এলাকায় চাষীদের অবস্থা খুবই সঙ্গীন।খেতখামারে যেটুকু ফসল লাগিয়েছে তা জলের অভাবে ঠাঁই মরছে।শাক সবজির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। তাতে সাধারণ মানুষদের কেনাকাটা করতে দারুন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রচন্ড দাবদাহে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য জেলায় বেশ কয়েক জায়গায় আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে।বেশ কয়েকটি বাড়িও আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে।ক্ষতি হয়েছে কয়েক গুণ।এছাড়া সিউড়ি এক নম্বর ব্লকের অন্তর্গত বড়চাতুরী ব্লক হাসপাতালে,চরিচা জঙ্গলে, রাজনগর জঙ্গলে, খয়রাসোল বারাবন জঙ্গলে, হরিপুরডাঙায় মুরগির পোল্ট্রিতে সহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কে বা কারা কিভাবে জঙ্গল এলাকায় আগুন লাগিয়ে পালাচ্ছে, এবিষয়ে কিছু জানা যায়নি। এই গরমের সময়ে জন সাধারণকে আগুন হতে সাবধান থাকার জন্য জেলা বন দফতর সর্তক করেছে।কোথাও আগুন লাগার খবর পেলেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিতে জানাতেও বলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা প্রবীন সাংবাদিক সনাতন সৌ কথা প্রসঙ্গে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সরকারের এতকিছু পরিকল্পনা ব্যবস্থা থাকার সত্বেও কাজের কাজ কিছুই করছে না। খরা পরিস্থিতির জন্যই জলের অভাবে গাছপালা ঠাঁই মরছে। সরকারি উদ্যোগে বছর দুয়েক আগে এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য গ্রামের পর গ্রামে পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। ময়ূরাক্ষী নদীর তীরবর্তী খটঙ্গা গ্রামে বহু টাকা খরচ করে জলের ট্যাঙ্ক বানানো হয়েছে। অথচ রহস্যজনক কারণে সেগুলো আজও চালু হলো না। পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল পাওয়া থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী। গ্রামের পাশ দিয়েই ময়ূরাক্ষী নদীর জল দূরবর্তী এলাকায় সেচের জন্য দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমার গ্রাম এলাকায় সেচের জন্য একফোঁটা জল দেওয়া হচ্ছে না। গ্রামে পাইপ লাইন বসানোর সত্বেও পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে না। জলস্তর নেমে যাওয়ায় গ্রামে পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। অতি সত্বর এর প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।নচেৎ আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে এলাকাবাসী বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।