টেঁকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞান শাখার মহাজোট
বর্তমানে সারাবিশ্বে গবেষণামূলক কাজে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিদ্যা হাত ধরাধরি করে এগোচ্ছে মানব উন্নয়নকে সুস্থিত করতে। মানুষ যেহেতু সমস্ত রকম উন্নয়নের কেন্দ্র বিন্দু, তাই উন্নয়নকে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে উন্নয়ন হওয়া চাই দীর্ঘস্থায়ী অর্থাৎ টেঁকসই, বললেন জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ভূতপূর্ব বিজ্ঞানী অশোক কান্তি সান্যাল। বিভিন্ন বিজ্ঞান শাখাকে গবেষণায় জুড়লে এর ফলাফল হয় দীর্ঘ প্রসারী ও ব্যাপ্ত। যেমন, রসুন থেকে তৈরি করা সিলভার নাইট্রেট ন্যানোপার্টিকল্ এর সঙ্গে মেটফর্মিন জুড়ে দিলে একাধারে তা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ক্যানসার এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিক এ পরিণত হয়, বললেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন ও বিজ্ঞানী চিত্তরঞ্জন সিনহা। আবার ল্যাক্টাম রিং যুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে মাইক্রো-ওয়েভ ব্যবহার করে নাইট্রাইটের মতো পদার্থ যোগ করে অ্যান্টি-ক্যানসার ড্রাগ তৈরি করা গেছে, বললেন সৌদি আরবের মহম্মদ বিন ফাহদ এটা সম্ভব হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের গবেষকদের যৌথ গবেষণার ফলে। এই সমস্ত উঠে এল, মঙ্গলবার মৃনালিনী দত্ত মহাবিদ্যাপীঠ এ আয়োজিত ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচেস টুওয়ার্ড সাস্টেনাবিলিটিঃ ইন্টিগ্রেটিং ফিজিক্যাল, বায়োলজিকাল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে। এটি আয়োজন করে কলেজের সায়েন্স ফোরাম। সহযোগিতা করে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিষ্ট্রি, ইন্ডিয়ান ফটোবায়োলজিক্যাল সোসাইটি, পিপলস অ্যাসোসিয়েশন ফর সায়েন্স এন্ড এনভায়রনমেন্ট (পেস)। আলোচনা সভার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক অরিন্দম মুখার্জী। এদিন প্লাস্টিকের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করে কীভাবে সুস্থিত উন্নয়ন সম্ভব তা তুলে ধরেন, কলকাতা বিশ্ববদ্যালয়ের অধ্যাপক পুনর্বসু চৌধুরী। বোস ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন বিজ্ঞানী অরুন লাহিড়ি মজুমদার দেখান মানব সভ্যতার উন্নয়নের সঙ্গে কেমন জৈব- প্রযুক্তির প্রগতি বর্তমানে হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলেছে। সভার শেষে নির্যাসমূলক বক্তব্যে প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, সভ্যতার সঙ্কট ভবিষ্যত অতিমারি রুখতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার গবেষকদের এগিয়ে আসতে হবে। রোগের এপিডেমিওলজি বিশ্লেষণ জনিত কারণে ম্যাথামেটিক্যাল মডেলিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সকে ব্যবহার করলে করোনার মত সংক্রামক রোগের (অতিমারির) যেমন আগাম সংকেত পাওয়া যেতে পারে, তেমনি কোনও অজানা জীবাণু বা ভাইরাসের বায়ো-ফিজিক্যাল গঠন ও কেমিক্যাল চরিত্রায়ণ করে টিকা বানাতে অথবা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে ঠেকাতে আমাদের ‘ওয়ান হেল্থ কনসেপ্ট’ কে মাথায় রাখতে হবে এবং বিভিন্ন শাখার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে হবে। সেমিনারে অংশ নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপনা করেন কলকাতার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও গবেষকরা। বিচারক হিসাবে ছিলেন অধ্যাপক প্রদীপ দাস, অধ্যাপক লোপামুদ্রা হালদার, ড. শোভন রায় প্রমুখ। উদ্যোক্তাদের পক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ড. দেবাশিস মল্লিক। উপস্থিত ছিলেন পেসের সচিব সন্দীপ সেন, সহ-সচিব সুকুমার বেরা, কলেজের অধ্যক্ষ সুমিত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।